নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ আগস্ট, ২০১৯

ইউপির সক্ষমতা বাড়াতে হবে

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা না বাড়াতে পারলে গ্রাম উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জিত হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী ইশতেহারে গ্রামকে উন্নয়নের কথা বলেছেন। সেজন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে জনসেবার মান আরো উন্নত ও নিশ্চিত না হলে দেশ এগিয়ে যাবে না। সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে ইউনিয়ন পরিষদকে আরো কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি ইউপি চেয়ারম্যানদের দায়িত্বশীলতা ও কর্তব্যবোধ বাড়াতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিল সিটি সেন্টারে লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের কার্যক্রম বাস্তবায়নবিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদের, এলজিপিএস-৩-এর প্রকল্প পরিচালক সরদার সরাফত আলীসহ মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভার শুরুতে এলজিপিএস-৩-এর কার্যক্রম নিয়ে সিনিয়র লোকাল গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট আমিনুল ইসলাম বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি এলজিএসপি-৩-এর প্রকল্প কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রীকে অবহিত করেন। এরপর ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩ সম্পর্কে প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক মনদিপ গাড়াই বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি এলজিএসপি ও এমআইএসের মাধ্যমে কী কাজ করা হয় সেটা তুলে ধরেন। এ দুই কর্মকর্তা তাদের বক্তব্যের সময় প্রজেক্টের বিজুয়াল চিত্র সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে বলেন, এতে মাঠপর্যায়ে প্রকল্পের কাজ সরাসরি মনিটরিং, ইউনিয়নের বাজেট, বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের ডেটাবেইজ, বাস্তবায়িত স্কিমের তথ্য ও জিও ট্যাগযুক্ত ছবির ডেটাবেইজ জানা যাবে। সুযোগ সৃষ্টি হবে অনলাইন অভিযোগের। এরপর তিনি নাগরিকের হাতের মুঠোয় ইউনিয়নের সব সেবা পৌঁছে দিতে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ‘আমার ইউপি’ নামে একটি সফটওয়্যারের সুবিধা সম্পর্কে মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে অবহিত করেন। পরে মন্ত্রী আমার ইউপি সফটওয়্যারটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অ্যাপটির মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্কিম বাস্তবায়ন কার্যক্রম মনিটরিং করা সহজ হবে।

সভায় মন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদকে আয় বাড়াতে হবে। তাদের আয়ের অনেক খাত রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করে নানা অবকাঠামো বা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ মানুষের কাজে আসে। ওই সেবা দিয়ে মানুষের কাছ থেকে কিছু অর্থ নিতে হবে। এভাবে তাদের সক্ষমতাও বাড়তে হবে।

তিনি আরো বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। এর কারণ চেয়ারম্যানরা নিয়মিত তাদের কার্যালয়ে বসেন না। অনেক নাগরিক তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজে এসে তাদের পান না। আর চেয়ারম্যানরা জানেন না তাদের কি দায়িত্ব বা কাজ। সেগুলো তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণকে কাক্সিক্ষত সেবা দিতে নতুন নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করতে হবে। উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা ও পদ্ধতির মাধ্যমে জনসেবা নিশ্চিত করতে হবে। আর আপনারা যে অ্যাপস সম্পর্কে ধারণা দিলেন, সেটা আমার খুব ভালো লেগেছে। এ রকম উদ্ভাবনী ও মনুষ্যত্ববোধ থাকলে দেশকে কিছু একটা উপহার দেওয়া সম্ভব।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, একটা সময় ইউনিয়ন পরিষদের কোনো একটা প্রকল্পের জন্য যে বাজেট হতো, সেটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পর্যন্ত পৌঁছাত না। আর যদিওবা পৌঁছাত তারা টাকা উঠিয়ে তাদের ব্যক্তিগত খাতে খরচ করে ফেলত। মেয়াদ শেষ হয়ে যেত প্রকল্পের আর কাজ হতো না। এখন আর সেই সিস্টেম নেই। এখন এলজিপিএসের মাধ্যমে অনলাইনে টাকা পাঠানো হয়। সেখানে কারো দুর্নীতি করার সুযোগ থাকে না। প্রকল্পের কাজও হয়।

জনসাধারণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করার জন্য যে-সব কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এলজিপিএস-৩-এর বাস্তবায়ন। এ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় জনগণ সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের অগ্রাধিকার অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা; যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ৩ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। জানুয়ারি ২০১৭ সালে শুরু হওয়া ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্প হতে দেশের ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি থোক বরাদ্দের অর্থ পাঠানো হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close