তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম

  ১২ এপ্রিল, ২০১৯

কর্ণফুলী নদীকে যেকোনো মূল্যে দূষণমুক্ত রাখার অঙ্গীকার

আগামী ৩০ দিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে আদালতকে অবহিত করার জন্য বন্দর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ফলে জেলা প্রশাসন ও বন্দরের মধ্যে সৃষ্ট জটিলতা অবসান হতে যাচ্ছে। এতে এই নদীর পাড় দখলমুক্ত করার ব্যাপারে বিরাজমান বাধা দূর হবে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে কর্নফুলী নদীকে দূষণমুক্ত ও উন্মুক্ত রাখা রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে। এই কাজ একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।

গত ৪ ফেরুয়ারি কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রশাসন। এ সময় পাঁচ দিনে সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত ২৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এতে উদ্ধার করা হয় ১০ একর জায়গা। তারপর হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় উচ্ছেদ অভিযান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল অর্থের অভাবে উচ্ছেদ অভিযান করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ দেখা দেয়। এদিকে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ার নেপথ্যে দেখা যায়, চাক্তাই-রাজাখালী খালের মোহনায় বন্দর কর্তৃৃপক্ষ থেকে ইজারা নিয়ে নির্মাণ করা মৎস্য অবতরণকেন্দ্র উচ্ছেদ নিয়ে জেলা প্রশাসক ও বন্দরের মধ্যে সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্ব। একই সঙ্গে লালদিয়ারচর এলাকা, বন্দরসংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে সৃষ্টি হয় টানাপোড়েন। বন্দর সংশ্লিষ্ট এলাকায় উচ্ছেদ করে ঘাট-জেটি ও টার্মিনাল নির্মাণ নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। ফলে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, কর্ণফুলী নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটা অবেদন করেছিলাম। আগের রায়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ আরো পাঁচজনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন যে জায়গাগুলো অবৈধ স্থাপনা আছে, সেগুলো মূলত বন্দরের। এজন্য আমরা বন্দর চেয়ারম্যানকে একটি নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রতিবেদন দাখিলের আবেদন জানিয়ে শুনানি করি। আদালত শুনানি শেষে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তীরে যেসব অবৈধ স্থাপনা আছে সেগুলো সার্ভে রিপোর্ট ও আরএস খতিয়ান অনুসারে উচ্ছেদ করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন।

জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ দখলসংক্রান্ত খবর ও প্রতিবেদন ২০১০ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পরে প্রকাশিত ওইসব খবর ও প্রতিবেদন যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করে। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট আদালত কর্ণফুলী নদীর তীরে থাকা ২ হাজার ১১২টি অবৈধ স্থাপনা সরানোর পাশাপাশি রায়ে ১১ দফা নির্দেশনা দেন।

রায়ে বলা হয়, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর সাত দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসক অবৈধ স্থাপনা সরাতে স্থানীয় দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। বিজ্ঞপ্তি জারির ৯০ দিনের মধ্যে অবৈধ দখলদাররা তাদের স্থাপনা অপসারণ করবেন। যদি তা না করেন, তাহলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদফতরের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসক অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করবেন। এরপর হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। এরপর ওই রায়ের অনুলিপি বিবাদীদের কাছে পাঠানো হলেও সংশ্লিষ্টরা তা বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় রায় বাস্তবায়নের বিষয়ে গত বছর ২৫ জুন সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিস পাঠানো হয়। তবে বিবাদীদের কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে তাদের আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়। সে আবেদনের শুনানি শেষে গত বছর ৩ জুলাই আদালত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে কর্ণফুলী নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বাস্তবায়ন না করায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন।

আদালতের আদেশে চট্টগ্রামের মেয়র ছাড়াও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

উচ্চ আদালতের এ আদেশের পর আড়াই বছরেরও বেশি সময় আগের রায় বাস্তবায়নে চলতি বছরের ৪ ফেরুয়ারি কর্ণফুলী নদী পাড়ের ২ হাজার ১১২টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। উদ্ধার হয় ১০ একর জায়গা। কিন্তু হঠাৎই উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত রোববার আবার এ আবেদন করে রিটকারী পক্ষ। অন্যদিকে পরিবেশবাদী আটটি সংগঠন মানববন্ধন করে উচ্ছেদ অভিযান পুনরায় শুরু করার জন্য এক সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। কর্ণফুলী নদীর উচ্ছেদ করে আগের অবস্থায় ফিরে আনার দাবিও জোরালো হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, কর্নফুলী হবে দখলমুক্ত। প্রথম দফায় যেগুলো উচ্ছেদ হয়েছে সেগুলো আমরা লাল সীমানা দিয়েছে। তিনি বলেন, কর্ণফুলীকে দখলমুক্ত করে উন্মুক্ত রাখা এবং দূষণরোধ করাটা কঠিন। তবে এই নদীকে যে কোনো মূল্যে উন্মুক্ত রাখতে হবে। তিনি আরো জানান, এই নদীর জমি আর কেউ দখল করতে পারবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close