মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

চায়ের দেশে ‘সর্পভাস্কর্য’

একটি কুড়ি দুটি পাতা তোলার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে যতই ভালো লাগুক, এর আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর ঘটনা। চা বাগানের ভেতর রয়েছে বিষধরসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। নারী চা-শ্রমিকরা যখন পাতা তোলেন, তখন তারা নিচের দিকে দেখতে পান না। ফলে সাপের ছোবল খাওয়ার আশঙ্কা নিয়েই কাজ করতে হয়। তাদের বিশ্বাস, সাপদের শ্রদ্ধা করলে, পূজা দিলে তারা ক্ষতি করবে না। এই বিশ্বাসের কারণেই তৈরি করা হয়েছে সর্পভাস্কর্য।

চা-শ্রমিকদের বিশ্বাস ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে সর্পভাস্কার্যটি। তাদের বিশ্বাসের আর চা জনগোষ্ঠীর উদ্বেগ নিয়েই তৈরি করা হয়েছে ওই সর্পভাস্কর্যটি। প্রায় দেড়শ বছরের বাংলাদেশের চায়ের ইতিহাসে নারী চা-শ্রমিকরাই পাতা চয়ন করে থাকেন। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তারাই বাঁচিয়ে রেখেছেন চা-শিল্প।

উঁচুনিচু টিলার পাদদেশে চা বাগানে সরীসৃপ প্রাণী সাপসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর বাস। এরমধ্যে বিষাক্ত সাপের ছোবলে প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটেছে অহরহ। চাগাছগুলো অতিমাত্রায় ঘন থাকায় ভেতরে প্রবেশ করা কিছুটা কষ্টদায়ক। এভাবে ঘন হয়ে থাকায় পায়ের নিচের অংশগুলো ওপর থেকে ভালো করে দেখাই যায় না। তাই সাপজাতীয় কোনো প্রাণীর ওপর না দেখে পায়ে পাড়া পড়লেই মহাবিপদ! বিষধর হলে তো আর কথাই নেই! ছোবলময় মৃত্যু এ ব্যাপার অবধারিত হয়ে ওঠে। যখন তাকে প্রতিরোধ করার কোনো কার্যকর আয়োজনই থাকে না, তখন মানুষের মাঝে অজানা বিশ্বাস দানা বাঁধে। এমন বিশ্বাস, আতঙ্ক ও উদ্বেগ থেকেই চা-শ্রমিকদের জন্য সর্পভাস্কর্যটি মাসখানেক আগে নির্মাণ করা হয়েছে।

সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার মাজদিহি চা বাগানের ১৭ নম্বর সেকশনে দুটি বিষধরের প্রতিকৃতি স্থাপিত হয়েছে। এগুলো সিমেন্টের তৈরি এবং রঙের কারুকাজে সুসজ্জিত। চা-শ্রমিকদের কাজে এ সর্পভাস্কর্যটিকে ‘নাগবাবা’ বলে কথিত।

চা-শ্রমিক স্বপন সাঁওতাল ও রঞ্জন বাউরি এ সর্পভাস্কর্য সম্পর্কে বলেন, এখানে মারাত্মক বিষাক্ত গোখরার দেখা মেলে। এ ছাড়াও খরিস, দামিনা, নিলডুগি, দারজ এ সাপগুলো প্রায়ই দেখা যায়।

এ সাপ যেন আমাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না করে, তার জন্যই আমরা সবাই মিলে এটি তৈরি করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, সাপদের শ্রদ্ধা দেখালে ওরা আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না। প্রতি মঙ্গলবার এখানে পূজা দেওয়া হয়। নাগবাবার আশীর্বাদ লাভের চেষ্টা করা হয়। এটি আমাদের বিশ্বাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close