আসাফুর রহমান কাজল, মহানগর (খুলনা)

  ১৬ অক্টোবর, ২০১৯

মনিরা সফলতার দৃষ্টান্ত

নারীরা পিছিয়ে নেই। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সমাজের সব ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ নারীই চাকরিতে যাচ্ছেন। আবার অনেক নারী এগিয়ে আসছেন বিভিন্ন ব্যবসায়। হচ্ছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তা। নানা প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এমন অনেক নারী। নিজেদের পাশাপাশি অন্য নারীদেরও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করছেন। এমনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা নগরীর গোয়ালখালী মোড় এলাকার মনিরা আফরিন নিপা। তিনি এখন সফলতার দৃষ্টান্ত।

এইচএসসি পাস করার পর বিয়ে হয় তার। ১৪ বছরের সংসার জীবনে ঘর আলো করে দুটি কন্যাসন্তান। বড় সুখেই কাটছিল সংসার। কিন্তু সে সুখ আর বেশি দিন সইলো না তার কপালে। ২০১৪ সালের এক রাতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন স্বামী শেখ সাইফুল ইসলাম। যেন আকাশ ভেফু পড়ে নিপার মাথায়। ঘরে অসুস্থ শাশুড়ি, ছোট ছোট দুই সন্তান। কীভাবে চলবে সবকিছু। যে নারী নিজের স্কুল-কলেজ আর বাসা এবং বিয়ের পর সংসার ছাড়া কিছুই চেনে না তার পক্ষে কি আর করা সম্ভব। কার কাছে হাত পাতবেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ঘরে বসে নয়, পর্দা রক্ষা করে বাইরে বের হবেন তিনি। স্বামীর রেখে যাওয়া ছাতা, ছোটদের মশারির তৈরির কারখানা চালাবেন। কারখানার শ্রমিকদের ডাকেন তিনি। তাদের সঙ্গে কথা বলে নেমে পড়েন ব্যবসায়। স্বামীর মোবাইল ফোনে সংরক্ষণ করা নম্বর খুঁজে কথা বলেন বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। ঢাকা থেকে কাঁচামালের অর্ডার করেন। মাল এলে শুরু করেন কাজ। শুরু হয় নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ়প্রত্যয়। পথে পথে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে, হাজারো বাধা বিপত্তি এলেও কখনোই দমে যাননি তিনি। সমাজের বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে তিনি এখন স্বাবলম্বী। তার এই সফলতা শুধু একটি পরিবারের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। তার কারখানার ছোট মশারি, ছাতার ফ্রেম যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, বাগেরহাট, পাবনা, কুষ্টিয়ায় যাচ্ছে। এসব এলাকার ব্যবসায়ীরা তাকে না দেখলেও চেনেন তার মোবাইল নম্বর এবং কণ্ঠ। তার কারখানায় মাসিক বেতনে কাজ করেন ৫ জন নারী এবং ৫ জন পুরুষ শ্রমিক। এছাড়া আশপাশের এলাকার ১০-১৫ জন নারীও তাদের সংসারের কাজ শেষ করে এখান থেকে কাজ নিয়ে প্রতিদিন আয় করছেন ১/৩শ টাকা।

চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার এলাকার নুরুদ্দিন এন্ড সন্সের মো. মনির জানান, মনিরা ভাবির কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ছাতার ফ্রেম, বাচ্চাদের মশারির ফ্রেম এবং বাচ্চাদের মশারি পাইকারি ক্রয় করি। তার পণ্যের মান অনেক ভালো। সে কথা এবং কাজে মিল রাখে। তাকে কখনো এসব এলাকায় আসতে হয় না। আমরা ফোনে মালের অর্ডার দেই এবং বিকাশে বা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাই।

অদম্য এই নারী উদ্যোক্তা মনিরা আফরিন জানান, মনের জোরেই আমি ঠিকে আছি আর ছোট-বড় সবার ভালোবাসা ও দোয়ায় আমি এগিয়ে যাচ্ছে। এখন আমার বড় মেয়ে কলেজে পড়ে, ছোট মেয়ে পড়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ঘরে অসুস্থ শাশুড়ি তার সেবা যতœ করতে হয়। ফজর থেকে আমার দিন শুরু হয়। সবার জন্য সব কিছু গুছিয়ে দুপুরের খাবার নিয়ে যাই কারখানায়। সারা দিন কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করা, বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মালের অর্ডার নেওয়া, পেমেন্ট নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় কাঁচামালের জোগান নিশ্চিত করতে হয়। বাজারে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা রয়েছে অনেক। কিন্তু বাজারে চাহিদামতো পণ্য সরবরাহ করতে পারি না। পুঁজি স্বল্পতার কারণে। এ ধরনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনেক পুঁজির প্রয়োজন হয় যা আমার কাছে অপ্রতুল।

খুলনা মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের উপপরিচালক নার্গিস ফাতেমা জামিন জানান, অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী তিনি। তিনি অনেক কষ্টে জীবনযুদ্ধ করে এ পর্যায়ে এসেছেন। আজকে তার এই যে সাফল্য, এটা দেখে অন্যান্য নারীরা অনুপ্রাণিত হচ্ছে। এ ধরনের নারীদের সর্বাত্মক সহায়তা করতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ফলে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close