পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

এনআরসি আতঙ্কে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে আত্মহত্যা

এনআরসি লিস্ট থেকে নাম বাদ গেছে, সেইসঙ্গে মনেজুড়ে বসেছিল ডিটেনশন ক্যাম্প নিয়ে অজানা আতঙ্ক। সেটাই আর সহ্য করতে পারলেন না আসামের হাজোই জেলার রহিম উদ্দিন। নিজের বাড়িতেই আত্মহত্যা করেছেন তিনি। ৪৭ বছরের রহিম উদ্দিনকে নিয়ে আসামের এনআরসি নিয়ে মৃত্যু হলো পঞ্চাশের বেশি মানুষের। তার মৃত্যুর পর এনআরসি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন তার স্ত্রী। মৃত রহিম উদ্দিনের ছেলে আফজাল জানিয়েছেন, এনআরসি তালিকা ঘোষণার পর থেকেই বাবা খুব মনমরা হয়ে পড়েছিলেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু অফিসার বাবাকে ভয় দেখিয়েছিলেন, মোটা টাকা জরিমানা দিতে হবে, সেইসঙ্গে ভুগতে হবে জেলের সাজাও। এরপরই তিনি হতাশ হয়ে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন। আফজাল নিজে কেরালার একটি হোটেলে কাজ করেন। বিষয় হলো, ২০১৮ সালে ৩০ জুলাই আসামের যে এনআরসি লিস্টের খসড়া প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে নাম ছিল রহিম উদ্দিনের। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় নাম নেই তার। এই দ্বিচারিতা কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তার পরিবার।

এছাড়া এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে। এবার সেই আতঙ্কেই আত্মঘাতী হয়েছেন এক যুবকÑ এমনটাই দাবি পরিবারের। ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে। মৃতের নাম অন্নদা রায় (৪২)। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ময়নাগুড়ির বড়কামাত এলাকার বাসিন্দা অন্নদা সম্প্রতি এনআরসি ইস্যুতে অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। পৈতৃক জমির কাগজ তার হাতে না থাকায়, তার ভিটেমাটি চলে যাবেÑ এ নিয়েই অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা এ নিয়ে তাকে একাধিকবার বুঝিয়েও ছিলেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। পরিবারের দাবি, কয়েক দিন ধরেই যখন সরকারি দফতরে নথি সংশোধনের জন্য ভিড় হচ্ছে, তখন থেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন অন্নদা। বাড়ির কাছে রেল ক্রসিংয়ের গেটে গলায় গামছা লাগিয়ে ঝুলতে দেখা যায় অন্নদাকে। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। তার আত্মঘাতী হওয়ার পেছনে এনআরসি-ইস্যুই রয়েছে নাকি অন্য কোনো কারণ, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। অন্যদিকে ময়নাগুড়ি থানায় অভিযোগ করেছেন মৃতের দাদা মোক্ষদা রায়। তার অভিযোগ, পৈতৃক কাগজপত্র না থাকায় এনআরসি নিয়ে অবসাদে ভুগছিলেন অন্নদা। শুক্রবার ভোরে বাড়ির অদূরেই রেলগেটের সামনে নিজের গামছা গলায় বেঁধে ঝুলে পড়েন তিনি। যদিও পুলিশ সুপারের দাবি, দুই থেকে তিন বছর আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন ওই ব্যক্তি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close