কলকাতা প্রতিনিধি

  ১৭ জুলাই, ২০১৯

মুসলিম নারীকে আশ্রয় দিয়ে একঘরে ব্রাহ্মণ পরিবার!

বিশ্বজুড়ে যেখানে সাম্প্রদায়িকতা বর্ণবাদী ঘৃণার আগুনে ঘৃতাহুতি চলছে সেখানে ভিন্ন ধর্মের এক নারীর প্রতি মানবতা দেখিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এক পুরোহিত পরিবার। আর তাতেই গ্রামবাসীর রোষানলে পড়েছেন তারা। গোটা পরিবারকে গ্রামবাসীরা একঘরে করে রেখেছে। বন্ধ হওয়ার জোগাড় পুরোহিতের রোজগারের উপায়ও। খবর আনন্দবাজারের।

সম্প্রতি এই ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের চোঁয়াতে। সুভাষ রায় চৌধুরী নামের ওই পুরোহিত বাড়িতে বাড়িতে পূজা করে নিজের সংসার চালাতেন। কিছুদিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বিতারিত এক নারী সখিনা বিবিকে দুই নাবালক সন্তানসহ রাস্তায় অসহায়ভাবে বসে থাকতে দেখে আশ্রয় দেন তিনি। এতেই বাধে বিপত্তি। সখিনা ও তার সন্তানরা মুসলিম হওয়ায় গ্রামের অন্যরা বিষয়টা ভালো চোখে দেখেনি। এখন যেখানেই তিনি পূজা করতে যাচ্ছেন সবাই তাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলছেন, ‘না, ঠাকুরমশাই, আপনাকে আর আসতে হবে না!’

এ প্রসঙ্গে সুভাষ রায় চৌধুরী বলেন, ‘ঘর-হারা একটা মেয়ে রাস্তায় এভাবে ঘুরছে, চোখে সইল না। তাই মুসলিম হলেও দুটি নাবালক বাচ্চাসহ তাকে ঘরে ঠাঁই দিয়েছি। আমার কাছে ওটাই যে সবচেয়ে বড় ধর্ম’।

বাবার কথার সঙ্গে একমত পোষণ করলেন সুভাষ বাবুর কন্যা কাকলীও। বিবাহ বিচ্ছেদের পরে বাবার বাড়িতেই থাকেন তিনি। মূলত কাকলীই ওই মুসলিম নারীকে সন্তানসহ বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। তাতে সম্মতি ছিল তার বাবার। কাকলী বলেন, আশ্রয়হীন এক নারী, তাকে দেখেও চোখ বুজে থাকব? তিনি আরো বলেন, বাবাকে এসে বললাম, সখিনাকে আমাদের বাড়িতে একটু জায়গা দাও না। বাবা রাজি হতেই নিয়ে এসেছি। দুঃখের সঙ্গে কাকলী জানান, শুধুমাত্র সখিনা আর তার সন্তানদের সাহায্য করার অপরাধে গ্রামের লোকেরা তাদের একঘরে করে রেখেছে।

সুভাষ বাবুর স্ত্রী ইলা বলেন, আমরা তো এর মধ্যে কোনো অন্যায় দেখি না। দুটি ছোট বাচ্চা ছেলেমেয়েকে নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো একটা মেয়েকে আশ্রয় দিয়েছি। তার প্রশ্ন, ধর্ম কি মানবতার চেয়েও বড়? গ্রামের লোকেরা সুভাষ রায় চৌধুরীকে একঘরে করলেও সখিনার পরিবার এখন রায় চৌধুরী পরিবারের অংশ হয়ে ওঠেছে। ছেলেমেয়ে দুটিকে ভর্তি করা হয়েছে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে। কাকলী, ইলাদেবীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ঘরের কাজ করছেন সখিনাও।

সখিনা জানান, ‘পুরুত মশাইয়ের বাড়িতে থাকলেও নিজের ধর্ম নিয়ে কখনই কোনো বাঁধা পাননি তিনি। সখিনা আরো বলেন, এ বারের জন্যও আমার ধর্ম নিয়ে আপত্তি তোলেননি সুভাষ বাবু। রোজা রাখতেও বাঁধা দেননি’।

সখিনা কিংবা পুরোহিত পরিবারের মধ্যে মানবতার এমন মেলবন্ধন তৈরি হলেও তা মানতে পারছেন না গ্রামের মাতব্বরা। চোঁয়া গ্রামের এক মাতব্বর বলেন, ভিন্ন ধর্মের মানুষকে ঘরে রেখে কী পূজা করা যায়? গ্রামের মাতব্বরদের বিরোধিতা সত্ত্বেও হার মানেননি সুভাষ বাবু। তিনি বলেন, মেয়ের ওপর অত্যাচার হলে কী হয় সেটা আমি জানি। তাই সখিনাকে এ বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছি। নিজের সিদ্ধান্তে অটল মানবদরদী এই পুরোহিত বলেন, যত দিন না সখিনা ও তার ছেলেমেয়েদের কোনো ব্যবস্থা হয় এখানেই থাকবে তারা।

সুভাষ বাবুর এই উদারতার কথা পৌঁছেছে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। স্থানীয় এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, অসামান্য সাহস দেখিয়েছেন সুভাষ বাবু। আমরা সরকারের পক্ষে ওই পরিবারকে সব রকম সহযোগিতা করব। তিনি আরো বলেন, ওই গ্রামে গিয়ে আমরা কথা বলব, মানুষকে বোঝাব। তাদের বলব, এটাই তো প্রকৃত ধর্ম ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close