যশোর প্রতিনিধি

  ১৯ এপ্রিল, ২০১৯

পুরোহিতের শিশু ধর্ষণ চেষ্টায় হতবাক এলাকাবাসীহ

যশোরের বিরামপুর গ্রামের এক মন্দিরের ভেতর পুরোহিতের শিশু ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় হতবাক হয়েছেন এলাকাবাসী। ধর্মীয় নেতার এমন আচরণ মেনে নিতে পারছেন না তারা। স্থানীয়রা বলছেন, পুরোহিতের প্রতি মানুষের দীর্ঘদিনের আস্থা ভেঙে গেছে এই একটি ঘটনায়। এলাকার মানুষ এখন বিব্রত ও ক্ষুব্ধ।

প্রায় সাড়ে ৩০০ সনাতন ধর্মাবলম্বীর বাস বিরামপুর গ্রামে। এই গ্রামে পাঁচটি মন্দির রয়েছে। এর একটি ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রম মন্দির। এখানে মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমও আছে। এই মন্দিরের পুরোহিত প্রকাশ ব্যানার্জি। তিনি প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন, এমন অভিযোগে গত মঙ্গলবার তাকে আটক করে পুলিশ, বুধবার তার বিরুদ্ধে মামলা করেন ভিকটিমের মা। এলাকাবাসী এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।

গ্রামের বাসিন্দা অনুপ রায় চৌধুরী বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের মান সম্মান ডুবিয়েছে পুরোহিত। তার কর্মকান্ডে আমরা বিব্রত। তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলেও তাকে আর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্মীয় কাজে ডাকবে না। আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট করেছে। তার কর্মকান্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বিরামপুর-নওয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাপসী রায় বলেন, মেয়েটি আমাদের স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। দুই দিন সে স্কুলে আসছে না। শুনেছি পুরোহিত তার সঙ্গে জঘন্য আচরণ করেছে। যা মুখে আনাও পাপ। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। আর কেউ যেন এমন ঘটনার শিকার না হয়।

শীলা রায় চৌধুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম দাস বলেন, মঙ্গলবার সকালে স্কুলে এসে শুনলাম পুরোহিত শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন। সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ও বিশ্বাসের প্রতীক পুরোহিত। তার দ্বারা এমন জঘন্য ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।

কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) সমীর কুমার সরকার বলেন, শিশুটি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। আসামিকে আটক করা হয়েছে। বতর্মানে তিনি কারাগারে আছেন। বৃহস্পতিবার সকালে যশোর জেনারেল হাসপাতালে শিশুর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

দুই দশক আগে যশোরের বিরামপুরে অবস্থিত ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎসংঘ মন্দিরে পুরোহিত হিসেবে নিয়োগ পান প্রকাশ ব্যানার্জি। তিনি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের কালীপদ ব্যানার্জির ছেলে। সেই সময় বিশিষ্ট সমাজসেবক বিমল রায় চৌধুরী মন্দিরের পাশে দুই শতক জমি পুরোহিত প্রকাশ ব্যানার্জিকে বসবাসের জন্য লিখে দেন। সেখানেই বসবাস করতেন আর মন্দিরের পুরোহিতের কাজ করতেন প্রকাশ। তার দুই সন্তান। বড় মেয়েটির বিয়ে হয়েছে তিন মাস আগে। আর ছেলেটি নবম শ্রেণির ছাত্র।

প্রকাশ ব্যানার্জি আটকের পর তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রকাশ ব্যানার্জির শ্বশুর জানান, জামাইকে পুলিশ আটক করেছে। সে ঘটনায় জড়িত নাকি ফাঁসানো হয়েছে জানি না। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে পুরোহিত প্রকাশ ব্যানার্জি মন্দিরে পূজা অর্চনা করছিলেন। এ সময় শিশুরাও সেখানে উপস্থিত ছিল। এক পর্যায়ে সাড়ে ছয় বছরের ওই শিশুকে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে ভেতরে একটি কক্ষে ডেকে নেন। সেখানে শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন প্রকাশ। শিশুটি চিৎকার করলে ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। ভিকটিমের ঠাকুরমা বলেন, নাতি মন্দিরে ছিল। আমরা তো দেখিনি। ঘটনা জানাজানি হলে পুলিশ আটক করেছে। এখন আমাদের থানা-কোর্ট করতে হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close