ক্রীড়া ডেস্ক

  ০৭ জুলাই, ২০১৯

কলসিন্দুরের মেয়েদের সামনে বিশ্বকাপের হাতছানি

কলসিন্দুরের মেয়েরা সেপ্টেম্বরে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৬ এশিয়া কাপ খেলতে যাবেন। তারা এশিয়া কাপ জিতে সাফল্যের মুকুটে আরো একটি পালক যোগ করবেন। আর এই খেলার মাধ্যমে বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত হতে পারে। ঢাকায় ফুটবল ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে কঠোর অনুশীলন করছেন কলসিন্দুরের ১৩ জন মেয়ে। এখান থেকেই থাইল্যান্ডে এশিয়া কাপের চূড়ান্ত অনূর্ধ্ব-১৬ জাতীয় দল গঠন করা হবে। দল হবে ১৯ জনের। তাতে শেষ পর্যন্ত কলসিন্দুরের কমপক্ষে ১০ জন মেয়ে থাকার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানি ছোটন। তিনি জানান টিমের নেতৃত্ব দেবেন কলসিন্দুরেরই মেয়ে মারিয়া মান্ডা।

থাইল্যান্ডে ১৫ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এশিয়া কাপ একইসঙ্গে ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব। ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বকাপে এশিয়া থেকে তিনটি টিম অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। স্বাগতিক দেশ হিসেবে থাকবে ভারত। সঙ্গে এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন এবং রানারআপ দলও থাকবে।

গোলাম রব্বানি বলেন, ‘আগেও আমরা এশিয়া কাপ খেলেছি। তবে এবার আরো ভালো করার আশা আছে। আমরা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখি। কলসিন্দুরের মেয়েরাই আমাদের সেই স্বপ্ন দেখাচ্ছে।’

এই দলের সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন কালসিন্দুরের মেয়ে পূর্ণিমা বাটপর। দশম শ্রেণিতে পড়া পূর্ণিমার আশা তিনি শেষ পর্যন্ত টিকে যাবেন। খেলতে যাবেন থাইল্যান্ডে। চতুর্থ শ্রেণি থেকে খেলা শুরু করেছেন। তার বড় বোনও ফুটবল খেলেন। তাকে দেখেই খেলা শুরু। পূর্ণিমা বলেন, ‘আমাদের আশা আমরা এবার এশিয়া কাপ জিতব। তারপর বিশ্বকাপে যাব। কলসিন্দুরের মেয়েরা তাদের খেলা দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চায়।’

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামের স্কুলে এখন মোট ৫০ জনের মতো মেয়ে খেলছেন। তারা স্কুল ফুটবল থেকে শুরু করে জাতীয় দলেও আছেন। কলসিন্দুরের ফুটবলের কোচ জুয়েল মিয়া জানান, ‘জাতীয় নারী ফুটবল দলে কালসিন্দুরের ছয়জন আছেন। আর এখন অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলের জন্যও প্রস্তুতি চলছে। তারও প্রশিক্ষণ হচ্ছে। বয়সভিত্তিক সব জাতীয় দলেই কলসিন্দুরের মেয়েরা আছেন।’

দলের ম্যানেজার মালা রানী সরকার জানান, ‘২০১১ সালে আমরা শুরু করি। এখন বাংলাদেশের ফুটবল মানে কলসিন্দুরের মেয়েরা। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা কাপ জিতে আমাদের মেয়েদের যাত্রা শুরু। আমাদের মেয়েরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফুটবল খেলেছে থাইল্যান্ড, চীন, কাজাখস্তানসহ আরো অনেক দেশে।’ মালা রানী কলসিন্দুর স্কুল ও কলেজের সহকারী অধ্যাপক। তিনি নিজেও একসময় ফুটবল খেলতেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের অনুরোধে স্কুলটি সরকারি হয়েছে, বিদ্যুৎ এসেছে। কিন্তু এটা যে কত পশ্চাদপদ এলাকা কেউ বাস্তবে না আসলে তা বুঝতে পারবে না। ওরা যখন স্কুল ফুটবলে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে হাইস্কুলে উঠল তখন আমরা ভাবলাম তারা এখন কী করবে? শুরু করে দিলাম পরের ধাপের কাজ। তাদের চেষ্টা আর আমাদের সহযোগিতায় আজকের পর্যায়ে এসেছে কলসিন্দুরের ফুটবলার মেয়েরা।’

কলসিন্দুরের মেয়েরা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা গোল্ডকাপ ফুটবলে জাতীয় পর্যায়ে তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেই দলের ফুটবলার আমেনা আক্তার। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। তার কথায়, ‘আমরা কলসিন্দুরের মেয়েরা ফুটবল ছাড়া আর কিছু ভাবি না। এখানে ফুটবল খেলায় কোনো বাধা নেই। সবাই অনুপ্রেরণা দেয়। আমি আমার ফুটবল খেলা চালিয়ে যতে চাই।

তারপরও দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। গত ১৪ মে ভোরে কলসিন্দুর স্কুলের অফিস কক্ষে আগুন দেয় দৃর্বৃত্তরা। সেই আগুনে পুড়ে যায় ফুটবলারদের মেডেল, সনদসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। কলসিন্দুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক রতন মিয়া জানান, ‘তদন্তে এটা নিশ্চিত যে কে বা কারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে। কিন্তু এখনো আগুনের সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত বা গ্রেফতার করা যায়নি। দুর্বৃত্তরা গ্রেফতার হলে তাদের উদ্দেশ্য জানা যাবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close