প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

গুপ্তচর কবুতর ও ডলফিন

হাজার বছর আগেও চিঠি আদান-প্রদানে কবুতরের ব্যবহারের কথা জানা যায় বিশ্বের অনেক অঞ্চলের ইতিহাসে। কিন্তু খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ কবুতর, কাক ও ডলফিন ব্যবহার করত গুপ্তচর হিসেবে। সম্প্রতি সিআইএ এই বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে। কী করত এই গুপ্তচররা? প্রকাশিত তথ্য দেখা যাচ্ছে গোপন মিশনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো এসব প্রাণীদের। কবুতর স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের গোপন স্থাপনার ছবি তুলতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। সিআইএ কাক পাঠাত জানালায় গোপন ক্যামেরার চিপস ফেলে আসার জন্য। তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো ৪০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের কোনো বস্তু জানালার ধারে ফেলে আসা বা নিয়ে আসার জন্য। যেসব ভবনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকত সেখানে তাদের পাঠানো হতো।

কাক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল জানালায় গোপন মাইক ফেলে আসার জন্য। লেজার তাক করে তাকে কোথায় বস্তুটি ফেলতে হবে সেই টার্গেট বুঝিয়ে দেওয়া হতো। আর ছোট বাতির মাধ্যমে সংকেত দিয়ে তাকে ফিরে আসতে সাহায্য করা হতো। ডলফিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো পানির নিচের মিশনে বিশেষ করে বন্দরের নিচে ঢোকার জন্য। ডলফিন দিয়ে হামলার চেষ্টাও হয়েছে।

এমনকি পরিযায়ী পাখি দিয়ে এমন গুপ্তচরবৃত্তি করানো যায় কি-না সেই চিন্তাও ছিল। কুকুরের মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ দিয়ে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় কি-না সেই গবেষণাও হয়েছে। ’৬০-এর দশকের শেষের দিকে সিআইএ এসব গোয়েন্দা মিশনে প্রাণী পাঠানোর জন্য ৬ লাখ ডলার পর্যন্ত খরচ করত। সবচেয়ে সফল গুপ্তচর কবুতর। তবে কবুতর ছিল সবচেয়ে

কার্যকর কারণ তাদের খুব দারুণ একটা ক্ষমতা হলো শত মাইল দূরের অপরিচিত কোনো জায়গায় ফেলে আসার পরও তারা ঠিকই পথ খুঁজে বাড়ি ফিরে আসে। যুদ্ধ চলাকালীন তথ্য আদান প্রদানে হাজার বছর ধরে কবুতর ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় গোপন তথ্য সংগ্রহে কবুতর ব্যবহার করা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার গোপন কবুতর গোয়েন্দা বাহিনী ছিল। যাকে কিনা বলা হতো ‘সিক্রেট পিজন সার্ভিস’। এই বিশেষ কবুতর গোয়েন্দা বাহিনীর এক হাজারের বেশি কবুতর সফলভাবে বার্তা নিয়ে ফিরে এসেছিল। জার্মানদের রাডার স্টেশন ও রকেট ছোড়ার স্থাপনা সম্পর্কে তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।

’৭০-এর দশকে টাকানা নামে একটি অভিযানের অংশ হিসেবে কবুতর দিয়ে ছবি তোলার বিষয়টি চিন্তা করা হয়েছিল। সিআইএ সে সময় কবুতর দিয়ে ছবি তোলার পরীক্ষামূলক অভিযান শুরু করে। ৩৫ গ্রাম ওজনের ক্যামেরা তাদের শরীরে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। সেই ক্যামেরাগুলো ছিল স্বয়ংক্রিয়। কবুতরের কাজ ছিল সঠিক যায়গা দিয়ে উড়ে যাওয়া।

সাম্প্রতিক সময় মার্কিন নৌবাহিনী মাইন অপসারণের ডলফিন ব্যবহার করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতরে গোপন স্থাপনায় তাদের কীভাবে নিয়ে যাওয়া হবে সেনিয়েও নানা গবেষণা হয়েছে। ১৯৭৬ সালের একটি নথি অনুযায়ী লেনিনগ্রাদের কাছে রাশিয়ার সবচাইতে শক্তিশালী সাবমেরিন তৈরি করত এমন একটি বন্দরকে নির্বাচিত করা হয়েছিল গুপ্তচর কবুতরদের মিশনের জন্য। কিন্তু এরপর থেকে এই কবুতররা কতগুলো সফল মিশনে গেছে এবং তা থেকে কী ধরনের গোপন তথ্য মিলেছে সে সম্পর্কিত নথিপত্র এখনো গোপনই রয়ে গেছে। তাই এর বেশি কিছু আর জানা যায়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close