প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২০ জুলাই, ২০১৯

ব্যবস্থাপত্রে বেশি ওষুধ : তদারকি করতে মোবালই কোর্ট

বাংলাদেশে ডাক্তারদের ব্যবস্থাপত্র লেখার অস্পষ্টতা এবং রোগীকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ওষুধ দেওয়া নিয়ে নানা অভিযোগের মুখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সারা দেশে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তারা বিষয়টির তদারকি করবে। স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা বলছেন, এ নিয়ে আইনকানুন না থাকায় ডাক্তারদের অনেকেই ওষুধ কোম্পানিগুলোর স্বার্থ দেখছেন এবং রোগীর দরকারের তুলনায় অনেক বেশি ওষুধের নাম লিখে ব্যবস্থাপত্র লেখছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, চিকিৎসক এবং রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অল্প সময়ের মধ্যে তারা একটি আইনপ্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। ওষুধের ব্যবস্থাপত্র লেখার অস্পষ্টতার বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল দুই বছর আগে। আদালত চিকিৎসকদের স্পষ্ট এবং পড়ার উপযোগী করে ব্যবস্থাপত্র লিখতে বলার পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তা তদারকি করতে বলেছিল। এ ছাড়া চিকিৎসকদের অনেকে রোগীকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ওষুধের তালিকা দিয়ে ব্যবস্থাপত্র ভারী করে দিচ্ছেন, এটিকে এখন বড় অভিযোগ হিসেবে সামনে আনছেন স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, অনেক চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানির স্বার্থ দেখে ব্যবস্থাপত্র লিখছেন। বেসরকারি সংগঠন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্ণধার ড. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, কোনো আইন বা নীতিমালা না থাকায় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক দিকেই এগোচ্ছে। সরকারের কোনো ধরনের নীতিমালা নেই। অন্য দেশে যেমন ধরেন, ব্রিটেনে রোগীদের জন্য যত ব্যবস্থাপত্র লেখা হয়, সেগুলো অডিট করা হয়। ওই অডিটের আলোকে রাষ্ট্রের হেলথ সার্ভিস থেকে ডাক্তারকে প্রতি মাসে চিঠি লিখে ভুল থাকলে তা ধরিয়ে দেওয়া হয়। কিছুদিন আগে কুষ্টিয়ায় ৩৫ বছর বয়স্ক একজন নারী জ্বরে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় একজন চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। তার নানা বিষয়ে ডায়াগনসিস করার পর তাকে জ্বরের ওষুধ ছাড়াও ছয়টি ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অসুস্থতা যখন বাড়ছিল, তখন তিনি ঢাকায় এসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ কমিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে অনেক দিন ভুগতে হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক মালিহা রশিদ বলেন, অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগ চিহ্নিত করার পরই সে জন্য সুনির্দিষ্ট ওষুধ দিয়ে থাকেন। রোগটা যখন চিহ্নিত করা যায়, তখন সে রোগের সুনির্দিষ্টভাবে চিকিৎসা করাটাই আমি ভালো মনে করি। এ ছাড়া যারা অভিজ্ঞ ডাক্তার, তাদের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের তালিকা অত বড় করার কারণ নেই।

যদিও চিকিৎসকদের অনেকে বিষয়গুলো মানতে রাজি নন। কিন্তু বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বা বিএমএর একজন কর্মকর্তা ড. জামালউদ্দিন বলেন, প্রয়োজনের বেশি ওষুধ দেওয়ার বিষয় এলে, তখন নৈতিকতার প্রশ্ন আসে। এসব বিষয়ে কোনো অভিযোগ না এলে তাদের অ্যাসোসিয়শনের কিছুই করার নেই।

একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, অনেক সময় ডাক্তার একটা বা দুটা ওষুধ লিখলে, তাতে রোগীরা সন্তুষ্ট হতে চান না। তারা মনে করেন কি ডাক্তার যে কম ওষুধ দিলেন? এমন অভিজ্ঞতা আমার আছে। ফলে বেশি ওষুধ লেখাÑ এটা দুই দিকেই সাইক্লোজিক্যাল একটা বিষয়ও থাকে।

এদিকে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক মানুষের উদ্বেগের বিয়য় তুলে ধরে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব বাবলু কুমার সাহা বলেন, ডাক্তারদের এ ধরনের নির্দেশনা আমরা দিয়ে থাকি, রোগীকে যেন দরকারের বাইরে ওষুধ দেওয়া না হয়। এমনকি অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে একটা কথা হচ্ছে, হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে। সে ব্যাপারেও আমরা নির্দেশ দিয়েছি যে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু এটি মনিটরিংয়ের কোনো ব্যবস্থা আছে কি নাÑ সেই প্রশ্নে তিনি বলেছেন, এ বিষয়েও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও বিষয়গুলো তদারকি করা হয়।

কোনো আইন বা নীতিমালা না থাকার প্রশ্নও যে আসছে, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে বাবলু কুমার সাহা বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা এবং সুরক্ষা নামের একটি আইন প্রক্রিয়াধীন। এটি আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিলাম। তারা কিছু বিষয়ে সংশোধনীর জন্য ফেরত পাঠিয়েছে। আমরা সেগুলো সংশোধন করে এখন দ্রুত আবার ভেটিংয়ের জন্য পাঠানোর চেষ্টা করছি। এই আইন পাস হলে রোগী এবং চিকিৎসক উভয়েরই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এ আইনের খসড়া করার সময় ডাক্তারদের সংগঠন বিএমএ নেতাদের মতামত নেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close