সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
ভোমরা কাস্টমসের তথ্য
যে কারণে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম
দেশের বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের খুচরা দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ভারতের অটোমেশন পদ্ধতি এবং পেঁয়াজ রফতানিতে ভারত সরকারের দেওয়া প্রণোদনা ৩০ জুন থেকে প্রত্যাহার করার বিষয়কে কারণ হিসেবে জানিয়েছেন সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার কারণেই মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।
ভোমরা কাস্টমস কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের কলকাতা থেকে ভোমরা মাত্র ৬২ কিলোমিটারে পথ। সে কারণে পেঁয়াজ আমদানির সবচেয়ে বড় পয়েন্ট হচ্ছে ভোমরা স্থলবন্দর। এ বন্দর দিয়ে গত এপ্রিল মাসে ৪৮ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। মে মাসে আমদানি হয়েছে ২৬ হাজার টন। অথচ জুন মাসে মাত্র ৮ হাজার ৬১৭ টন ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। পেঁয়াজের বর্তমান বাজার প্রসঙ্গে একজন ক্রেতা সাতক্ষীরা শহরের বাসিন্দা বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে ভারতীয় যে পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা, এখন তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’
ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মেসার্স মা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আমির হামজা বলেন, ‘ভারতের আঞ্চলিক চাহিদা বাড়ার কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সেই প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়েছে। ভারত সরকার পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের রফতানিতে উদ্বুদ্ধ করতে ১০ শতাংশ ভতুর্কি দিত। তাদের অভ্যন্তরে দাম বাড়ার কারণে জুন মাস থেকে সেই ভতুর্কি আর দিচ্ছে না। সে কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৬ টাকা বেড়েছে। কিছুদিন আগে যে পেঁয়াজ ভারতের নাসিক থেকে ১৫ থেকে ১৬ টাকায় কিনেছি। সেই পেঁয়াজ ২২ টাকায় কিনতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভোমরা স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতীয় অংশে পেঁয়াজের ফরওয়ার্ডিংয়ে অনলাইন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। কিন্তু এ কাজে কোনো দক্ষ জনবল নেই এবং অনলাইনের সার্ভারে নিয়মিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সে কারণে আমদানি এবং রফতানিতে ব্যাঘাত ঘটছে। আগে ভোমরা বন্দর দিয়ে প্রতিদিন সব মিলিয়ে ৩শ’র বেশি ট্রাক প্রবেশ করত। অনলাইন হওয়ার পর তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগে ১শ’র ওপর পেঁয়াজের ট্রাক প্রবেশ করলেও এখন ৩৫ থেকে ৪০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। এ জন্য পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।’ ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী আশিক এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এবং ভোমরা বন্দর আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহসভাপতি আল ফেরদাউস আলফা বলেন, ‘ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে ভারতের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়া মহারাষ্ট্রের নাসিক এলাকা। এ কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় সে দেশের বাজারে এ পণ্যের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। সে কারণে বেশি দামে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। সেই প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে পড়েছে। আগে বন্দরে কাঁচামালের ক্ষেত্রে প্রবেশের অগ্রাধিকার দেওয়া হতো, কিন্তু অনলাইন হওয়ার কারণে সেটা আর হচ্ছে না।’
ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসেন বলেন, ‘ভারতের কলকাতা থেকে ভোমরা বন্দর কাছাকাছি হওয়ায় এ বন্দর দিয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়। সম্প্রতি দুদেশেই অটোমেশন পদ্ধতি চালু হয়েছে। আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে গতি বাড়াতে দুদেশের কমপক্ষে পাঁচটি স্কেল বসানো উচিত। কিন্তু সেখানে স্কেল আছে মাত্র একটি। এ ছাড়া ভারতীয় অংশে প্রতিদিনিই সার্ভার সমস্যার কারণে আমদানি-রফতানি ব্যাহত হচ্ছে। অটোমেশন বসানোর পর সার্ভার সমস্যার কারণে আমদানি হ্রাস পাওয়ায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের উচিত পর্যাপ্ত অটোমেশন এবং দক্ষ জনবল বসানো। না হলে দুদেশের সরকারই অনেক টাকা রাজস্ব হারাবে এবং পেঁয়াজসহ আমদানি পণ্যগুলোর ক্রয়মূল্য বেড়ে যাবে।’ এ বিষয়ে সাতক্ষীরা ভোমরা শুল্ক স্টেশন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে জুন মাসে পেঁয়াজের আমদানি একটু কম হলেও জুলাই মাছে কিছুটা বেড়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
"