চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১০ জুলাই, ২০১৯

হালদা দূষণ

হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্লান্টকে শুনানিতে তলব

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী দূষণের অভিযোগে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট কর্তৃপক্ষকে শুনানিতে ডেকেছে পরিবেশ অধিদফতর। গত সোমবারের ঘটনাস্থল পর পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর্তৃপক্ষকে আগামী ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে গণশুনানিতে হাজির হতে নোটিশ দেয়। পরিবেশ অধিদফতরের পরিদর্শক মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ইটিপি না থাকায় হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। আজ (সেখান থেকে) তেল নিঃসরণের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছি। এ বিষয়ে ১৭ জুলাই শুনানি হবে।’

এর আগে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে হালদা নদীসংলগ্ন মরা ছড়া খালে বর্জ্য তেল ফেলার অভিযোগ পেয়ে সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে হাটহাজারীর ১১ মাইল এলাকায় মরা ছড়া খাল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন।

তিনি বলেন, ‘সকালে বৃষ্টির মধ্যে হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট থেকে মরা ছড়া খালে বর্জ্য তেল ছাড়া হয়। ছবি তুলে ও ভিডিও করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা তেল ছাড়া বন্ধ করে। যে নালা দিয়ে খালে তেল ছাড়া হয়, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে ভরাট করে দিয়েছি।’

ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, ‘বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) ছাড়াই বছরের পর বছর এভাবে দূষণ করছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

২০১২ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধনের পর ওই বছরই দুবার কেন্দ্রটিকে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে নোটিস দেওয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি।

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কেন্দ্রটি বর্জ্য তেল ছেড়ে হালদা নদীর দূষণ ঘটাচ্ছে। তাদের ইটিপি নেই। তারা অপেক্ষায় থাকে ভারী বর্ষণের জন্য। বেশি বৃষ্টি হলেই গোপনে বর্জ্য তেল ছেড়ে দেয়। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা এ অভিযোগ করছিলাম। আজ হাতেনাতে ধরা পড়ল।’

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে তেল ছাড়া হয়নি’ বলে দাবি করেছেন হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্লান্টের ব্যবস্থাপক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শফি উদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন, ‘খুব বেশি বৃষ্টি হওয়ায় কেন্দ্রের ভেতরের নালাগুলো ও রাস্তা পানিতে ভেসে গেছে। এতে কিছু তেল ধুয়ে হয়তো নালা দিয়ে বাইরে চলে গেছে।’ চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য ফার্নেস তেল নিয়ে আসার সময় রেলব্রিজ ধসে একটি ট্রেনের তিনটি তেলবাহী বগি মরা ছড়া খালে পড়ে যায়।

এর আগে ২০১৫ সালের ১৯ জুন ও ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই দোহাজারী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাওয়ার সময় বোয়ালখালী উপজেলার খিতাপচর ও কালুরঘাটে দুটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। সেসময় কর্ণফুলী ও হালদা নদীসহ আশপাশের এলাকায় বিপুল পরিমাণ তেল ছড়িয়ে পড়েছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close