নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক

ক্ষতিপূরণের লোভে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা!

চলতি বছরেই শুরু হচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ। এজন্য রাস্তার পাশের জমি অধিগ্রহণ জরিপের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এ সুযোগে বাড়তি ক্ষতিপূরণের লোভে মহাসড়কের পাশে রাতারাতি গড়ে তোলা হচ্ছে শত শত ভবন। স্থানীয় একাধিক চক্র অনুমোদন ছাড়াই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে গড়ে তুলছেন ঝুঁকিপূর্ণ এসব স্থাপনা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৮ সালে। প্রায় ২৫০ কিলোমিটার এই রাস্তার ৫২ কিলোমিটার পড়েছে নরসিংদীতে। সরকারি ঘোষণার পর থেকে রাস্তার দুইধারে গড় তোলা হচ্ছে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের সময় বাড়তি ক্ষতিপূরণের আশায় দেড় শতাধিক অবৈধ ভবন নির্মাণ করেছে স্থানীয় একাধিক চক্র।

এক বাসিন্দা বলেন, ‘কয়েক দিন ধইরা রাতারাতি বিল্ডিং উইঠা যাইতাছে, শুনতাছি চাইর লেন করবোত, এজন্য বিল্ডিং এগুলো উঠতাছে। বিল্ডিং ভাঙলেই তো টাকা পাইবে ধরেন একতলা, দোতলা, তিন তলা অইলে যত তালাই ভাঙবে বেশি বেশি টাকা পাইবে। এটার জন্য ডবল টাকা পাইবে। এত দিন হইছে না এই যে চার লেনের খবর শুনছে এজন্য কাজ বাড়াইতাছে।’

অন্য এক বাসিন্দা বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেন হইবো এইডা হুইননা অবৈধ স্থাপন হমানে করতাছে, তিন তালা, চার তালা বিল্ডিং। অবৈধ টাকার লাইগা। এই টাকাগুলিত যাইবো আমাদের সরকারের। এরপরে এই জায়গা জোরে দখল করতাছে।’

এখনো চলমান রয়েছে বেশ কয়েকটি ভবন তৈরির কাজ। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাতারাতি গড়া এসব স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ, যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

আরো এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অনেক নতুন নতুন বিল্ডিং হইতাসে। এগুলি আমরা যতটুক জানি অনেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে, মানুষের কাছ থেকে শুনি যে তারা বিভিন্ন কন্ট্রাক সিস্টেমে নাকি বিল্ডিং করতাছে। বিল তোলার জন্য কতটুক সত্য, সেটা জানি না।’ এদিকে একই এলাকার বাসিন্দা বলেন, এটা চার তলা হবে, নিচে গরুর ফার্ম হবে, উপরে কমিউনিটি সেন্টার, আন্ডারগ্রাউন্ডে হবে গরুর ফার্ম। ভাড়াটারাও হতে পারে। শুরু হইসে আপনার এক মাস যাবৎ।

অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি এলাকায় সতর্কীকরণ বিলবোর্ড টানানোর কথা জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। মহাসড়কের পাশে স্থাপনা উচ্ছেদের উপজেলা ও পৌর কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও অভিযান শুরু হয়নি।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, ‘আমার লোকজন পাঠিয়ে একটি প্রতিবেদনের মতো সাবমিট করেছি, লোকজনের পরিদর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং এটা হাইকমান্ড বরাবর করেছি। নিয়ম হলো এটা ক্যাবিনেট স্যার বরাবর পাঠাতে হয়, আমরা পাঠিয়েছি। আর বিল্ডিংগুলোর বিষয়ে আমাদের পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ অনুমোদন দিয়ে থাকে। আমি গত মিটিংয়ে বলে দিয়েছি পৌরসভা এবং উপজেলা যাতে আবশ্যিকভাবে অনুমোদনবিহীন বিল্ডিংগুলো অপসারণের ব্যবস্থা করে। উন্নয়নকাজে সরকারের বাড়তি অর্থ অপচয় রোধে এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।’

প্রসঙ্গত, প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) অন্তর্ভুক্ত হয়। চীন সরকার চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে এ প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়। দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়ে অর্থায়ন প্রক্রিয়া বাতিল করতে অনুরোধ জানায় ইআরডি। তবে এর পরও পরিকল্পনা কমিশন এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ প্রকল্পটির জন্য নতুন করে বৈদেশিক সহায়তা অনুসন্ধান করতে ইআরডিকে অনুরোধ জানায়। এর মধ্যে চীনের আরেকটি কোম্পানি অর্থায়নে আগ্রহ দেখালেও তা বেশি দূর এগোয়নি। শেষ পর্যন্ত এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

জানা গেছে, ‘ইম্প্রুভমেন্ট অব ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট রোড টু ফোর লেন হাইওয়ে অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন অব সার্ভিস লেন অন বোথ সাইড’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ শুরু হতে দেরি হওয়ায় প্রকল্প ব্যয়ও বাড়ছে। আগের ১২ হাজার ৬৮৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা থেকে ব্যয় বেড়ে ১৪ হাজার ১৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় দাঁড়াচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ছিল মেয়াদ। এখন ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এ প্রকল্পে ২১৪ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার সড়কের কাজ হবে। নতুন পরিকল্পনায় চারটি ফ্লাইওভার, ১০টি আন্ডারপাস, ৪২টি ফুটওভার ব্রিজ, তিনটি ট্রাক স্ট্যান্ড এবং দুটি রেস্ট হাউস থাকবে সড়কটিতে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close