এস এম শাফায়েত, চুয়াডাঙ্গা

  ২৩ অক্টোবর, ২০১৯

চুয়াডাঙ্গায় শীতের বার্তা

আড়াই লাখ খেজুর গাছে রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

ভোররাত থেকে চুয়াডাঙ্গায় অনুভূত হচ্ছে হালকা শীতের আমেজ, আর তার রেশ থাকে সকাল পর্যন্ত। সেই সঙ্গে ভোরের দিকে হালকা কুয়াশা আর মিষ্টি রোদে সবুজ ঘাসে শিশির বিন্দু জানিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। বিকালবেলা এখন স্বল্পায়ু। ৪টার পর থেকেই ছায়া ঘনিয়ে আসে প্রান্তরে। ৫টায় সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। দিন ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। খেজুর রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা। বাণিজ্যিকভাবে এই জেলায় শীতে প্রায় আড়াই লাখ গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়। শীতের আগের ঋতু হেমন্ত শুরু হয়েছে। কার্তিকের প্রথম সপ্তাহ শেষ হয়ে আসছে। সাধারণত এ সময়টায় বৃষ্টি থাকে না। তবে কার্তিকের শুরুতেই ভোরে কুয়াশা, হালকা শীত এবং রাতে ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। পঞ্জিকার হিসাবে এবার ১৬ অক্টোবর শুরু হয়েছে কার্তিক মাস। পৌষের হাড়কাঁপানো শীতের আগমন বার্তা ঘোষণা করে দিয়েছে হেমন্ত।

সন্ধ্যায় হিমেল হাওয়ার সঙ্গে কমছে রাতের তাপমাত্রা। যেটা থাকছে সকালের সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত। সকালবেলা ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে চুয়াডাঙ্গার প্রকৃতি।

বাংলার প্রতিটি ঋতুরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। শীতের কর্মব্যস্ত দিন শেষে যখন রাত নামে, রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়, তখনই খুঁজে পাওয়া যায় শীতের আসল রূপ। খেজুর রস বা খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি পায়েস, পিঠা ছাড়া যেন বাংলায় শীতই জমে না। হেমন্তে নবান্নে নতুন ধানের চালের গুঁড়া তার সঙ্গে যুক্ত করে আনন্দের আরেক মাত্রা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় বাণিজ্যিকভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশে খেজুর গুড়ের উৎপাদন হয়ে থাকে। বলাবাহুল্য একমাত্র এ জেলাতেই বসে খেজুর গুড়ের হাট। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এ বছর জেলার চার উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ২ লাখ ৪৭ হাজার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এরই মধ্যে বিস্তর মজুর যুক্ত হয়েছেন খেজুর গাছ কাটা, রস সংগ্রহ, তা জ্বাল দেওয়া ও গুড় তৈরির কাজে। কার্তিক মাসের শুরু থেকে চৈত্রের শেষ পর্যন্ত এরা খেজুর গাছকাটায় নিয়োজিত থাকেন। যেসব চাষির স্বল্পসংখ্যক খেজুর গাছ আছে তারা নিজেরাই তা কাটেন, রস পাড়েন এবং বাড়িতে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করেন। শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রস উৎপাদনের কাজও বাড়তে থাকে পাল্লা দিয়ে।

গ্রামীণ জনপদে শীত এলেই চায়ের দোকান ও হাট-বাজারগুলোতে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। তবে চুয়াডাঙ্গার হাতিকাটা মোড়ের চায়ের হাটে গিয়ে দেখা গেল ভিন্নচিত্র। কুয়াশা জড়ানো সকালে চায়ের দোকানে ভিড় থাকার কথা থাকলেও মূলত পড়ন্ত বিকাল থেকে সেখানে ভিড় জমতে শুরু করে।

এ প্রসঙ্গে চায়ের হাটের স্বত্বাধিকারী গাফফার মিয়া বলেন, অন্যান্য জেলার তুলনায় চুয়াডাঙ্গায় শীত কিংবা গরম, সব মৌসুমে দিনে রোদের তাপ থাকে মাত্রাতিরিক্ত। বিকাল হলে কিছুটা কমে রোদের তেজ। সন্ধ্যা হতেই বইতে শুরু করে ঠান্ডা হাওয়া। দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় আমাদের দোকান খোলা থাকে। তবে সন্ধ্যার পর ভিড় বাড়তে শুরু করে, চলে একটানা রাত ১ থেকে ২টা পর্যন্ত।’

এদিকে লেপ-তোষকসহ গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে এখনো তেমন ব্যস্ততা শুরু হয়নি। তবে এ সপ্তাহের মধ্যে কারিগরদের তোড়জোড় শুরু হবে জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা কোর্ট মোড়ের হুসাইন শীতবস্ত্র বিতানের স্বত্বাধিকারী একরামুল হক বলেন, এবার একটি লেপ বানাতে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং তোষক ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে খরচ নেওয়া হচ্ছে। সারা দিনে ১৫ থেকে ২০টি লেপ সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া আগাম ঠান্ডা পড়ার সম্ভাবনা থাকায় স্টকে রেডিমেট লেপ-তোষক রাখা আছে। অর্ডার ছাড়াই যেকোনো সময় তা সরবরাহ করা যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close