তহিদুল ইসলাম, জাবি

  ১২ অক্টোবর, ২০১৯

জাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার

বহিরাগতের ভিড়ে আসন পান না শিক্ষার্থীরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ রয়েছে। প্রতিদিন অর্ধশত বহিরাগত শিক্ষার্থী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গ্রন্থাগারে পড়াশোনা করেন। এতে আসন না পেয়ে বঞ্চিত হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। অনেক শিক্ষার্থী জায়গা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চললেও বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ। যদিও গ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কারণে তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রবেশ করা বহিরাগতদের অধিকাংশই ভর্তি পরীক্ষার্থী ও স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী। এসব বহিরাগতকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা সঙ্গে এনে গ্রন্থাগারে পড়ার সুযোগ করে দেন। তবে গ্রন্থাগারের ফটকে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ-সংবলিত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া থাকলেও তা এড়িয়ে যান তারা। অনেকে আবার নিজে না এসেও বহিরাগতদের গ্রন্থাগারে যেতে উৎসাহ দেন। প্রতিদিন এ রকম প্রায় ৪০-৫০ জন বহিরাগত গ্রন্থাগারের বিভিন্ন স্থানে আসন নিয়ে পড়াশোনা করেন। তবে এত বিপুলসংখ্যক বহিরাগত গ্রন্থাগারে নিয়মিত প্রবেশ করলেও তাদের প্রবেশ ঠেকাতে ‘গ্রন্থাগার পাঠকক্ষ ব্যবহার না করার অনুরোধ’ করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষকে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিচয়ের সূত্র ধরে আসেন বলে অনেকেই তাদের সরিয়ে দিতেও সাহস করেন না। এতে করে অনেক শিক্ষার্থী আসন না পেয়ে ফিরে যান।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থী শাকিল বলেন, কত দিনই তো এ রকম সিট না পেয়ে বাহিরে বসে পড়েছি। দেখি বহিরাগত পড়ছে, তার পরও কিছু বলি না। কারণ এসব বহিরাগত তো কারো না কারো ছোট ভাই কিংবা আত্মীয়।

তিনি আরো বলেন, গ্রন্থাগারের ভেতর যারা সিটে বসে পড়ালেখা করছে, তারা কি শিক্ষার্থী নাকি বহিরাগত এগুলো দেখভালের দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারে বসে পড়াশোনা করুক। বহিরাগতরা কেন এখানে আসবে। তাদের তো অধিকার নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রন্থাগারের তৃতীয় তলায় পূর্বপাশে রয়েছে ৬টি টেবিল। এখানে অবস্থানের মিনিট পাঁচেকের মধ্যে অন্তত দুজন শিক্ষার্থীকে আসন খুঁজতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর তারা আসন ফাঁকা না পেয়ে ফিরে যান। যদিও পরে সেখানকার দুটি টেবিলে অন্তত চারজন বহিরাগতকে পড়তে দেখা যায়। এরপর অন্যান্য স্থানেও কয়েকজন বহিরাগতের দেখা মেলে।

গ্রন্থাগারে কীভাবে এসেছেনÑ এমন প্রশ্নে সেই ৪ বহিরাগতের একজন বলেন, ‘আমার মামা (ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, ৪১ ব্যাচ) এখানে এসে পড়তে বলেছেন। আমি প্রতিদিন আসি না, মাঝে মাঝে আসি।’ অপর একজন জানালেন, তার বাড়ি টাঙ্গাইলের সখিপুরে। বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন গেরুয়ায় থেকে সাভারে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করছেন। তার এক বন্ধুর ভাইয়ের (ছাত্রলীগকর্মী) সুবাধে তিনি গ্রন্থাগারে পড়তে আসেন। দুই মাস ধরে তিনি গ্রন্থাগারে আসেন।

এ বিষয়ে গ্রন্থাগারের দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ হানিফ আলী বলেন, ‘এসব অনেক দিন থেকেই হয়ে আসছে। অনেক বিষয়েই তো নিষেধাজ্ঞা থাকে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কারণে সেগুলো কার্যকর করা যায় না। আমরা ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ে শিগগিরই বসব, কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close