নিজস্ব প্রতিবেদক, মনিরামপুর (যশোর) থেকে ফিরে

  ২০ মে, ২০১৯

যশোরে জমি নিয়ে বিরোধ

ঝগড়া থামাতে গিয়ে গোপাল দাসের মৃত্যু সন্ত্রাসী হুমকিতে পরিবার

ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ। এ বিরোধ মেটাতে বোনের জামাই গোপাল দাস ও তার ছেলেরা সেখানে উপস্থিত হন। ওই ঘটনার জের ধরে পুলিশ হেফাজতে ৮৩ বছরের বৃদ্ধ গোপাল দাশ মারা যান। এদিকে তার পরিবারের সদস্যরা মিথ্যা মামলায় আসামি হয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সন্ত্রাসী হামলার পর অজানা আতঙ্কে দিন কাটছে গোপাল দাশের পরিবারের সদস্যদের।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের তারুয়াপাড়া গ্রামের গোপাল দাশ গত ২৮ এপ্রিল নিহত হন। এরপর ৪ মে তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীরা পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিয়ত নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসী জানায়, জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয়ে তারুয়াপাড়া গ্রামের সুরেন্দ্রনাথ সেনের ছেলেদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝগড়া চলে আসছিল। একটি পানির মোটর চুরি যাওয়ার ঘটনা নিয়ে গত ২৮ এপ্রিল সুরেন্দ্রনাথ সেনের ছেলেদের মধ্যে বাগবিত-া শুরু হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে হার্টের বাইপাস করা রোগী সুরেন্দ্রনাথ সেনের ছেলে যাদব সেন মারা যান। খবর পেয়ে তাদের বোনজামাই গোপাল দাশ এবং তার ছেলেরা সেখানে গিয়ে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলে মাধব সেনসহ অন্যরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং গোপাল দাশকে আটক করে। পরে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় গোপাল দাশের।

গোপাল দাশের বড় মেয়ে সুমিত্রা দাশ জানান, তার মামাদের দুই পক্ষের মধ্যে গ-গোলের খবর পেয়ে তার বাবা সেখানে যান। এরপর মাধব সেনসহ অন্যরা তার ওপর হামলা চালায়। এতে তিনি মারাত্মক আহত হন। আহত অবস্থায় তাকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে তাকে খাবার ও ওষুধ না দেওয়ার কারণে তিনি পুলিশ হেফাজতে মারা যান। তিনি আরো বলেন, তার বাবা ডায়াবেটিসের রোগী ছিলেন। অথচ আহত অবস্থায় তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর কোনো খাবার, ওষুধ এমনকি পানিও খেতে দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া কারো সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

এলাকার দিনমজুর হাফিজুল ইসলাম ঘটনার দিন খবর পেয়ে সেখানে যান। তিনি জানান, বৃদ্ধ গোপাল দাশের কারোর ওপর হামলা করার অবস্থা ছিল না। তিনি ভাই-ভাইয়ের বিরোধ মেটাতে চেষ্টা করায় তার ওপর হামলা চালানো হয়। এ ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে যাদব সেনের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুকে হত্যা হিসেবে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়। এরপর আবার তাকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশ হেফাজতে তারা মৃত্যু হয়।

মনিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, গোপাল দাসকে পুলিশ পাহারায় আদালতে নেওয়ার পথে অসহ্য গরমে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ কারণে সন্ধ্যায় তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রাত সাড়ে ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরে প্রতিপক্ষরা গোপাল দাশের জমি থেকে গাছ কাটার চেষ্টা করলে তা পুলিশ গিয়ে বন্ধ করে দেয় বলেও তিনি জানান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গোপাল দাশকে সকালে আটক করা হলেও যাদব সেনের মৃত্যুকে হত্যাকা- উল্লেখ করে ওই দিন বিকেলে থানায় মামলা করা হয়। যে মামলায় গোপাল দাশসহ তার তিন ছেলে ও সুরেন্দ্রনাথের সেনের ছেলে মদন সেনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় জেলহাজতে পাঠানোর আগেই গোপাল দাশের মৃত্যু হয়। এরপর থানা মামলা না নিলে গোপাল দাশের মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট আদালতে হত্যা মামলা করা হয়। এ মামলার পর সন্ত্রাসীরা আরো ক্ষিপ্ত হয় এবং একের পর এক হুমকি দিচ্ছে। গত ১০ মে তারা গোপাল দাশের বাড়ির পাশের রাস্তা ঘিরে নিয়েছে। এর আগে ৪ মে বাড়িতে হামলা করে গাছগাছালি কেটে বিক্রির চেষ্টা চালায়। কিন্তু পুলিশের হস্তক্ষেপে তাদের বিরত রাখা সম্ভব হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে বলেন, গোপাল দাশ এলাকার সম্মানী ব্যক্তি ছিলেন। নিকট আত্মীয়দের বিরোধ মেটাতে গিয়ে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আর তার পরিবারের সদস্যরা বিপাকে পড়েছেন। মর্মান্তিক ওই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ঢাকুরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ তাপস কুমার কুন্ডু। তিনি বলেন, একান্তই পরিবারিক একটি সমস্যাকে কেন্দ্র করে দুটি পরিবারকে সর্বস্বান্ত করার চক্রান্ত চলছে। স্থানীয় সুধীজনরা উদ্যোগী হলে পরিবার দুটিকে রক্ষা করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close