নওগাঁ প্রতিনিধি

  ২৪ অক্টোবর, ২০১৯

১১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ী দম্পতি উধাও

সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখা থেকে ১১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আগরওয়ালা দম্পতি ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। এ ঘটনায় ব্যাংকটির নওগাঁ শাখার প্রধান মো. কামারুজ্জামান নওগাঁ সদর থানায় ওই দম্পতির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছেন।

অভিযুক্তরা হলেন নওগাঁ শহরের লিটন ব্রিজ মোড়ের বাসিন্দা ও বগুড়ার জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপাল আগরওয়ালা (৫৬) এবং তার স্ত্রী মেসার্স শুভ ফিড প্রসেসিংয়ের স্বত্বাধিকারী দীপা আগরওয়ালা (৪৮)। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপাল আগরওয়ালা এবং মেসার্স শুভ ফিড প্রসেসিংয়ের স্বত্বাধিকারী দীপা আগরওয়ালা ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের ঋণ গ্রহণ করেন। গোপাল আগরওয়ালাকে ৮৪ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং তার স্ত্রী দীপা আগরওয়ালাকে ৩০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজারসহ ১১৪ কোটি ৯৪ লাখ ২ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পরে ঋণের টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়িক দিক বিবেচনা করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকে এবং গৃহীত ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য সময় দেওয়া হয়। এরপরই তারা ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে আত্মগোপনে চলে যান। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, ওই দম্পতি টাকা পরিশোধ না করে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা জগন্নাথনগর এলাকার বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর পাশে অবস্থিত। গত ১৫ অক্টোবর ইন্ডাস্ট্রিতে সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড নওগাঁ শাখার পক্ষ থেকে সম্পত্তির তফসিল উল্লেখ করে নোটিস ঝোলানো হয়েছে। তফসিলে উল্লেখ করা হয়েছে, মোট ৪৩৪ শতক জমি (১৩ দশমিক ১৫১ বিঘা)। মূল গেটটি তালাবদ্ধ রেখে পাশের একটি ছোট পকেট গেট দিয়ে আসা-যাওয়া করা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে চারজনসহ মোট ১৪ জন সিকিউরিটি রাখা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মচারীকে দেখভালের জন্য রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে ৪৫ জন কর্মচারীর দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। কর্মচারীরা জানান, তিন মাস থেকে ইন্ডাস্ট্রির সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর আগে থেকেই কর্মচারীদের পর্যায়ক্রমে ছাঁটাই করা হয়। জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভেতরে পূর্বদিকে প্রায় এক বিঘা জায়গার ওপর রয়েছে মেসার্স শুভ ফিড প্রসেসিং, যা একটি ‘গুদামঘর’। গুদামঘরটি সম্পূর্ণ ফাঁকা। বাস্তবে মেসার্স শুভ ফিড প্রসেসিংয়ের কোনো কার্যক্রম নেই।

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ওই এলাকার জমির বর্তমান মূল্য প্রায় ৩ লাখ টাকা শতাংশ। সে হিসেবে ১৩ দশমিক ১৫১ বিঘা জমির দাম প্রায় ১৩ কোটি ২ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্থাপনাসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট দাম প্রায় ৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা। গত কয়েক মাস থেকে ইন্ডাস্ট্রিজটি পড়ে থাকায় মরিচা ধরাসহ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে জমিসহ ওই ইন্ডাস্ট্রিজটি বিক্রি করা হলে ২৫-৩০ কোটি টাকা মূল্য হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীদের অভিযোগ, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ খেয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় দেড় গুণ বেশি ঋণ দিয়েছে। জেএন ইন্ডাস্ট্রিজের এক কর্মচারী বলেন, এর জন্য সম্পূর্ণ ব্যাংক দায়ী। দুই মাস থেকে আমরা বেতন পাচ্ছি না। পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি। আরো ৪৫ জন কর্মচারী বেতন না পেয়ে বাড়ি চলে গেছেন। শুভ ফিডের নামে যে (৩০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার) টাকা দেওয়া হয়েছে, তা যুক্তিহীন। কারণ এটি শুধু নামেই আছে, বাস্তবে এর কোনো কার্যক্রম নেই।

বিমান নামে এক কর্মচারী বলেন, গত ১২ বছর থেকে তিনি এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিন মাস ধরে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এরপর মালিক এখানে আর আসেন না। পরে জানলাম মালিক দেশের বাইরে চলে গেছেন। এ ব্যাপারে ওই দম্পতির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড নওগাঁর শাখা প্রধান কামারুজ্জামান এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে বা মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ব্যাংকের প্রধান শাখায় মিডিয়া সেল বিভাগে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।

সেখানে যোগাযোগ করা হলে সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড ঢাকা প্রধান শাখার মিডিয়া সেল বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শাখা (নওগাঁ শাখা) বলতে পারবে। সেখান থেকেই তারা তথ্য সরবরাহ করেন। তিনিও এর বাইরে কোনো কথা বলতে বা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি মো. সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close