আবদুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ

  ১০ মে, ২০১৯

ঢাকা-না.গঞ্জ মহাসড়কে চলছে নিষিদ্ধ থ্রি হুইলার

মহাসড়কে নিষিদ্ধ থ্রি হুইলার লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশা ও ভটভটি অবাধে চলছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল থেকে কাঁচপুর-মেঘনা ও যাত্রাবাড়ীতে। পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে এসব যানবাহন চলাচল করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মহাসড়কের ওপর যত্রতত্রভাবে স্ট্যান্ড বানিয়ে মহাসড়কে নিষিদ্ধ এসব পরিবহন প্রকাশ্যে চলাচল করলেও পুলিশ কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এজন্য অন্যান্য যানবাহনের মালিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

কাগজপত্র ও ফিটনেসবিহীন এসব অবৈধ যানবাহন অবাধে চলাচলের কারণে প্রতিদিন যানজটের কবলে পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। সেই সঙ্গে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এসব যানবাহনের অধিকাংশ চালক হচ্ছে শিশু। গত বুধবার শিমরাইল মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের দক্ষিণপাশে আদমজী সড়কে প্রায় অর্ধশতাধিক, মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ঢাকা-যাত্রাবাড়ী সড়কে, মহাসড়কের উত্তরপাশে ডেমরা সড়কে প্রায় শতাধিক এবং ওভারব্রিজের নিচে বেশকিছু লেগুনা শিমরাইল মোড়-সোনারগাঁ মেঘনাঘাট পর্যন্ত সড়কে চলাচল করছে। সরেজমিন দেখা যায়, এসব লেগুনা মহাসড়কের ওপর যত্রতত্র স্ট্যান্ড স্থাপন করে মহাসড়কের একাংশ দখল করে রেখেছে। এছাড়া রাস্তার ওপর গাড়ি এলোপাতাড়িভাবে থামিয়ে যাত্রীদের উঠানামা করাচ্ছে হরহামেশায়। অনেক চালক উল্টে পথে গাড়ি চালাচ্ছে। ঢাকা থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরইল মোড়ে আসা লেগুনাগুলো শিমরাইল ইউটার্ন দিয়ে প্রতিনিয়ত উল্টো ঘুরানো হচ্ছে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্টদের সামনেই। এসব যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কাঁচপুর সেতুর পূর্বপাশে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওপর দিয়ে রাস্তা দখল করে খোরশেদ মিয়া নামে এক চাঁদাবাজ শতাধিক লেগুনা থেকে প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে। ডেমরা সড়কে মনির হোসেন, আবুল খায়ের যাত্রাবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জ সড়কে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক লেগুনা থেকে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে। শিমরাইল ইউটার্নের সংলগ্ন লেগুনা স্ট্যান্ডে দৈনিক রহমান নামে এক ব্যক্তি দৈনিক ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে। তারা বলেন, ট্রাফিক সার্জেন্ট পুলিশকে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা মাসোয়ারা দিয়ে আমরা লেগুনা চালাচ্ছি। চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে খোরশেদ মিয়া ও মনির হোসেন বলেন, প্রশাসনের লোকদের ম্যানেজ করেই আমরা লেগুনা থেকে চাঁদা আদায় করছি। ঢাকা বিশ্ববিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিফাত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ট্রাফিক ও থানা পুলিশের নাকের ডগায় লেগুনা চলাচল করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান বলেন, সরকার আইন প্রণয়ন করার পর তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কিন্তু তাদের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে আমরা সাধারণ মানুষ অবাক হয়ে যাই। স্থানীয়রা বলেন, সড়কের উল্টোপথে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও অবৈধ লেগুনা মহাসড়কে অবাধে উল্টো পথে চলাচল করছে। শুধু তাই নয় রাস্তার একাংশ দখল করে স্ট্যান্ড বানিয়েছে রীতিমতো চাঁদাবাজি করছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, শিমরাইল মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্স রয়েছে সেখানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ট্রাফিক সার্জেন্ট পুলিশ মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেলেও নিষিদ্ধ লেগুনার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এসব লেগুনা থেকে প্রতি মাসে মোটা অংকের চাঁদা বা মাসোয়ারা পাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট ও কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশ। নিষিদ্ধ লেগুনা মহাসড়কে চলাচল করায় প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ছয় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৫-২০ জন নিহত ও ৩০-৪০ জন আহত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলী রেজা বলেন, শিমরাইল এলাকাটি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ দেখাশোনা করে থাকে। লোক বলের অভাবে আমরা দেখভাল করতে ঠিকমতো পারি না। তবে খুব শিগগিরই নতুন নিয়োগের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করা হলে মহাসড়কে লেগুনা চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করতে সক্ষম হব।

শিমরাইল মোড়ে দায়িত্বরত নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) মোল্যা তাসলিম হোসেন বলেন, মহাসড়কে নিষিদ্ধ থ্রি হুইলারসহ লেগুনা চালক ও মালিকদের বিরুদ্ধে মামলাসহ বিভিন্নভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তা অব্যাহত থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close