গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৫ আগস্ট, ২০১৯

সড়ক যোগাযোগে বাংলাদেশ বিশ্বের অগ্রসর তালিকায়

সড়কে গ্রামীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অগ্রসর তালিকায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সব মৌসুমে চলাচলের উপযোগী সড়কের দুই কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শতকরা গ্রামীণ জনসংখ্যার অনুপাত ৯ দশমিক ১ শতাংশ। আর দেশের মোট জনসংখ্যার ৮৪ ভাগ মানুষ সর্বোচ্চ দুই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে দেখা পান পাকা সড়কের। এ হিসাবে বলা যায়, দেশের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক মিলে মোট পাকা সড়ক রয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৫২ কিলোমিটার।

জানা গেছে, দেশের মোট সড়কের মধ্যে গ্রামীণ সড়কের উপজেলা পর্যায়ে ৯১ শতাংশ এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ৭৩ শতাংশ সড়ক নির্মিত হয়েছে। এর ফলে গ্রামীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি ভালো নেটওয়ার্ক স্থাপিত হয়েছে, যা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।

তবে বিপরীত চিত্রও রয়েছে দেশের চার বিভাগের ১১টি উপজেলায়। সেখানে কোনো পাকা সড়ক নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, এসব হাওর ও বদ্বীপ অঞ্চল হওয়ায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই।

বিশ্ব ব্যাংকের রুরাল এক্সেস ইনডেক্স-২০১৭ এর জরিপে এই বিস্ময়কর তথ্য উঠে এসেছে। গ্রামীণ সড়কের ক্ষেত্রে এ ধারণা বিশ্বব্যাপী ‘রুরাল এক্সেস ইনডেক্স’ হিসেবে পরিচিত। এ সংক্রান্ত একটি নথি সম্প্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়; নথি পর্যালোচনায় এসব তথ্য মিলেছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা সমুন্নত রাখায় দেশের গ্রামীণ জনপদের সড়কগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এটা একটা বিস্ময় বলতে পারেন। কারণ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আমার গ্রাম-আমার শহর এ ধরনের সুদূরপ্রসারী চিন্তার সুফলও এটি বলা যায়।

তিনি বলেন, বর্তমানে এলজিইডির ১০৬টি পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, নতুন প্রকল্প গ্রহণ না করে বিদ্যমান প্রকল্পগুলো সমন্বয় ও সংশোধনের মাধ্যমে আমার গ্রাম-আমার শহর অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে। এসব উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কারণে বিশ্বব্যাংকের জরিপে বাংলাদেশ অগ্রসর তালিকায় উচ্চতায় এসে দাঁড়িয়েছে যোগ করেন সচিব।

জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৮৭ হাজার ২২৩টি গ্রামের মধ্যে প্রায় ৭০ হাজারটি গ্রামের দুই কিলোমিটারের মধ্যে সব মৌসুমে চলাচল উপযোগী পাকা সড়ক আছে। বাকি প্রায় ১৭ হাজার গ্রামের শতকরা ৭০ ভাগ চর, উপকূলীয় অঞ্চলের দ্বীপ, হাওর এবং পার্বত্য উপজেলায় অবস্থিত।

এসব বিবেচনায় বিশ্বব্যাংকের রুরাল ইনডেক্স বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের রোল মডেল মনে করে। এ পরিসখ্যানে দেখা গেছে, দেশের ৫৯টি উপজেলায় ইনডেক্স পেয়েছে শতভাগ পাকা সড়ক; যার মধ্যে সিলেট ও রংপুর বিভাগের একটি করে বালাগঞ্জ ও পলাশবাড়ী, বরিশাল ও ময়মনসিংহের দুটি করে ঝালকাঠি সদর ও ইন্দুরকানী এবং হোসেনপুর ও কুলিয়ারচর, ঢাকার ১৭টির মধ্যে গাজীপুর সদর, কাপাসিয়া, মনোহরদী, পলাশ, শিবপুর, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ সদর, রূপগঞ্জ, সিরাজদিখান, ফরিদপুর সদর, নগরকান্দা, গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী, কোটালীপাড়া, মুকসুদপুর, টুঙ্গিপাড়া ও শরীয়তপুর, চট্টগ্রামের ১৩টি হচ্ছে চৌদ্দগ্রাম, কমিল্লা সদর, আখাউড়া, বি-বাড়িয়া সদর, আশুগঞ্জ, রামগঞ্জ, কমলনগর, দাগনভুঁইয়া, ফেনী সদর, ফুলগাজী, হাটহাজারী, সীতাকুন্ড ও টেকনাফ, খুলনার ১২টির মধ্যে ভেড়ামারা, খোকসা, কুমারখালী, কুষ্টিয়া সদর, আলমডাঙ্গা, গাংনী, মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর, ঝিনাইদহ সদর, সাতক্ষীরা সদর, বাগেরহাট সদর ও কচুয়া এবং রাজশাহীর ১০টি উপজেলা হচ্ছে কালাই, বাঘা, পুঠিয়া, মান্দা, নিয়ামতপুর, লালপুর, নাটোর সদর, নাচোল, ঈশ্বরদী ও উল্লাপাড়া।

