বেনাপোল প্রতিনিধি

  ০৯ আগস্ট, ২০১৯

বেনাপোলে বয়স্ক ভাতার টাকা পেতেও ঘুষ!

যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে বয়স্ক ভাতার টাকা দেওয়ার আগেই কার্ড প্রতি ঘুষ নেওয়া হয়েছে। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, সামনে ঈদ তাই কয়েকজনের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সরকার উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে বয়স্ক নারী ও পুরুষকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়। প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা ব্যাংক থেকে এ টাকা ওঠানোর জন্য চেক দিয়ে থাকেন। প্রতি তিন মাস পরপর এই চেক প্রদান করার নিয়ম থাকলেও এবার এক বছর পর চেক প্রদান করা হয়েছে। এবার বাহাদুরপুর ইউনিয়নে ৭৭টি নতুন বয়স্ক কার্ড প্রাপ্ত নারী-পুরুষকে কাউকে এক বছরের কাউকে ছয় মাসের টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের নির্দেশে ঘিবা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইউনুস আলী, ধান্যখোলা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাসান আলী, বোয়ালিয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছাকের আলী ও শাখারীপোতা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিন্টু মিয়ার সহযোগিতায় ৭৭ জন কার্ডধারীর বয়স্ক ভাতার ৩ হাজার টাকার চেক দেওয়ার আগে প্রত্যেকের কাছ থেকে নগদ ১ হাজার ২০০ টাকা অগ্রিম নিয়েছেন বলে জানা যায়।

কয়েকজন বয়স্ক ভুক্তভোগী জানান, তাদের কাছে বয়স্ক ভাতার অগ্রণী ব্যাংকের চেক দেওয়ার আগে মিজান চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আমাদের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে তারপর চেক দেন। আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, আমি আমার বয়স্ক ভাতার কার্ড থেকে গত এক বছরে কোনো টাকা নেইনি। সেক্ষেত্রে আমাকে তারা ৬ হাজার টাকার চেক দেওয়ার কথা থাকলেও ব্যাংকের চেকে ৩ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ দিয়ে আরো বলেন, আমার স্বামী স্ট্রোকের রোগী। সে অসুস্থ তার নামে ৩ হাজার টাকার চেক দিলেও অগ্রিম ১ হাজার ২০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। ভেবেছিলাম বয়স্ক ভাতার পুরো টাকাটা দিয়ে আমার অসুস্থ স্বামীকে যতটুকু পারি চিকিৎসা করাব। কিন্তু ১ হাজার ২০০ টাকা তো তারা নিয়ে নিল। আরো জানা যায়, বয়স্ক ভাতার বিপরীতে যে টাকা নেওয়া হয় সে টাকার একটি অংশও ইউপি সচিব মিলনের পকেটে যায়। বাকিটা যায় চেয়ারম্যান মিজানুর ও তার চার ঘনিষ্ঠ ইউপি সদস্যদের পকেটে। ইউপি সচিব মিলন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, এর আগে দুই থেকে ৩ হাজার টাকা নেওয়া হতো। এখন তো আগের চেয়ে অনেক কম নেওয়া হচ্ছে। আপনারা যে এই টাকা নিচ্ছেন তার কি কোনো নিয়ম বা বৈধতা আছে প্রশ্ন করা হলে সে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, না এটা নেওয়ার কোনো বৈধতা নেই। তবে সামনে ঈদ তাই কিছু কিছু লোকের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে যারা এখন ৬ হাজারের চেকের বিপরীতে ৩ হাজার টাকার চেক পেয়েছেন তাদের ঈদের পর বাকি ৩ হাজার টাকার চেক দেওয়া হবে। শার্শা উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তা ওহাব আলী বলেন, প্রতি বছরে প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে বয়স্ক ভাতার কার্ড আসে ৬০ থেকে ৬৫টি। তিনি আরো বলেন, বয়স্ক ভাতার কার্ড নিতে বা চেক নিতে কোনো টাকা লাগে না। কেউ টাকা নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close