প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৭ জুলাই, ২০১৯

মোবাইল অ্যাপই ডাক্তারের কাজ করছে!

মোবাইল ফোনের অ্যাপ আজকাল প্রায় সব সমস্যারই সমাধান করে দিচ্ছে। এমনকি অ্যাপের মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের কাজও চলছে। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এ ক্ষেত্রে অভাবনীয় অবদান রাখতে পারে। ধরুন, আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রোগের উপসর্গগুলো মোবাইল ফোনের অ্যাপে লিখে দিলেই চলবে। তখন এক যন্ত্র রক্তমাংসের ডাক্তারের মতো আপনার সঙ্গে সে বিষয়ে আলোচনা করবে। প্রায় ২০টি প্রশ্নের উত্তর পেলে যন্ত্রটি সম্ভাব্য রোগ নির্ণয় করে দেবে। এমন এক অ্যাপ কি চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে বিপ্লব আনার ক্ষমতা রাখে?

এডিএ হেলথ কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডানিয়েল নাটরাট এ বিষয়ে তার মূল্যায়ন জানালেন। তার মতে, আমার মনে হয়, ডাক্তারের ভূমিকা অবশ্যই কিছুটা বদলে যাবে। গত আট বছরে অনেক ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে, তাদের সঙ্গে কাজ করে আমার কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমার মতে, সেরা ডাক্তাররা তারাই, যারা প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আরো ভালো ডাক্তার হয়ে উঠতে চান।

প্রায় আট বছর ধরে ডাক্তার ও প্রোগ্রামাররা মিলে এই অ্যাপ সৃষ্টি করেছেন। হাজার হাজার গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করেছেন তারা। কোম্পানির মেডিকেল কনটেন্ট বিভাগের প্রধান এভেলিনা ট্যুর্ক বলেন, এডিএ অ্যাপ উপসর্গ বিশ্লেষণ করে যে ফলাফল বাতলে দেয়, এখানে আমরা সেটাই দেখছি। বামদিকে উপসর্গের তালিকা, তাতে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বেছে নেওয়া হয়েছে। ডানদিকে সম্ভাব্য রোগগুলোর উল্লেখ রয়েছে। কোনো উপসর্গের ক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ’ বেছে নিলে সবুজ রেখা দেখা যায় এবং সেটি কোনো একটি রোগের পক্ষে যুক্তির মাত্রা ইঙ্গিত করে। উপসর্গ না থাকলে লাল রেখা দেখা যায় এবং কোনো রোগ নেই, তা ইঙ্গিত করে।’

গোটা বিশ্বে এই অ্যাপ ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগ ঠিকমতো নির্ণয় করা সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে রক্তমাংসের ডাক্তারের সাফল্যের হারও প্রায় একই রকম। সাফল্যের হার আরো বাড়াতে অ্যাপ সৃষ্টিকারীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করছেন। এভেলিনা ট্যুর্ক মনে করেন, সেল্ফ লার্নিং প্রক্রিয়ার মূলমন্ত্র হলো, এই অ্যাপ রোগ নির্ণয় করার পর ইউজার সেই ফলাফলের সঙ্গে একমত হলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। এই প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটুক, আমরা কিন্তু তা চাই না। ডাক্তাররা সব সময়ে সেই সিদ্ধান্ত নেন। ইউজার ভুল বক্তব্য রেখে প্রক্রিয়াটি যাতে প্রভাবিত করতে না পারে, এভাবে আমরা তা নিশ্চিত করি।

দৈনন্দিন জীবনে এই অ্যাপ কতটা কার্যকর? ভারতের জয়পুর শহরের সুরুজ গুর্জর প্রায় ৭০ লাখ অ্যাপ ব্যবহারকারীদের একজন। সুরুজ মনে করেন, এর ভাষা খুব সহজ হতে হবে, যাতে আরো বেশি মানুষ তা বুঝতে পারেন। মেদ বাড়া, ডায়াবেটিসের মতো বিপাক সংক্রান্ত রোগও অন্তর্গত করা উচিত, সঙ্গে মানানসই খাদ্য তালিকাও চাই।

বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সময় অ্যাপ রোগীদের সতর্ক করে দেয় এবং সম্ভাব্য জটিল রোগের ক্ষেত্রে রোগীদের সরাসরি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। যেমন, সুরুজের নাকের গহ্বরে সম্ভবত ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ হয়েছে। ডাক্তারও সেই সমস্যা শনাক্ত করেছেন। ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে ড. সুরেন্দ্র কালা বলেন, সফটওয়্যার এই রোগের বেশির ভাগ উপসর্গ সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছে। সেটা খুব ভালো কথা। আমার মতে, এই অ্যাপ ডাক্তারের জায়গা নিতে পারে না, কারণ রোগীর শরীর পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এটি খুবই প্রয়োজনীয় টুল বা সরঞ্জাম বটে।

ডেভেলপারদের আশা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে ইউজার টের পাওয়ার আগেই রোগের পূর্বাভাষ দিতে পারবে। ডানিয়েল নাটরাট মনে করেন, আমার মতে, মানুষের জীবন আরো দীর্ঘ ও সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে এআই অবশ্যই অবদান রাখবে। বিশেষ করে রোগ আগেই প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবে। এডিএ অ্যাপ সেদিকেই যেতে চায়। সেই লক্ষ্যপূরণ করতে গোটা প্রণালি বেশ কয়েক বছর ধরে ইউজারের সঙ্গী হয়ে থাকবে এবং তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে। এমন সম্ভাবনা সম্পর্কে যাবতীয় সংশয় সত্ত্বেও অ্যাপ সৃষ্টিকারীরা বার বার আশ্বাস দিচ্ছেন, যেসব তথ্যের মালিকানা ব্যবহারকারীর হাতেই থাকবে। কোনো নাম ছাড়াই তথ্য বিশ্লেষণ করা হবে। সূত্র : স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেট।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close