এস এইচ এম তরিকুল, রাজশাহী

  ১০ মে, ২০১৯

গরমে নাজেহাল পাখি

বৈশাখের শেষ সপ্তাহে আগুনঝরা রোদে তেতে উঠেছে রাজশাহী। সূর্য তাপের পোড়া দহনে শুধু রাজশাহী মহানগরবাসীরই নয়, প্রাণ যায় যায় অবস্থায় বিপর্যস্ত উত্তরাঞ্চলের প্রাণিকুল। একটু শীতল পরশের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। যত দিন গড়াচ্ছে তাপমাত্রা ততই বাড়ছে। বৈশাখী খরতাপ যেন আর কাটছেই না। আগুনঝরা আবহাওয়ায় সাধারণ মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। একটু শীতল পরশের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে পদ্মাপাড়ের মানুষ। দিনে লু হাওয়া, রাতে গুমট গরমে নাভিশ্বাস উঠছে সবার। বৃষ্টির জন্য মানুষের মধ্যে যেন হাহাকার পড়ে গেছে। সূর্য দহনে শরীরের চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে চর্ম রোগীর সংখ্যাও। এর মধ্যে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে। তীব্র রোদে পুড়ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি। পানির অভাবে মারা যাচ্ছে অনেক গাছ গাছালি। গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে চলতি মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ছিল ২৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

দিনভর সূর্যের তীর্যক রশ্মী আর গরম হাওয়া, দুপুর থেকে শুরু হয় গরমের নাভিশ্বাস। আর দিন-রাতে সমানতালে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে স্বস্তির জায়গা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবের সময় এই তাপমাত্রা থেকে দুই দিন প্রাণিকুল আরামে ছিল। তবে সেসময় ছিল উৎকণ্ঠা। আর ফনী বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলে ক্রমেই বাড়ছে তাপমাত্রা। ভ্যাপসা গরমে নাস্তানাবুদ রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রা।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার চলতি মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ছিল ২৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন সকালে বাতাসের আদ্রতা ৯৫ শতাংশ ও বিকাল ৩টায় ৪৫ শতাংশ। আগের দিন বুধবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন ২৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক বলেন, সামান্য বিরতি দিয়ে রাজশাহীর তাপমাত্রা আবারও বাড়ছে। আরো কয়েকদিন এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে সারা দিন তাপদাহে খাঁ-খাঁ করছে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চল। মানুষের পাশাপাশি কাহিল পশু-পাখিরাও। মাঠ-ঘাট, বাসা কিংবা অফিস-আদালত কোথাও নেই স্বস্তি। অব্যাহত লোডশেডিং ও তাপমাত্রার কারণে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অব্যাহত এ তাপদাহের কারণে ইফতার আয়োজনে শরবত, ডাব, তরমুজ, বেলসহ রসালো ফলের চাহিদা বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ও কিছুটা সহনীয় মাত্রায় দাম থাকায় বেশি বিক্রি হচ্ছে আখের রস।

অন্যদিকে সূর্যের তাপে শরীরের চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। এই চরম তাপপ্রবাহে রাজশাহীর খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের সীমা চরমে পৌঁছেছে। আর অসহনীয় গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রকোপ বেড়েছে বিভিন্ন রোগের। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

সূত্র মতে, ১৯৪৯ সাল থেকে বাংলাদেশে তাপমাত্রা রেকর্ড শুরু হয়। এরই মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গত কয়েকদিন থেকে অব্যাহত তাপপ্রবাহে এত বছর পর আবারও সে রেকর্ড ভাঙার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন সবাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close