প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১০ জুন, ২০১৯

গুপ্তচর হিসেবে কেমন হবে জলজপ্রাণী

গুপ্তচর, অস্ত্র পরিবহন বা সতর্কতা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রাণীর ব্যবহারের ইতিহাস পুরোনো। তবে সাগরের প্রাণীদের সচল সেন্সর হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা অদ্ভুত মনে হতে পারে। সম্প্রতি যখন একটি বেলুগা তিমিকে মুখের সঙ্গে ফিতা পরানো অবস্থায় পাওয়া যায়, তখন ধারণা করা হয় যে সেটিকে রাশিয়ান সেনাবাহিনী গুপ্তচর হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এমনটি অবশ্য যতটা নতুন মনে হচ্ছে আসলে তা নয়। ১৯৬০ এর দশকেই মার্কিন নৌবাহিনী ডলফিনকে প্রশিক্ষণ দিত সমুদ্রে মাইন শনাক্ত করা এবং ডুবে যাওয়া নৌ সদস্যদের উদ্ধারে। রাশিয়াও একই ধরনের কাজ করত। এছাড়া, হাঙ্গর, ইঁদুর এবং কবুতরও বহু বছর ধরে এ ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। খবর বিবিসির।

সাম্প্রতিক সময়ে ইউএস ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি বা ডারপা সমুদ্রের বড় মাছ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র প্রাণী সবকিছুকে পানির নিচের সতর্কতা বৃদ্ধির কাজে লাগানোর ওপর গবেষণা করছে। পার্সিসটেন্ট অ্যাকুয়াটিক লিভিং সেন্সর প্রোজেক্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. লরি অ্যাডোর্নাটো বলেন, ‘সমুদ্র তলদেশে কোনো বাহন চলাচল করলে এসব সামুদ্রিক জীবগুলোর প্রতিক্রিয়া কী হয় আমরা সেটাই বোঝার চেষ্টা করছি।’

ডারপা’র গবেষণায় দেখা গেছে এমনো কিছু সামুদ্রিক প্রাণী রয়েছে যাদের শরীর থেকে এক ধরনের আলোর বিচ্ছুরণ হয় কোনো কিছুর আগমন ঘটলে। তবে তারা সামুদ্রিক জীবের বিভিন্ন পরিবর্তন আরো ভালোভাবে বোঝার জন্যে সাবমেরিন এবং সমুদ্রে নিচে চলার উপযোগী ড্রোন ব্যবহার করেছে। এমনই একটি প্রোজেক্টের সহসভাপতি ভার্ন বয়েল বলেন, ‘আমরা এসব জীবের বিভিন্ন আচরণের পরিবর্তন বুঝতে চাই প্রাকৃতিক কারণ ও মানব সৃষ্ট কারণের মাঝে।’

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সাগরের তলদেশের গোলিয়াথ গ্রুপ যেগুলো ২ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যে বাড়তে পারে তারা এক ধরনের শব্দ সৃষ্টি করে যখন ডুবুরিরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। কিংবা নতুন কোনো বস্তু তাদের আবাসস্থলে ঢোকার চেষ্টা করলেও তারা কৌতুহল দেখায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এমন অনেক প্রজাতির মাছ আছে যারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টির জন্য কিংবা বাইরের কোনো বিপদের আশঙ্কা থাকলে শব্দ সৃষ্টি করে। এই প্রকল্পটির অংশীদার রেদন বিবিএন টেকনোলজির অ্যালিসন লাফেরিয়র বলেন, ‘যদি কোনো নৌযান এসব প্রাণীগুলোর কাছাকাছি আসে, তাহলে মনে করা হচ্ছে যে তারা তাদের আচরণ পরিবর্তন করবে এবং সেটি আমরা পরিমাপ করতে পারব।’

লাফেরিয়র বলেন যে, তারা এখনো এই গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিন আইল্যান্ডে চালানো পরীক্ষার তথ্য-উপাত্ত তারা বিশ্লেষণ করছেন। তাদের মতে, সামুদ্রিক জীবের আচরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশন এমন বিষয়ের ক্ষেত্রে। গবেষকরা বলছেন যে, বিশ্বব্যাপীই প্রাণীদের এই সংকেত আদান-প্রদান বা তাদের আচরণ নিয়ে কাজ করার চেষ্টা চলছে। তাদের আচরণের পরিবর্তন আমাদের সংকেত দেয়। গৃহপালিত কুকুর বা ক্যানারি পাখির সাহায্যে যা বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে। তাদের মতে, প্রাণী ও উদ্ভিদ জগত মানুষের তথ্যের ভান্ডারে এনে দিতে পারে এক বিশাল বিপ্লব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close