আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন মাদ্রাসায় তালা

হুজুর পলাতক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় শিক্ষকের লালসার শিকার হয়েছে একটি মহিলা মাদ্রাসার একাধিক ছাত্রী। গতকাল সোমবার পুলিশ ওই মাদ্রাসা থেকে নির্যাতনের শিকার এক ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে। আখাউড়া পৌরশহরের দুর্গাপুর এলাকার আন নূর মহিলা মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে। উদ্ধার হওয়া শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে ওই মাদ্রাসার হুজুর শওকত হোসেন রিপন, মাদ্রাসার পরিচালক আসমা বেগমসহ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা পলাতক রয়েছেন। ছাত্রী নিগ্রহের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পরায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মাদ্রাসায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুর গ্রামের প্রবাসী আবুল হোসাইন সম্রাট পাঁচ বছর আগে আন-নূর মহিলা মাদ্রাসা ও এতিমখানা চালু করেছিলেন। তার স্ত্রী আসমা আক্তার মাদ্রাসাটি পরিচালনা করেন। মাদ্রাসায় ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে একজন পুরুষ শিক্ষক। শিশু শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলে ওই মাদ্রাসায়। আবাসিক ও অনাবাসিক মাদ্রাসাটিতে শতাধিক ছাত্রীর মধ্যে প্রায় ৬০ জন আবাসিক। গতকাল সোমবার সকালে হঠাৎ করে এক তিন থেকে চারজন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজন শিক্ষকের অপকর্মের কথা জানতে পেরে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থী তালিবাতুন নেছাকে (ছদ্ম নাম) উদ্ধার করে থানা নিয়ে আসে। গতকাল দুপুরে সরজমিনে মাদ্রাসায় গেলে একাধিক গ্রামবাসী বলেন, তিন থেকে চার মাস ধরে মাদ্রাসার হুজুরের এসব অপকর্মের কথা এলাকায় প্রচারও হলেও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গ্রামবাসী জুনাঈদ বলেন, আমার ভাতিজি মাদ্রাসায় পড়ে। সে বলেছে হুজুর প্রায়ই ছাত্রীদের বিরক্ত করত।

মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্রী জানায় হুজুর প্রায় সময় ছাত্রীদের শরীরে হাত দিতেন। অনেক সময় ছাত্রীকে মাদ্রাসার বাইরে নিয়ে যেতেন। বড় ম্যাডামকে (আসমা বেগম) এসব কথা জানানো হলে তিনি শরম শরম বলে চুপ করে থাকতে বলতেন। অন্তত ১০ জন ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে।

মাদ্রাসা থেকে নিজের মেয়েকে নিতে এসে অভিভাবক গিয়াস উদ্দিন বলেন লম্পট শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ভবিষ্যতে যেন কোনো শিক্ষক এ ধরনের কাজ করার সাহস না পায়। এ এলাকার পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসার হুজুর রিপন একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি মাদ্রাসা কমিটিকেও জানিয়েছি।

আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সানজিদা আক্তার বলেন, প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মেয়েটিকে জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। মেয়েটির সারা শরীরে ব্যথা করছে বলে জানিয়েছে। আখাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. আরিফুল আমিন বলেন, কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি ওই হুজুর ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করতেন। ছাত্রীদের স্পর্শ কাতর স্থানে হাত দিতেন। যৌন নিপীড়নের শিকার অসুস্থ ছাত্রীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ওই ছাত্রীর মা শিক্ষক শওকত হোসেন রিপন ও মাদ্রাসার পরিচালনা আসমা বেগমকে আসামি করে থানায় মামলা দিয়েছেন। আসামি গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close