এছাড়া ২৫৮ উপজেলায় পাকা সড়কের হার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ, ১০৯টি উপজেলায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ, ৪০টিতে ৪০ থেকে ৫৯ শতাংশ, ১১টিতে ২০ থেকে ৩৯ শতাংশ এবং ১৪টি উপজেলায় শূন্য থেকে ১৯ শতাংশ পাকা সড়ক রয়েছে। আর ১১টি উপজেলায় নেই কোনো পাকা সড়ক।

অন্যদিকে এলজিইডির ডেটাবেজভুক্ত গ্রামীণ সড়কের দৈর্ঘ্য বিবেচনায়, দেশের উপজেলা সড়কের ৯০ থেকে ৫৮ শতাংশ, ইউনিয়ন সড়কের ৭৩ থেকে ২১ শতাংশ, গ্রাম সড়ক- শ্রেণির ২৫ দশমিক ৭১ এবং খ-শ্রেণির ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ সড়ক পাকা করা হয়েছে। এতে এলজিইডির সড়ক ডেটাবেজের মোট ৩২ দশমিক ০৮ শতাংশ পাকা করা হয়েছে। কিন্তু উপজেলা এবং ইউনিয়ন সড়কগুলোর বড় অংশ উন্নয়ন হওয়াতে হাওর, দ্বীপ, জলাভূমি এবং পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়া অধিকাংশ গ্রামই সড়ক নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। বর্তমানে এলজিইডি সড়ক নেটওয়ার্কের কাঁচাসড়কের অধিকাংশই পাকা কিংবা বাড়ি বাড়ি সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়েছে।

এলজিইডির তথ্যমতে, দেশের উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম সড়ক এওবি মোট সড়কের সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৪৩ কিলোমিটার। যার মধ্যে পাকা সড়ক রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ২১০ কিলোমিটার যার শতকরা গড় ৩২ দশমিক ০৮ এবং কাঁচা সড়ক রয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩৩ কিলোমিটার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আমার গ্রাম-আমার শহর এ ঘোষণাতে গ্রাম পর্যন্ত সংযোগের ব্যাখ্যা নির্ধারণ করা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এই জটিলতায় উঠেছে এসেছে, বাংলাদেশে গড়ে ১০০ জন জনসংখ্যার গ্রাম যেমন আছে আবার ১০ হাজারে অধিক জনসংখ্যার গ্রামও আছে। ছোট গ্রামগুলোর ক্ষেত্রে গ্রাম পর্যন্ত সংযোগ যতটা জরুরি, গ্রামের অভ্যন্তরে পাড়া পাড়া সংযোগ ততটা জরুরি নয়। কিন্তু বড় গ্রামগুলোর ক্ষেত্রে গ্রাম পর্যন্ত সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি গ্রামের ভেতরে পাড়া থেকে পাড়া সংযোগও থাকা উচিত। বাংলাদেশের আবহাওয়া বিবেচনায় সব মৌসুমে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনের জন্য তা প্রয়োজন। কাজেই গ্রাম সংযোগ, পাড়া না বাড়ি সংযোগ এ সংক্রান্ত একটি পলিসি নির্ধারণ হওয়া প্রয়োজন। যেসব গ্রাম বড়, সেসব গ্রামে বাড়ি বাড়ি সংযোগ না করে এক কিলোমিটারের মধ্যে উন্নত সংযোগ প্রদান করা যেতে পারে। সড়ক উন্নয়নে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সৃষ্ট জটিলতা সমাধানে দিক-নির্দেশনা পেতে তৎপর হয়ে উঠেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close