পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ১২ জুন, ২০১৯

বিদ্যাসাগরের মূর্তি উন্মোচনে মমতা

বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির যত্ন নিতে হবে

এবার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার অভিযোগ রাজ্যপাল বাংলা ভাষার অবমাননা করেছেন। হেয়ার স্কুলে বিদ্যাসাগরের মূর্তি উন্মোচন মঞ্চ থেকে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। হেয়ার স্কুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভোট-পরবর্তী হিংসায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর রাজ্যপাল তার ভাষণে সেটাকে বাড়িয়ে ১২ বলেছেন। রাজ্যপালের ভাষণকে সম্মান করেন না মন্তব্য করে মমতা বলেছেন, রাজ্যপালকে শ্রদ্ধা করেন, কিন্তু প্রত্যেক পদেরই একটা সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা আছে। বাংলাকে অবমাননা করা হয়েছে। বাংলাকে বাঁচাতে চাইলে, বাংলার সংস্কৃতিকে বাঁচাতে চাইলে একজোট হন। বাংলা গুজরাট নয়। বাংলাকে গুজরাট বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে।

বস্তুত বিদ্যাসাগরের মূর্তি উন্মোচনের মঞ্চ থেকে মূর্তি ভাঙা, ভোট-পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার জন্য বিজেপিকে নিশানা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি মঙ্গলবার মধ্য কলকাতায় ঘটনার ২৭ দিন পর বিদ্যাসাগরের মূর্তি উন্মোচন করে বাংলায় নবজাগরণের ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, বাংলা ভাষার যতœ নিতে, বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব দিতে হবে।বাংলার মাটিতে থেকে বাঙালিকে অপমান করা, তাড়ানোর চেষ্টা হলে তিনি প্রাণ দিয়ে লড়বেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, কেউ মেসেজে থ্যাংকস লিখলে তাকে উত্তরে জয় হিন্দ, জয় বাংলা লিখুন। তা হলে বাংলাটাকে একটু গুরুত্ব দেওয়া হবে। নিজের রাজ্যের প্রতি একটু মমত্ব থাকুক।

মঙ্গলবার মধ্য কলকাতায় হেয়ার স্কুলের মাঠে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই মঞ্চেই বিদ্যাসাগরের নতুন মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী, আমলা, শিক্ষাবিদরা ছাড়াও মঞ্চে হাজির ছিলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আবুল বাশার, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়িদের মতো বিদ্বজ্জনরাও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ভাষণকে মিলিয়ে দিয়েছেন সেই লেখক-সাহিত্যিকদের ভাষণের সঙ্গে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলেছেন, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দেওয়া যায়, কিন্তু বিদ্যাসাগরকে মোছা যায় না। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দিয়ে বর্ণ পরিচয় মুছে দেওয়া যায় না। বর্ণ পরিচয়ের মলাটের আদলেই সাজানো হয়েছিল অনুষ্ঠান মঞ্চ। ওই একই রঙে তোরণ তৈরি করা হয়েছিল বিদ্যাসাগর কলেজের সামনেও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষণের শুরুর দিকেই বলেন, এই অনুষ্ঠানটার প্রয়োজন হয়তো ছিল না। কিন্তু প্রয়োজনটা একটা বিশেষ কারণে হয়েছে। এটা বুঝিয়ে দেওয়া দরকার যে, বাংলা ফেলনা নয়, বাংলা খেলনা নয় আর বাংলা ছেলের হাতের মোয়াও নয়।

গত ১৪ মে উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থীর হয়ে ধর্মতলা থেকে স্বামী বিবেকানন্দের ভিটে পর্যন্ত রোডশো করেছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। শুরুতে কোনো গোলমাল না থাকলেও অমিত শাহের রোডশো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছতেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। যার জেরে পরে বিদ্যাসাগর কলেজ চত্বর রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। সংঘর্ষের পরে দেখা যায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে চুরমার হয়ে পড়ে রয়েছে । মূর্তি ভঙ্গের ঘটনার দায় সে রাতেই বিজেপির ওপরে চাপিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সে অভিযোগ নস্যাৎ করে বিজেপি বলেছিল, নিজেরা মূর্তি ভেঙে বিজেপির ওপরে দোষ চাপাচ্ছে তৃণমূল। মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে বিদ্যাসাগরের মূর্তি বলতে গিয়ে মুখ ফসকে বিবেকানন্দের মূর্তি বলে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মঞ্চ থেকেই বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অমিত শাহকে আক্রমণ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, আজ যিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তার রোডশোতেই বিবেকানন্দের মূর্তি ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। আমরা এসব বরদাশত করব না। অমিত শাহের উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন ছুড়েছেন, কেন বিবেকানন্দের মূর্তি ভাঙলেন? পরে অবশ্য কথার তোড়েই নিজের ভুল শুধরে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিকে, একই দিনে কলকাতার শিয়ালদাহ স্টেশনের কাছে এন আর এস মেডিকেল কলেজে যে জুনিয়র চিকিৎসক নিগৃহীত হয়েছেন, তাকে আক্রমণ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। তার কথায়, যে চিকিৎসক মার খেয়েছেন, তাকে মেরেছে তৃণমূল। তৃণমূলের নেতৃত্বেই এ হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। প্রসঙ্গত, রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে এন আর এস। রোগীর পরিজনদের হামলায় গুরুতর জখম হন জুনিয়র চিকিৎসক পরিবহ মুখোপাধ্যায়। তার মাথার করোটির হাড় ভেঙে গেছে। দারিদ্র্যের মধ্যে সর্বভারতীয় ১৮০ র?্যাংক করে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সে ভর্তি রয়েছেন পরিবহ মুখোপাধ্যায়। পাঁচ চিকিৎসকের দল তার মাথার অস্ত্রোপচার করেছেন। নিউরো সায়েন্সের পক্ষে জানানো হয়েছে, সিটিস্ক্যানে ধরা পড়েছে পরিবহর করোটির সামনের ডানদিকে হাড় ভেঙেছে। পরিবহকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। অন্যদিকে, এনআরএসের ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে গোটা পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতাল পরিষেবা। মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ, শিশু মঙ্গল, আরজি কর, কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ একাধিক হাসপাতালে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন ইন্টার্নরা। এর ফলে রাজ্যজুড়ে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবা। ভোগান্তি বাড়ছে রোগী ও তাদের পরিবারের।

এরই মধ্যে পরিস্থিতি মোকাবিলায় অধ্যক্ষ, সুপার, ডেপুটি সুপারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র ও প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যসহ উচ্চপর্যায়ের কর্তারা। পরিষেবা স্বাভাবিক করতে এরই মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার গভীর রাত থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের এ অবস্থান বিক্ষোভের জেরে হাসপাতালের পরিষেবা কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেছে। রাজ্যে সব সরকারি হাসপাতালে বন্ধ আউটডোর। দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে আবার গেটের বাইরে অপেক্ষা করছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close