নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ অক্টোবর, ২০১৯

মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে আলাদা বিভাগ হচ্ছে

রাজধানীতে সেমিনারে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ম্যালেরিয়াসহ মশাবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। সরকার মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর ফলে এডিশ মশা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে সামনে আসছে কিউলেকস মশা। এসব মশা নিয়ন্ত্রণের কথা বিবেচনা করে এবং স্বাস্থ্যগত সমসাময়িক সমস্যাগুলোর সমাধানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আলাদা একটি বিভাগ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একজন অতিরিক্ত সচিবকে দায়িত্ব দিয়ে এই বিভাগের কাজ কী হবে, সেগুলোর খসড়ার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। গতকাল শনিবার রাজধানীর বিস অডিটোরিয়ামে সেন্টার ফর গভর্নেস স্টাডি (সিজিএস) আয়োজিত ‘ভেক্টর প্রবলেম ইন বাংলাদেশ : অ্যান ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভাগ করার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, মশাবাহিত রোগগুলো শুধু শহরে নয়, গ্রামেও হয়। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গ্রামপর্যায়ে সমস্যা সমাধানে পৌঁছাতে পারে না। একমাত্র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় শহর, নগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ে কাজ করে থাকে। সে জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মশাবাহিত রোগের জন্য গণসচেতনতা বাড়াতে পাঠ্যবইয়ে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের গরুর রচনা পড়ালে চলবে না। সড়কে চলাচল, মশাবাহিত রোগসহ জনসচেতনতামূলক নানা বিষয় জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের আয় বেড়েছে। আর সে অনুযায়ী খরচও বেড়েছে। আর বাড়ছে আমাদের ওয়েস্ট (বর্জ্য)। এসব ওয়েস্ট কাজে লাগাতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। আর সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার আহ্বানও জানান তিনি।’

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন উপস্থাপন এন্টোমলজিস্ট ও সিজিএসের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হোসেন। সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদিয়া আহমদ, অধ্যাপক ড. কবীরুল বাশার ও সহযোগী অধ্যাপক ড. তাহমিনা আক্তার লিপি, জোলজিক্যাল সুসাইটি অব বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক খান হাবিবুর রহমান খান, আইসিডিডিআরবি বিজ্ঞানী সাইফুল আলম সুজন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কনসালট্যান্ট খন্দকার নুরই জান্নাত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রগমান চৌধুরী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জি এম সাইফুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শরীফ আহমেদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মমিনুর রহমান মমিনসহ বিশেষজ্ঞরা।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হোসেন বলেন, মশাবাহিত রোগের সমস্যা সমাধানে একটি সমন্বিত প্রতিষ্ঠান করতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানে সমস্যাগুলো নিয়ে গবেষণা করা হবে। গবেষণার মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান বের করা হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের নিজের কাজ নিজেকে করতে হবে। আমরা যদি আগে থেকে সচেতন হতাম, বাসাবাড়ি পরিষ্কার রাখতাম, তাহলে ডেঙ্গুর এ প্রকৌপ দেখা দিত না। সুতরাং আমরা নিজেরা পরিষ্কার থাকি এবং বাসাবাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখি।’

সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকৌপ দেখা দেওয়ার কারণ হচ্ছে, আমরা কেউই আগে থেকে সচেতন ছিলাম না, আমাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল, মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি, ভেজাল ওষুধ ছিল ও ডেঙ্গু নিয়ে সংস্থাগুলো এক-এক ধরনের তথ্য দিয়েছে। সমাধানের পথ হিসেবে তিনি বলেন, বাসাবাড়ির আঙিনা সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে, পলিসি ম্যাকিংয়ে আরো জোরালো প্রদক্ষেপ নিতে হবে এবং এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের আরো ভূমিকা নিতে হবে।

অধ্যাপক ড. কবীরুল বাশার বলেন, ভবিষ্যতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা শহরের মতো গ্রামেও বাড়বে। এ জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া জিকা ভাইরাসের জন্য সরকারকে আরো সচেতন হতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close