নিজস্ব প্রতিবেদক, শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৩ অক্টোবর, ২০১৯

দ্রুত দাঁড়িয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু

* বসল ১৫তম স্প্যান প্রস্তুত ৩২ খুঁটি * আড়াই কিলোমিটার দৃশ্যমান

এসেছে হেমন্ত। কড়া নাড়ছে শীত। কিন্তু পদ্মায় পানির দাপট কমছে না। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর আরো দুবার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে আসে। এসব কারণে এবার পদ্মা সেতুর চ্যানেলে ব্যাপক পলি জমা হয়েছে। একদিক দিয়ে ড্রেজিং করে এই পলি অপসারণ করা হচ্ছে। আরেক দিক দিয়ে নতুন করে পলি জমা হচ্ছে। এই পলির কারণে চ্যানেলে স্প্যানবহনকারী জাহাজ প্রবেশ করতে পারছে না। তাই ছয়টি স্প্যান স্থাপনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত সত্ত্বে তা স্থাপন করা যাচ্ছে না। স্প্যান চূড়ান্ত করা ছড়াও খুঁটিগুলোও পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। শুধু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নাব্য সংকট। তাই এখন চলছে ড্রেজিং। তবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ থেমে নেই। মূল সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে এরই মধ্যে ৩২টিই হয়ে গেছে। বসেছে ১৫তম স্প্যানও। আর এইস্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে সেতুর প্রায় আড়াই কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান হলো।

চার মাস পর গতকাল মঙ্গলবার পদ্মা সেতুর ১৫তম স্প্যান বসানো হয়েছে। দুপুর পৌনে ১২টায় জাজিরা প্রান্তে ২৩ ও ২৪ নম্বর খুঁটির ওপর স্প্যানটি বসানো হয়। এর আগে প্রথমে ১৬ অক্টোবর স্প্যান বসানোর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত ছিল। এজন্য স্প্যান খুঁটির অদূরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু পলি ও বালির কারণে ক্রেন যেতে বাধার মুখে পড়ে। সব শেষ নদীর মাওয়া প্রান্তে গত ২৯ জুন ১৪তম স্প্যান বসানো হয়। এরপর পদ্মায় তীব্র স্রোত ও নাব্য সংকটের কারণে কোনো স্প্যান বসানো সম্ভব হয়নি।

দ্বিতল পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদী শাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্যদিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিয়ারে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত বছরের ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিয়ারের ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান। ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিয়ারের ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়। ২৯ জুন সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়। এ বছরের জানুয়ারি মাসে জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের ষষ্ঠ শেষ স্প্যান বসে। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হয়। আর গত বছরের শেষ দিকে মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর পিয়ারের ওপর একমাত্র স্প্যানটি বসানো হয়। এটি ছিল সপ্তম স্প্যান। চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৫ নম্বর পিয়ারের ওপর অষ্টম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারের ওপর গত ২২ মার্চ বসে নবম স্প্যানটি। ১০ এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর পিয়ারের ওপর দশম স্প্যান, ২৩ এপ্রিল শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিয়ারের ওপর ১১তম স্প্যান বসে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝামাঝি স্থানে ২০ ও ২১ নম্বর পিয়ারের ওপর ১২তম স্প্যান বসানো হয়েছিল। ১৩তম স্প্যানটি বসানো হয় গত ২৫ মে।

১৭ অক্টোবর পদ্মা সেতু প্রকল্প কাজ পরিদর্শনের পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, ২০২১ সালের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে। পদ্মা সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৪ শতাংশ। সেতুর আর্থিক অগ্রগতি ৭৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৪ শতাংশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close