নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ নভেম্বর, ২০১৯

শাহজালালে দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়াচ্ছে পাখি

ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোনো উড়োজাহাজ ওঠানামায় বিপদের শঙ্কা বাড়াচ্ছে পাখি। প্রায় প্রতিদিনই পাখির সঙ্গে বিমানের আঘাত লাগার শঙ্কা নিয়েই ২৫০ ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। এ বন্দর ব্যবহার করছেন প্রায় ২০ হাজার যাত্রী। তাদের জীবনহানিরও কারণ হতে পারে এই পাখি। এরই মধ্যে শতাধিক ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করেছে। তবে পাইলটদের দক্ষতায় এখন পর্যন্ত পাখির কারণে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও শঙ্কা রয়েছে বড় দুর্ঘটনার। সম্প্রতি শাহজালাল থেকে উড্ডয়নের পর পাখির আঘাতে জরুরি অবতরণ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ ‘ময়ূরপঙ্খী’। ফ্লাইট নম্বর বিজি ০৮৪ সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দেয় কিন্তু পাখির আঘাতে তা ৯টা ২০ মিনিটে জরুরি অবতরণ করে। পরে সব যাত্রীকে সাড়ে ১০টার একটি বিশেষ উড়োজাহাজে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে উড্ডয়নরত উড়োজাহাজে পাখির আঘাতের বেশ কয়েকটি ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। এমন ঘটনার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও ২০১১ সালে শুধু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসই ১০টি বার্ড স্ট্রাইকের শিকার হয়। ২০১২ সালে ছয়টি, ২০১৪ সালে ১৫টি ফ্লাইট এমন ঘটনায় জরুরি অবতরণ করে।

অভিযোগ উঠেছে, বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও বার্ড স্ট্রাইকের এমন ঘটনা ‘পাত্তা দিচ্ছে না’ সিভিল এভিয়েশন বা বিমান মন্ত্রণালয়ের মতো কর্তাপ্রতিষ্ঠান। একদিকে পাখি তাড়াতে জোড়াতালি পদ্ধতির ব্যবহার করছে তারা, অন্যদিকে তাদের কারণেই বারবার ঘুরেফিরে শাহজালালের আশপাশে অবস্থান নিচ্ছে পাখি। সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই বছর আগে ‘পাখি তাড়ানোর কমিটি’ করেও সমস্যার বিন্দুমাত্র সমাধান মেলেনি। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) বলছে, ১৯৬৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর মোট ১৯০টি দেশে প্রায় ৮৩ হাজার বার্ড স্ট্রাইকের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষের কারণে নড়েচড়ে বসে বিশ্বের সিভিল এভিয়েশনগুলোর অভিভাবক সংগঠনটি। বার্ড স্ট্রাইক রোধে গাইডলাইন তৈরি করে দেয় তারা। তবে সেটির তোয়াক্কা না করে ‘জোড়াতালি পদ্ধতিতে’ পাখি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (বেবিচক)।

জানা গেছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে নিকুঞ্জ লেক। এ লেকের কারণেই বিমানবন্দরে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি এবং বড় মাপের রয়েল ঈগল। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে লেকটিতে মাছ চাষের ইজারা দেয় সিভিল এভিয়েশন। সেই মাছ খেতে সেখানে আসে ঈগলের মতো বড় পাখি।

জানা যায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে বাউনিয়া, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর ও টঙ্গী এলাকায় অসংখ্য জলাশয়, ডোবা-নালা ও ময়লার স্তূপ দেখা গেছে। মাছ ছাড়াও এসব জলাশয়ের কীটপতঙ্গ, জলজ উদ্ভিদ পাখিদের প্রিয় খাবার। এসব স্থানে কাকসহ নানা ধরনের পাখির বিচরণ। রানওয়ের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের ধলিপাড়া, বাউনিয়া, আহলিয়া, বেড়িবাঁধ রোড, বটতলা রোডে অসংখ্য ডোবা, ঘাস ও ঝোপঝাড় লক্ষ্য করা গেছে। অথচ বিমানবন্দরের ভেতরেই রয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। পাখি তাড়াতে এখন পর্যন্ত তাদের কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেখেনি শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

এদিকে পাখি নিয়ন্ত্রণে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন ওয়াইল্ড লাইফ/বার্ড হ্যাজার্ট কন্ট্রোল কমিটি তৈরি করেছিল ক্যাব (সার্কুলার-সিএসি-১৪-০৭)। এ কমিটির চেয়ারম্যান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক। এছাড়া কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের যুগ্ম সচিব, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ডিরেক্টর (অপারেশন), বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের ডিরেক্টর (অপারেশন), পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি, বিমানের এমডি, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার অপারেটর কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। কমিটির সদস্য সচিব বেসামরিক বিমান পরিবহনের চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান।

তবে কমিটির কেউ জানেন না তারা এ কমিটিতে আছেন! দুই বছরে একদিনও বসেননি কমিটির সদস্যরা। ঠিক করেননি কোনো কর্মপন্থা।

কমিটির কার্যক্রমের বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং কমিটির চেয়ারম্যান মো. মহিবুল হক বলেন, এমন কমিটি আছে কি-না, কাগজপত্র না দেখে বলতে পারব না।

কমিটির বিষয়ে অন্য সদস্য বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।

কমিটির সদস্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মোকাব্বির হোসেনও জানেন না এমন একটি কমিটি রয়েছে এবং তিনি কমিটির সদস্য। কমিটির কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানি না। আমার নলেজে নেই। জানতে হবে।

বিমানবন্দরের পাখির সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, পাখি নিয়ন্ত্রণে প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য অধিদফতর কাজ করছে। আমরা সম্প্রতি শাহজালালে বিমানের একটি অফিস রুম ওই দুই বিভাগের কর্মকর্তাদের জন্য ছেড়ে দিয়েছি। তারা পাখি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close