প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১১ অক্টোবর, ২০১৯

মঙ্গলে সুবিশাল হ্রদ লবণের উঁচু পাহাড়

‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলের অসম্ভব রুক্ষ লালচে পিঠে বেড়াতে গিয়ে ‘কুমারী কৌতূহল’র চোখে পড়ল সুবিশাল একটি হ্রদের কঙ্কালসার দেহ। ৩৫০ কোটি বছর আগে যা ছিল টলটলে পানিতে ভরা। চওড়ায় ১০০ মাইল (১৫০ কিলোমিটার)। নাসার নভোযানের কৌতূহলী চোখে ধরা পড়ল, সেই শুকিয়ে যাওয়া সুবিশাল হ্রদের খাত থেকে গা বেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আলো ঝলসানো লবণের পাহাড়। খাওয়ার লবণ নয়, খনিজ লবণ। উচ্চতায় যা কম হলেও ৫০০ ফুট। যেন প্ল্যাটিনামের ভান্ডার! বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, সেই লবণের পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে এখনো লুকিয়ে রয়েছে প্রচুর পানি।

‘কুমারী কৌতূহল’ কোনো গল্পের কাল্পনিক চরিত্র নয়। মঙ্গলে ঘুরে-চরে বেড়ানো নাসার রোভার ‘মিস কিউরিসিটি’র বাংলা নাম। নাসার রোভার এমন সব নমুনা খুঁজে পেয়েছে লাল গ্রহের সেই ‘গেইল ক্রেটার’ এলাকায় যা পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলে টলটলে পানিতে ভরা হ্রদটি ছিল অবিকল দক্ষিণ আমেরিকার আল্টিপ্ল্যানোতে লবণাক্ত কুইসকুইরো হ্রদের মতোই! নাসার বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-জিওসায়েন্স’-এ।

গবেষকদলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য নাসার ‘কিউরিসিটি মিশন’র প্রজেক্ট সায়েন্টিস্ট অশ্বিন বলেছেন, ‘আমরা প্রমাণ পেয়েছি, মঙ্গলের এই সুপ্রাচীন হ্রদটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বারবার শুকিয়ে গেছে। তার পর আবার সেটি টলটলে পানিতে (ফ্রেশ ওয়াটার) ভরে উঠেছে। যে গেইল ক্রেটার এলাকায় এই প্রাচীন হ্রদের কঙ্কালসার দেহের হদিস মিলেছে, আমাদের বিশ্বাস, তার আশপাশের এলাকা ছিল অত্যন্ত রুক্ষ। অনেকটা সাহারা মরুভূমির মতো। আর এই হ্রদটি ছিল সেই মরুভূমিতে মরুদ্যানের মতো।’

অশ্বিন বলেন, কয়েকশ’ কোটি বছর আগে শুকিয়ে যাওয়া মঙ্গলের গেইল ক্রেটারের সেই হ্রদ এখনো যতটা চওড়া ও গভীর, দক্ষিণ আমেরিকার আল্টিপ্ল্যানো এলাকায় থাকা হ্রদগুলো শুকিয়ে গেলে তার থেকেও হয়ে পড়ে অনেক বেশি অগভীর ও শীর্ণ।

মঙ্গলের রুক্ষ পিঠে সেই প্রাচীন হ্রদের পানি যে লবণাক্ত ছিল, তারও প্রমাণ পেয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। রোভার ‘কিউরিওসিটি’ সেই হ্রদের খাত থেকে গা বেয়ে লবণের পাহাড়কে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। উচ্চতায় যা ৫০০ ফুট (৫০ মিটার)। নাসা সেই এলাকার নাম দিয়েছে ‘সাটন আইল্যান্ড’। রোভার কিউরিওসিটি এই এলাকা ঘুরে বেরিয়েছিল দুই বছর আগে।

নাসার বিজ্ঞানী অশ্বিন বলেন, ‘আমরা এমন প্রমাণও পেয়েছি, হ্রদটির লবণাক্ত পানি যে শুধুই লবণে ভরা ছিল তা নয়; তাতে তরল পানিও কম ছিল না। হ্রদটি শুকিয়ে যাওয়ার সময় তৈরি হয়েছিল সেই লবণের পাহাড়। পাহাড়ি গেইল ক্রেটার এলাকা থেকে নেমে আসার পর মূলত মরুভূমির মতো এলাকাতেই ছিল সেই সুবিশাল হ্রদ। যেন মরুদ্যান। আমাদের মাউন্ট এভারেস্টের মতোই মঙ্গলের গেইল ক্রেটার এলাকায় রয়েছে সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট শার্প।’

বিভিন্ন সময়ে মঙ্গলের বুকে গ্রহাণু, উল্কাপি- আর ধূমকেতুরা আছড়ে পড়ার ফলেই তৈরি হয়েছিল সেই গেইল ক্রেটার এলাকা। যা মূলত ছিল সুবিশাল গহ্বর। পরে জলের স্রোত এসে ভরিয়ে দেয় গহ্বর। পরে বাতাসের ধাক্কায় ওই এলাকায় জন্ম হয় মাউন্ট শার্পের মতো সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close