মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

  ২৭ জুন, ২০১৯

আখাউড়া-সিলেট রেলরুট ঝুঁকিতে, উধাও ক্লিপ

ঢাকা-সিলেট রুটের কুলাউড়ায় ঘটে যাওয়া ‘ভয়াবহ’ ট্রেন দুর্ঘটনার পর একে একে বেরিয়ে আসছে এ রুটের বেহালদশার চিত্র। রেলওয়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগও উঠেছে। সিøপারের লুজ কানেকশনের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটছে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করলেও গঠিত তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। কুলাউড়ায় ওই ট্রেন দুর্ঘটনায় চারজন নিহত ও দুই শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে দুজন। এ দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় আখাউড়া-সিলেট রুটের নানা সমস্যা সামনে এসেছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সিলেট-কুলাউড়া-আখাউড়া সেকশনে ১৭৮ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। দীর্ঘ এ পথে ছোট-বড় ২৫০টির বেশি সেতু রয়েছে। সর্বনিম্ন তিন ফুট থেকে ৩০০ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ সেতুগুলো ৬০-৭০ বছর আগে নির্মিত। প্রতিদিন এ রেলপথে ৬ জোড়া আন্তঃনগর এবং ৮টি ডেমু ও লোকালসহ কয়েকটি পণ্যবাহী ট্রেনও চলাচল করে। এ রুটের রেলসেতু ও কালভার্টগুলোর অর্ধশত বছরের পুরোনো কাঠের সিøপারের অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। রেললাইনের ক্লিপ-হুক উঠে যাওয়া, সেতু-কালভার্ট সংস্কারের অভাব ও রেলসেতুর কাঠের সিøপারগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এ রেলপথ। এ ছাড়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ‘মোটর-ট্রলি’ করে লাইন চেকে গাফিলতির ফলে নানা ত্রুটি অজানা থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয় প্রতিনিয়ত।

সরেজমিনে দেখা যায়, এখানকার রেললাইনের শতকরা ৪০টি ক্লিপই নেই। অনেক জায়গায় টাই প্লাট ভাঙা, কোথাও আবার আরসিসি সিøপার ভাঙা ও কাঠের সিøপার পচে গেছে। এমনও দেখা গেছে, একটি সিøপারের কোনো মাথায় ক্লিপস নেই। মানে টান দিলে সিøপার বের করে আনা যাবে। একই চিত্র টিলাগাঁও, লংলা ও কুলাউড়া স্টেশন এলাকায়ও। এ ছাড়া কয়েকটি সেতু পরিদর্শন করে দেখা যায়, সেতুগুলোর গার্ডারের অবস্থা জরাজীর্ণ। সেতুর মধ্যে সিøপার বেঁকে রয়েছে।

জানা গেছে, রেলওয়ের বিধান অনুযায়ী মোটর-ট্রলিতে করে লাইন পরীক্ষা করার কথা। কিন্তু কুলাউড়া স্টেশন থেকে সিলেট অভিমুখে বা শ্রীমঙ্গল স্টেশন অভিমুখে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। ফলে লোহা ব্যবসায়ীরা রেললাইনে স্পাইক খোলার বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে টাই প্লাট, ক্লিপস ও ফিসপ্লেট খুলে নিয়ে যায়। খাঁটি লোহার এসব সরঞ্জামের চড়া দাম থাকায় প্রতিনিয়ত তা চুরি হচ্ছে। রেলওয়ের টহল ও মোটর-ট্রলি না থাকায় নির্বিঘেœ তারা এসব চুরি করতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুলাউড়া স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, এ রেলপথের যন্ত্রাংশ পুরোনো হওয়াতে ট্রেন চলাচলের সময় ক্লিপ-হুক সিøপারও রেললাইন থেকে খুলে উড়ে যায়। কাঠের সিøপার পড়ে যাওয়াতে ট্রেনের চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেক সিøপার বেঁকে যায়। এতে লাইন দুর্বল হয়ে পড়ে।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমাদের লোকেরা নিয়মিত লাইন পরিদর্শন করার কথা। কোথাও যদি সেটি না হয়ে থাকে, তা হলে সেই লাইনের যেসব ত্রুটি তৈরি হবে তার দায় দায়িত্বরতদের ওপর বর্তায়। আমরা এখন এই রুটের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। সেগুলো সমাধান হয়ে আসবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close