প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ অক্টোবর, ২০১৯

পোকার আক্রমণে আমনে উৎপাদন বিপর্যয়ের শঙ্কা

পরামর্শ মানলে ক্ষতি হবে না : কৃষি বিভাগ

ইঁদুর ও পোকার আক্রমণসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন জেলার আমনের খেত। নষ্ট হচ্ছে পাতা ও শেকড়, মরে যাচ্ছে ধানগাছ। বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করেও পোকা দমন করা যায়নি। এখন আমনের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, পোকার আক্রমণ সাময়িক। তাদের দাবি, পরামর্শ মেনে চললে ক্ষতি হবে না চাষিদের।

নওগাঁ : ১১ উপজেলায় ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে সব উপজেলায় আমনের খেতে ধানের পাতা মরা, কান্ড ও শেকড় পচে যাওয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধানগাছ। তার ওপর দেখা দিয়েছে মাজরা, বাদামি ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ। কৃষি বিভাগ বলছে, পুষ্টিহীনতার কারণে ধানখেতে পোকার আক্রমণ হচ্ছে।

নরসিংদী : পলাশ উপজেলায় এ মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনের আশা ছিল চাষিদের। কিন্তু খেতে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণে উদ্বিগ্ন কৃষক। এক মাসে উপজেলার চলনা, মালিতা, সুলতানপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে ধানখেতে বাড়ছে এই পোকার আক্রমণ।

কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক প্রয়োগ ও যতœ নিলে দমন করা যাবে এই পোকা। পলাশ উপজেলায় এই মৌসুমে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমি।

লালমনিরহাট : চলতি রোপা আমন মৌসুমে লালমনিরহাটসহ রংপুর অঞ্চলে গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি জমিতে আমনের চাষাবাদ হয়েছে। তবে আমনখেতে পোকার আক্রমণ ও রোগবালাইয়ের কারণে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা ও রোগবালাই দমনের চেষ্টা ও কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না আমনচাষিরা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি আমন মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে মোট ৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৭৭ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষাবাদ হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে। এরমধ্যে লালমনিরহাট জেলায় ৮২ হাজার ২ ৫৯ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিদু ভূষধ রায় জানান, কৃষি বিভাগের উদ্যোগে আলোক ফাঁদ অভিযান চলছে। কয়েক দিনের ভারী বর্ষণের কারণে পোকার আক্রমণ কমে গেছে। তারপরও যদি খেতে পোকার আক্রমণ দেখা যায় সেসব খেতে আল্টিমা প্লাস ও সেতারা নামক কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি।

পটুয়াখালী : সবুজ পাতার ওপরের অংশ খেয়ে ধীরে ধীরে নিচে নামছে পোকাগুলো। সেখানেই ডিম ছাড়ছে। ফলে হলদে বা সাদা হয়ে মরে যাচ্ছে পাতা। এক সপ্তাহ ধরে এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষক বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করেন। কিন্তু থামানো যায়নি পোকার আক্রমণ। কৃষক আমনের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার মোট সাড়ে পাঁচ লাখ হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে এবার আমন ধানের চাষ হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার হেক্টরে।

জেলায় আমনখেতে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণের ঘটনা এই প্রথম হওয়ায় স্থানীয় কৃষি বিভাগও পড়েছে বিপাকে। এ রকম ঘটনা এর আগে মোকাবিলা না করায় এখন তারা বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত আমনখেত পরিদর্শন করে যাচাই-বাছাই করছেন বলে জানান পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক অশোক কুমার শর্মা।

ঝিনাইদহ : কালীগঞ্জের মাঠের পর মাঠের ধানের খেত ইঁদুরে কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। আক্রমণ ঠেকাতে কৃষক আপ্রাণ চেষ্টা করেও ফল পাচ্ছেন না। ফলে ধারদেনা করে আমন চাষ করে কীভাবে খরচের টাকা ওঠাবেন, তা নিয়ে ব্যাপক চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। এদিকে কৃষি অফিস বলছে, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আমনখেতে ইঁদুরের আক্রমণটা খুব বেশি। তারা বলছেন, কৃষকের খেত বাঁচাতে মাঠকর্মীদের মাধ্যমে কৃষককে সচেতন করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কৃষকদের অভিযোগ কৃষি বিভাগের কারো সঙ্গে কোনো দেখাও হচ্ছে না।

কালীগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলায় আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ হাজার হেক্টর। কিন্তু রোপণ হয়েছে ১৮ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, চলতি বছরে আমন ধানের জমিতে ইঁদুরের আক্রমণের কথা তারা কৃষকের মুখে শুনেছেন। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে বড় বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠে ইঁদুরের বংশবিস্তার ঘটেছে এ বছর বেশি। সে ইঁদুরগুলোই খেত নষ্ট করছে। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই ইঁদুরের হাত থেকে খেত বাঁচাতে কৃষককে সচেতন করতে মাঠে ও হাটবাজারে সভা সেমিনার শুরু করবেন।

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : উলিপুরে চলতি মৌসুমে আমন ধান খেতের চারাগাছ কেটে সাবাড় করছে ইঁদুর। সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখলেও তা ক্রমেই ফিকে হতে যাচ্ছে। ইঁদুর নিধনের জন্য জমিতে ফাঁদ কিংবা খুঁটির মাথায় পলিথিন টাঙিয়ে দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান চাষাবাদে প্রায় ৬৪ হাজার টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে হাইব্রিড জাতের ৭৫০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৭৭৯ টন ধান, উফশী জাতের ১৮ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে ৫২ হজার ৬৭৮ টন ধান ও স্থানীয় জাতের ৪ হাজার ২৪৮ হেক্টর জমিতে ৭ হাজার ৫৬১ টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা।

উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, সম্মিলিতভাবে কৃষকদের ইঁদুর নিধন কিংবা জিংক ফসফাইডনামক কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close