প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৯ এপ্রিল, ২০১৯

বুধ গ্রহের রহস্য উন্মোচনে বহুমুখী নতুন অভিযান

সূর্যের সবচেয়ে কাছের ও সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহ হিসেবে মার্কারি বা বুধ গ্রহ রহস্যে ভরা। এক বহুমুখী অভিযানের আওতায় ২০২৫ সালে একাধিক যান ও যন্ত্রপাতি সেইসব রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালাবে। মহাকাশযানে ১৬টি হাইটেক যন্ত্র রয়েছে। বার্লিনের এক গবেষকদল তার মধ্যে একটি তৈরি করেছে। তার কাজ থার্মাল বিকিরণ মাপা। বুধ গ্রহের উপরিভাগ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা আরো তথ্য সংগ্রহ করতে চান। ডয়েচে ভেলে গত সোমবার এ খবর জানায়।

উচ্চ তাপমাত্রায় পৃথিবীর বুকে বিভিন্ন ধরনের পাথরের কী দশা হয়, সবার আগে বিজ্ঞানীরা তা জানার চেষ্টা করেছেন। বুধ গ্রহে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে তখন সেই ফলাফলের তুলনা করা যাবে। চরম উত্তাপ সত্যি বড় চ্যালেঞ্জ। জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের ড. ইয়োর্ন হেলব্যার্ট বলেন, ‘বুধ গ্রহের যে গোলার্ধ সূর্যের দিকে মুখ করে রয়েছে, সেখানে তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি এবং আমরা তার খুব কাছাকাছি রয়েছি। অর্থাৎ আমাদের মহাকাশযান এক টোস্টারের মধ্য দিয়ে যাবে। সেটিকে বুধ গ্রহ এবং সূর্যের উত্তাপ সামলাতে হবে। অনেকটা সময় জুড়ে এই যানের সহ্যশক্তি নিশ্চিত করার উপযুক্ত ডিজাইন ও যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ ছিল এক বড় চ্যালেঞ্জ।’

আমাদের সৌরজগতের অন্য গ্রহের মতো বুধ গ্রহও বিশাল, আদিম মেঘ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। সেটা ছিল প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগের ঘটনা। সূর্যের প্রাথমিক অবস্থায় তাকে ঘিরে গ্যাস ও ধুলিকণার ঘূর্ণায়মান মেঘ ছিল। প্রথমদিকে ক্ষুদ্র পদার্থগুলো পরস্পরের সঙ্গে হালকাভাবে যুক্ত হতে থাকে। লাখ লাখ বছর ধরে সেগুলোর আকার বড় হতে থাকে। তারপর কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ ধুলিকণার পুঞ্জগুলোর মধ্যে সংঘাত ঘটতে থাকে। উত্তাপ বাড়ার ফলে সেগুলো আরো নিবিড় হতে শুরু করে। ফলে আরো উপাদান সেগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়। ধীরে ধীরে গরম গোলাকার আয়তন সৃষ্টি হয় যা আজকের গ্রহগুলোর আদি রূপ।

সূর্য ও তার জোরালো বিকিরণ থেকে দূরত্ব যত বেশি, বরফের অস্তিত্ব সেই হারে বাড়তে থাকে। পানি, মিথেন বা অন্য কোনো তরল গ্যাস দিয়ে তৈরি সেই বরফ। এভাবেই শনি গ্রহের মতো বিশালাকার গ্যাসভিত্তিক গ্রহ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে সূর্যের কাছাকাছি শক্ত আকারের গ্রহগুলো সৃষ্টি হতে থাকে অর্থাৎ মঙ্গল, পৃথিবী, শুক্র ও বুধ গ্রহ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাভিত্তিক যান ‘মেসেঞ্জার’ বুধ গ্রহের ভূ-পৃষ্ঠ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাঠিয়েছে। দেখা গেছে, সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহের ভূ-পৃষ্ঠ অন্য পাথুরে গ্রহগুলোর তুলনায় আলাদা। সেখানে পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহের তুলনায় অনেক বেশি লোহা রয়েছে।

বুধ গ্রহে নতুন অভিযানের মাধ্যমে বিস্ময়কর এই গ্রহের উৎপত্তি রহস্য সমাধানের আশা করা হচ্ছে। সেই প্রশ্নের উত্তর এমন জগতের ওপর আলোকপাত করতে পারে, যা আমাদের নাগালের বাইরে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘বেপি কলম্বো’ নামের যৌথ অভিযানের বুধ গ্রহে পৌঁছানোর কথা। তার মধ্যে একটি ইউরোপীয় স্যাটেলাইট গ্রহের ভূ-পৃষ্ঠের মানচিত্র তৈরি করবে। জাপানের একটি যান আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে গভীর ও রহস্যময় গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র পরীক্ষা করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close