মাসুদ রানা, বরিশাল প্রতিনিধি

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

দক্ষিণাঞ্চলে নিমজ্জিত নৌযান উদ্ধারে নেই আধুনিক প্রযুক্তি

বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটলেও নিমজ্জিত নৌযান উদ্ধারে নেই আধুনিক প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশে দুটি আধুনিক উদ্ধারকারী জাহাজ রয়েছে সেগুলো আবার গভীর জল ছাড়া চলাচল করতে পারে না। আর পুরোনো আমলের দুটি উদ্ধারকারী জাহাজের নেই কার্যকারিতা। ৬০ টনের চেয়ে ভারী জাহাজ উদ্ধার করার ক্ষমতা নেই। ফলে যাত্রীবাহী লঞ্চ, ট্রলার, পণ্যবাহী কার্গো ও ফেরিডুবির দুর্ঘটনার পর তা নদীর তলদেশেই পড়ে থাকছে। তার ওপরে পলি জমে জমে ফুলে ফেঁপে উঠছে, তৈরি হচ্ছে ডুবোচর। দেখা দিচ্ছে নাব্য সংকট। ঝুঁকির মুখে পড়ছে নৌ চলাচল। নাব্য সংকট, অদক্ষ চালক, লঞ্চে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, নৌ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মনিটরিং সংকটে নৌপথে বাড়ছে দুর্ভোগ। ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে মেঘনা নদীতে ডুবোচর ও নাব্য সংকটের ঝুঁকি বাড়ছে।

সর্বশেষ বর্ষা মৌসুমেও দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের বিভিন্ন রুটে একাধিক নৌ দুর্ঘটনা ঘটলেও নিমজ্জিত নৌযান উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নিমজ্জিত এসব পণ্যবাহী নৌযানের ওজন ১ হাজার ২০০ টনের ওপরে হওয়ায় ২৫০ টন ধারণক্ষমতার বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজের পক্ষে তা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে গত ২৫ মে বালুবাহী বাল্কহেড এমভি সিয়াম মেঘনা নদীর মিয়ারচর এলাকায় নিমজ্জিত হলেও গত তিন মাসে তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গত ৬ আগস্ট মেঘনা নদীর গজারিয়ায় দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে দুটি নৌযান নিমজ্জিত হয়। গজারিয়ায় সার বোঝাই এমভি টপশিপ কার্গো ও গোবিন্দপুর সংলগ্ন অপর একটি মালবাহী কার্গো নিমজ্জিত হয়। মেঘনা নদীতে এ তিনটি কার্গো প্রায় কাছাকাছি স্থানে নিমজ্জিত হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি আরো বেড়েছে। বিশেষ করে মেঘনা নদীতে ডুবোচরের পাশাপাশি কার্গো নিমজ্জিত থাকায় নদীপথ সরু হয়ে গেছে। বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা সরকার মিঠু জানান, মিয়ারচরে নিমজ্জিত বাল্কহেড এমভি সিয়াম উদ্ধারে বিআইডব্লিউটিএ ৬০ লাখ টাকার উন্মুক্ত দরপত্র দিয়েছে। কিন্তু নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় তা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। অপর নিমজ্জিত নৌযান প্রসঙ্গে বরিশাল নৌ সংরক্ষণ বিভাগের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, নিমজ্জিত স্থান বয়া দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও বিগত ৬ বছরে একাধিক নৌযান নিমজ্জিত হলেও এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও পরে উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এতে নিমজ্জিত নৌযানের অধিকাংশ পানির নিচেই পড়ে থাকে। একাধিক লঞ্চমাস্টার জানান, মিয়ারচর চ্যানেলে বাল্কহেড ডুবির ঘটনার পর বড় লঞ্চগুলো মেহেন্দিগঞ্জের কালীগঞ্জ রুট হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে যেমন সময় বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে খরচও। কালীগঞ্জ রুটটি দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় চালকদের হিমশিম খেতে হয় উল্লেখ করে তারা বলেন, যেসব লঞ্চে পানি মাপার যন্ত্র (ইকোসাউন্ডার) নেই। আবার কালীগঞ্জ স্থানটি মেঘনার ডেঞ্জার জোন এলাকার মধ্যে। মিয়ারচর দিয়ে যেমন স্বাচ্ছন্দ্যে নৌযান চলাচল সম্ভব হতো কালীগঞ্জে ঠিক তার উল্টো।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী নৌযান হামজা ও রুস্তুমের কার্যক্ষমতা কমে গেছে। ওই দুই উদ্ধার জাহাজের ক্রেনের উত্তোলন ক্ষমতা ৬০ টন মাত্র। হামজা সংগ্রহ করা হয় ১৯৬৫ সালে যা বর্তমানে আরিচা ফেরিঘাটে রয়েছে। রুস্তুম সংগ্রহ করা হয় ১৯৮৪ সালে যা বর্তমানে মাওয়া ফেরিঘাটে রয়েছে। দীর্ঘ ২৯ বছর পর ২০১৩ সালে কোরিয়া থেকে আমদানি করা হয় নির্ভীক ও প্রত্যয় নামে দুটি উদ্ধারকারী নৌযান। এ দুটির উত্তোলন ক্ষমতা ২৫০ টন করে। প্রয়োজনের তুলনায় কম উত্তোলন ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও নতুন দুটি উদ্ধারকারী নৌযান আশার সঞ্চার করেছিল। তবে উদ্ধার অভিযানে এ দুটি যানও হতাশ করেছে সংশ্লিষ্টদের। ৫০০ টন উদ্ধার ক্ষমতা হলেও বরিশালে অবস্থানরত ‘নির্ভীক’ ও নারায়ণগঞ্জ অবস্থানরত ‘প্রত্যয়’ পুরোনো জলযান রুস্তুম ও হামজার মতো একযোগে উদ্ধার অভিযান চালাতে পারে না। এছাড়া গভীর পানি ছাড়া চলতে পারে না নতুন এ দুটি ভারী জাহাজ। বিআইডব্লিউটিএর সূত্র জানায় ‘রুস্তুম’ ও ‘হামজা’ সাত-আট ফুট পানিতে চলাচল করতে পারলেও ‘নির্ভীক’ ও ‘প্রত্যয়’ চলাচলের জন্য এর দ্বিগুণ গভীরতা প্রয়োজন হয়। এই উদ্ধারকারী জাহাজকেও আবার অন্য জাহাজের সাহায্যে টেনে নিয়ে যেতে হয়। এতে জ্বালানির প্রয়োজন হয় প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ লিটারের। ভাটার সময় এর গতি আরো কমে যায়। ফলে মেঘনা, লক্ষ্মীপুরসহ চাঁদপুরের আশপাশে কিংবা বরগুনার বিষখালী, খাতাচেড়া কিংবা আগুনমুখা নদীতে দুর্ঘটনা ঘটলে বরিশাল ও নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধারকারী নৌযানগুলোর অকুস্থলে পৌঁছতে দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায়। দেশের বিশাল নৌপথ যখন নাব্য সংকটে রয়েছে তখন গভীর জলে চলাচল উপযোগী প্রত্যয় ও নির্ভীক দুর্ঘটনাস্থলে কীভাবে পৌঁছাবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। জোয়ার-ভাটার হিসাব মিলিয়ে ওই দুটি ইউনিট দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও কাজ করতে পারে মাত্র একটি ইউনিট।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close