কাইয়ুম আহমেদ

  ১৬ জুন, ২০১৯

আষাঢ় এলো বৃষ্টি মাথায় শিহরে কদম, বিদরে কেয়া, নামিল দেয়া

ঝিম রিমি ঝিম ওই নামিল দেয়া। শুনি, শিহরে কদম, বিদরে কেয়া॥ ঝিলে শাপলা কমল, ওই মেলিল দল, মেঘ-অন্ধ গগন, বন্ধ খেয়া॥ বারি-ধারে কাঁদে চারিধার, ঘরে ঘরে রুদ্ধ দুয়ার; তেপান্তরে নাচে একা আলেয়া॥ কবি নজরুল বর্ষার রূপ-ঐশ্বর্যে মুগ্ধ হয়ে লিখেছেন এই বর্ষার গান।

প্রকৃতি রুষ্ট রূপ দেখালেও কাগজে-কলমে এলো ঋতুরানি বর্ষা। তীব্র গরমে ক্ষণিকের আকাশবারি প্রকৃতিতে এনেছে সবুজের আবহ। ফুটেছে বর্ষারানি কদম। ফলে ফলে ভরে উঠেছে গাছ। ফুলে ফলে কিংবা বৃক্ষজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে অপরূপ প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য।

আষাঢ়ের মান রাখতেই যেন মাসের প্রথম দিনেই আকাশ উপচে বৃষ্টি নামল রাজধানীতে। যেন বৃষ্টি মাথায় দুয়ারে এলো আষাঢ়। সকালে যেভাবে আকাশ কালো হয়ে এসেছিল, তাতে মনে হচ্ছিল সন্ধ্যা ঘনাচ্ছে বুঝি। তবে বৃষ্টির পরিমাণ কোথাও ছিল কম, কোথাও বেশি।

পঞ্জিকার হিসেবে গতকাল শনিবার ছিল পহেলা আষাঢ়। মানে বর্ষা ঋতুর প্রথম দিন। আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল অর্থাৎ বর্ষা ঋতু। এ ঋতুর প্রধান বৈশিষ্ট্য বৃষ্টি ঝরা আকাশ, কর্দমাক্ত মাঠ, নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা পানিতে পরিপূর্ণ হওয়া ইত্যাদি।

জ্যৈষ্ঠের প্রচ- গরম আম, জাম, কাঁঠাল পাকার সময়। জ্যৈষ্ঠের দমফাটা গরম যেমন অস্বস্তিকর তার বিপরীতে আছে বাহারি ফলের সমাহারে মন ভোলানো প্রকৃতি। এ সময়টায় বাজারে প্রায় সব ধরনের ফল পাওয়া যায়। কবির ভাষায় ‘পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ’।

জামরুল প্রকৃতিতে ফুল ও ফলের সমাহার নিয়ে বর্ষা আসে। বাহারি ফুলের সুবাসে মুখরিত হয় প্রকৃতি। ফুলে ফুলে শোভিত হয় চারপাশ। বর্ষা মানেই কর্দমাক্ত রাস্তা আর গাঁয়ের দস্যি ছেলেদের কদম ফুলকে ঘিরে হৈ হুল্লোড়। বর্ষাকে স্বাগত জানাতে এরই মধ্যে কদম ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছে প্রকৃতি। ঋতুচক্রের আবর্তনে অনেক আগেই কদম ফুল জানান দিয়েছে আষাঢ়ের আগমন বার্তা। তৃষ্ণায় কাতর বৃক্ষরাজি বর্ষার অঝোর ধারায় ফিরে পাবে প্রাণের স্পন্দন।

বর্ষা মানেই যেন বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল। বৃষ্টির সঙ্গে কদমের ভালোবাসা খুবই নিবিড়। শুধু তাই নয়, প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়েও রয়েছে কদমের পঙ্ক্তিমালা। তবে নাগরিক উঠোনে সেই কদমের ঘ্রাণ, এখন অনেকটাই যেন অতীত। নেই আর আগের মতো বিত্তবৈভব।

কদম ছাড়াও বর্ষায় ফোটা ফুলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বকুল, কলমি ফুল, স্পাইডার লিলি, দোলনচাঁপা, সুখদর্শন, ঘাসফুল, শাপলা, সন্ধ্যামালতি, কামিনী, গুল নার্গিস, দোপাটি, অলকান বর্ষাকালের ফলগুলো পুষ্টিগুণে ভরা থাকে। পেয়ারা, লটকন, আমড়া, জাম্বুরা, জামরুল, ডেউয়া, কামরাঙা, কাউ, গাব ইত্যাদি বর্ষার ফল। নানামুখী সৌন্দর্য ও তাৎপর্যের পাশাপাশি বর্ষায় কিছুটা বিপদের ঝুঁকিও রয়েছে। ভারি বর্ষণ বা পাহাড়ি ঢলে ভেসে যেতে পারে গ্রামের পর গ্রাম। তৈরি হতে পারে নদীভাঙন। ভেসে যেতে পারে বেড়িবাঁধ, মাছের ঘের। আবার অতিবৃষ্টির কারণে শহুরে নাগরিকের রয়েছে জলাবদ্ধতার শিকার হওয়ার ঝামেলা। বিপদের কথা বাদ দিলে সব মিলিয়েই ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বর্ষা নিয়ে আসে স্বস্তি ও শান্তির অনুভূতি।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, বৃষ্টি দুই দিন স্থায়ী হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু বর্ষাকাল শুরু হয়েই গেল তাই স্বাভাবিকভাবেই কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন বাড়ির বাইরে বের হলে ছাতা বা বর্ষাতি সঙ্গে রাখা, কোনো কারণে বৃষ্টিতে ভিজেই গেলে দ্রুত পানি মুছে ফেলা, ভেজা কাপড় বদলে ফেলা ইত্যাদি। শিশু আর বয়স্কদের দিকে এই সময়টায় বাড়তি খেয়াল রাখতে হয়।

আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেছেন, আগামী কয়েক দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড় বায়ুর প্রভাব উঠে গেলেই বর্ষা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। এর আগে এই বৃষ্টি মূলত পরিবেশকে অপেক্ষাকৃত শীতল করে তুলবে।

পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দেশের বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ অতিক্রম করে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেটের কোথাও আবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। কমবে দিন ও রাতের তাপমাত্রা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close