বদরুল আলম মজুমদার
ছাত্রদলের সম্মেলনকে ঘিরে সিন্ডিকেটের কালো হাত
বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের জাতীয় কাউন্সিল ১৪ সেপ্টেম্বর। সব ঠিক থাকলে নির্ধারিত তারিখে সারা দেশের ১১৭টি ইউনিটের ৫৮০ জন কাউন্সিলার ছাত্র সংগঠনটির আগামী দিনের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে যাচ্ছে। এই পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১১০ ছাত্রনেতা ফরম তুললেও জমা দিয়েছেন ৭৬টি আবেদন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ২৭টি আবেদন জমা পড়েছে। বাকিরা সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। তবে সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যত্র। এত দিন যে চারটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ছাত্রদলকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল তারা এই আসন্ন সম্মেলনকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এই সিন্ডিকেটের কালো হাতের ইশারায় এবারও সম্মেলন ব্যাহত হতে পারে। ছাত্র সংগঠনটির সাবেক নেতাদের বিদ্রোহের মুখে বিএনপির হাইকমান্ড ২২ বছর পর আবারও ছাত্রদলের নেতা নির্বাচন করতে যাচ্ছেন ভোটের মাধ্যমে। কিন্তু গত ২২ বছরে কমবেশি চারটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ছাত্রদলকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। এবারও বসে নেই সেই সিন্ডিকেট। প্রার্থিতা জমা দেওয়া থেকে শুরু করে মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্যন্ত এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে মাঠে নেমেছেন। এদিকে সাধারণ কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা নির্বাচন করা হবে, এমন আভাসের ভিত্তিতে এবার অনেকেই প্রার্থিতায় নেমেছেন। তাদের আশা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করা হবে বলেই, তারা তাদের প্রার্থিতা রেখেছেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের ধাবায় আবোরো ছাত্রদলের নেতা নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারা হওয়ার আশঙ্কা করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
এদিকে দলীয় একটি সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চান সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে আসুক। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি কড়া হুশিয়ারির কথাও জানা গেছে। বিদ্রোহীদের নানা বাধা ও প্রতিবন্ধকতার পর নতুন কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ হওয়ায় অনেকে যেখানে আশা দেখছেন আবার সিন্ডিকেট তাদের মন মতো নেতা বানাতে তৎপর রয়েছে মাঠে। শোনা যায় চারটি সিন্ডকেট এক হয়ে সর্বশেষ দুটি সিন্ডিকেট নিজেদের মাঝে সমঝোতায় যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ তারা সমঝোতার মাধ্যমে বাগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল। তফসিল অনুযায়ী গত মঙ্গলবার শেষ দিনে নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ৭৬ নেতা। বিবাহিতরা মনোনয়ন নিতে বা জমা দিতে না পারার কথা থাকলেও সিন্ডিকেটের ইশারায় অনেক বিবাহিত নেতারা শর্ত লঙ্ঘন করে তাদের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা জেনেও সিন্ডিকেটধারীদের ইশারায় সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কারণ এসব নেতা আগে থেকেই অবহিত আছেন আলোচনায় থাকা কারা কারা বিবাহিত। তারপরও তাদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় এ নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ছাত্রদলের একাধিক নেতা বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিবাহিতরাও মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। কিন্তু প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে স্পষ্টভাবে বলা আছে, অবিবাহিত হতে হবে, এসএসসি ২০০০ সালের মধ্যে হতে হবে, বর্তমানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবশ্যই ভর্তি থাকতে হবে। কিন্তু ফরম জমা দেওয়াদের বড় একটি অংশই বিবাহিত এবং সন্তানও আছে। অনেকে বিষয়টি অস্বীকার করছেন। কেউ বলছেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে বিয়ে করেছিলেন কিন্তু তালাক হয়ে গেছে। বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক নেতা বলেন, বিবাহিতদের প্রার্থিতা বাতিল করা বা না করা নিয়ে আবারও সংকট দেখা দিতে পারে।
