মহানগর (সিলেট) প্রতিনিধি

  ১৭ জুন, ২০১৯

সিলেটে ‘গণপিটুনিতে’ যুবক খুনের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক

মামলা দায়ের, গ্রেফতার নেই

সিলেট নগরের বনকলাপাড়া এলাকায় গত বুধবার ‘গণপিটুনিতে’ দুদু খান নামের এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনার পর থেকেই এলাকায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ কোনো কাজ ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছে না ওই এলাকার মানুষ। এমনকি এই ঘটনার বিষয়েও খোলামেলা কিছু বলতে রাজি হচ্ছে না কেউ।

গত শনিবার সন্ধ্যায় ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অনেকটা স্থবির হয়ে আছে এলাকাটি। খন্ড খন্ডভাবে বিভক্ত হয়ে অনেককেই আলাপ করতে দেখা যায়। বেশির ভাগেরই আলোচনার বিষয়বস্তু ওই দুদু মিয়া নিহতের ঘটনাটি। প্রকাশ্যে নিজেরা আলোচনা করলেও গণমাধ্যমের সামনে কেউ এই বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি নন। বিষয়টি সম্পর্কে এলাকার বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলেও তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান। আর অনেকেই দুদুর মৃত্যুকে ‘বিব্রতকর’ ঘটনা বলে উল্লেখ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, এই ঘটনার পর থেকে আমরা ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছি। অনেকটা চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে আমাদের মধ্যে। খুব বেশি জরুরি কিছু না হলে আমরা ঘর থেকে বের হচ্ছি না। বিষয়টি আমাদের জন্য বেশ বিব্রতকর।

বনকলাপাড়া এলাকায় গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার আগের দিন দুদু মিয়া কারাগার থেকে জামিনে বের হন। জামিনে বের হওয়ার পর দিনই দুদু মিয়া এলাকায় এক নারী পথচারীর ওড়না ধরে টান দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি দুদু মিয়ার কারণে ওই এলাকার নারীরা অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায় চলাফেরা করতেন বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়। এমনকি ওই এলাকার ত্রাসের নাম ছিল দুদু মিয়া এমনটা আখ্যায়িত করেন এলাকার অনেকেই।

বনকালাপাড়া এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, ‘দুদু নিহতের ঘটনার পর থেকেই এলাকার মানুষ আতঙ্কিত। যারা নিয়মিত ক্রেতা ছিলেন তারাও এখন কম বের হচ্ছেন। দিনে মানুষের কিছুটা চলাফেরা থাকলেও সন্ধ্যায় খুব দরকার ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সবকিছু মিলিয়ে বেশ আতঙ্কেই আছি আমরা।

নিহত দুদু খান হবিগঞ্জ জেলার আজমিরিগঞ্জ উপজেলার জলশোকা গ্রামের তমিল খানের ছেলে। সে নগরের বনকলাপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বাস করছিল। তার বিরুদ্ধে নগরের সুবিদবাজার এলাকার নূরানি আবাসি এলাকায় খালার বাড়িতে বেড়াতে আসা এক তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগে নগর পুলিশের বিমানবন্দর থানাসহ কয়েকটি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুদু খান নিহদের দিন রাতে দা নিয়ে সাদিয়া টেলিকম নামের একটি দোকানে হামলা চালান তিনি। তখন স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে ডাকাত এসেছে বলে মাইকিং করেন। পরে তাকে ধরে গণপিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। আর এই ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে তার ভাই জুয়েল খান বিমানবন্দর থানায় সাতজনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা হয়নি। আসামিদের গ্রেফতারে এখনো অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি নিহদের ঘটনাটি সুষ্ঠুভাবে তদন্তের জন্য কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।

নগর পুলিশের বিমানবন্দর থানার ওসি শাহাদাত হোসেন বলেন, দুদু খান নিহতের ঘটনায় তার ভাই জুয়েল খান একটি মামলা করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এদের গ্রেফতার করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, ‘সিলেটের বনকলাপাড়া এলাকায় ওই ঘটনার পর থেকে পুলিশের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এলাকাবাসী আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে দুদু খান নিহতের ঘটনাটি শুনেছি। এলাকার মানুষ তার বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে অতিষ্ঠ ছিল। ওই এলাকার মানুষ এমনিতেই আমার কাছে আসে। এলাকার নিরাপত্তার কারণেই এই ঘটনাটি ঘটেছে, আমিও চাই এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকুক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close