এর আগে বয়সসীমা তুলে দেওয়ার দাবিতে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির নেতারা প্রকাশ্যে বিরোধিতায় নেমেছিলেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত হলেও ১২ নেতার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার না করায় তাদের মধ্যে অস্থিরতাও রয়েছে। এ অবস্থায় বিশেষ সিন্ডিকেটের ইঙ্গিতে বিবাহিত ইস্যুতে সংকট সৃষ্টি করে আবার ছাত্রদলে অস্থিরতার পাঁয়তারা হতে পারে। সেক্ষেত্রে কাউন্সিল স্থগিত হয়ে যেতে পারে। তখন বহিষ্কৃত নেতাদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে কাউন্সিল না করে পকেট কমিটি হতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষ দুই সিন্ডিকেটের মধ্যে অমিল থাকলেও কমিটি গঠনের সময় তারা এক টেবিলে বসতে পারেন।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আবু তাহের বলেন, বিয়ে করার কারণে প্রার্থিতা বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হতে পারেন। যদিও আমি মনে করি তা ঠিক হবে না। আবার কেউ বিয়ে করেছেন কিন্তু তথ্য প্রমাণের অভাবে প্রার্থিতা বাতিল হলো নাÑ এক্ষেত্রেও অন্যরা প্রতিক্রিয়া দেখাবে। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি আমানুর রহমান বলেন, যদি যাচাই-বাছাই করে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয় তাহলে কোনো সংকট থাকার কথা নয়। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটলে সংকট সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
কাউন্সিল উপলক্ষে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রার্থিতা বাছাই কমিটি করা হয়েছে। ফজলুল হক বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নেতাদের মধ্যে যদি কেউ বিবাহিত হয়ে থাকে, আমরা তাদের তথ্য বের করব। বিবাহিত প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের প্রার্থিতা বাতিল হবে।
সভাপতি পদে ২৭ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন : ছাত্রদলের সভাপতি পদে ২৭ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৪৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে দুই পদে ৭৬টি ফরম জমা পড়ে। ফরম বিক্রি হয়েছিল ১১০টি। সাধারণ সম্পাদক পদে তিন নেত্রী ফরম কিনেছিলেন। তাদের মধ্যে দুজন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের নাদিয়া পাঠান পাপন ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডালিয়া রহমান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল বুধবার থেকে আগামী পাঁচ দিন জমা পড়া মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করবে বাছাই কমিটি।
সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সর্দার আমিনুল ইসলাম সাগর, মামুন খান, আসাদুল আলম টিটু, আশরাফুল আলম ফকির লিংকন, আজিম উদ্দিন মেরাজ, ইলিয়াস, হাফিজুর রহমান, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাজিদ হাসান বাবু, আল মেহেদি তালুকদার, মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, তানভীর রেজা রুবেল, এরশাদ খান, এ বি এম মাহমুদ আলম, এম আরজ আলী শান্ত, মো. সুরুজ মন্ডল, মো. আবদুল মাজেদ, মাইনুল ইসলাম, মো. ফজলুর রহমান, মুহাম্মদ ফজলুল হক নিরব, আরাফাত বিল্লাহ খান, এস এম আল আমিন, মো. জুয়েল মৃধা, আবদুল হান্নান, মো. শামীম হোসেন, এস এ এম আমিরুল ইসলাম, সুলায়মান হোসাইন ও আল আমিন কাউছার।
সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাইফ মাহমুদ জুয়েল হাওলাদার, শাহনেওয়াজ, রিয়াজ মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, ওমর ফারুক শাকিল চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন রুবেল, আবদুল মান্নান, নাদিয়া পাঠান পাপন, এ বি এম বাকির জুয়েল, মিজানুর রহমান শরীফ, মো. ওমর ফারুক, মো. হাসান (তানজিল হাসান), মো. আলাউদ্দিন খান, রাশেদ ইকবাল খান, আমিনুর রহমান, ইকবাল হাসান শ্যামল, ইমদাদুল হক মজুমদার, মো. নাইম হাসান, কে এম সাখাওয়াত হোসেন, এ এ এম ইয়াহইয়া, ডালিয়া রহমান, সোহেল রানা, মোহাম্মদ কারীমুল হাই নাঈম, মো. মহিনউদ্দীন রাজু, আরিফুল হক, মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব, মোস্তাফিজুর রহমান, আসাদুজ্জামান রিংকু, মো. আবুল বাশার, মো. মিজানুর রহমান সজীব, মো. জুলহাস উদ্দিন, মো. মিজানুর রহমান, মো. জাকিরুল ইসলাম জাকির, সাদিকুর রহমান সাদিক, আবদুল মোমেন মিয়া, কাজী মাজাহারুল ইসলাম, মো. আজিজুল হক সোহেল, শেখ মো. মশিউর, মো. জামিল হোসেন, শেখ আবু তাহের, মো. তবিবুর রহমান সাগর, মাজেদুল ইসলাম, মাহমুদুল আলম শাহিন, মো. জোবায়ের আল মাহমুদ রিজভী, নাজমুল হক হাবীব, জহিরুল ইসলাম (দিপু পাটোয়ারী), আনিসুর রহমান সুমন, এম এম বাবুল আক্তার শান্ত ও মুন্সি আনিসুর রহমান।
"