প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২১ মার্চ, ২০১৯

সাবানের ফেনার ঘাত-প্রতিঘাতে পেলেন অঙ্কের সেরা সম্মান

এক ‘ধন্যি মেয়ে’র গল্প! যিনি অঙ্কের যাবতীয় জটিলতাকে হঠিয়ে দিতে পেরেছিলেন অনায়াসেই। তিনি ক্যারেন কেসকুল্লা উহ্লেনবেক। এই ধন্যি মেয়েই পেলেন এবার অঙ্কের ‘নোবেল পুরস্কার’ অ্যাবেল প্রাইজ। জ্যামিতিতে ‘ভানুমতীর খেল’ দেখিয়ে। এই প্রথম কোনো মহিলাকে দেওয়া হলো অঙ্কের সর্বোচ্চ পুরস্কার। সেরা আন্তর্জাতিক সম্মান। নরওয়ের একাডেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড লেটার্স গত মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে ক্যারেনের নাম। সাবানের ফেনার যে বৃত্তবৎ আকার এবং এর জ্যামিতিক পৃষ্ঠটানÑ এর সঙ্গে পাশের একাটা ফেনার যে আঘাত এবং এর ফলে ফেনাটির টিকে থাকার জন্য যে আকার-বদল ও নতুনরূপ নেওয়া তার জ্যামিতিক মডেল ব্যবহার করে এই গণিতজ্ঞ কণা পদার্থবিদ্যা, জ্যামিতি এবং পরিবর্তনশীল চলকরাশির মধ্যে উচ্চস্তরের গাণিতিক স্ট্যান্ডার মডেল সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন।

জানা গেছে, ‘পদার্থবিজ্ঞান, গণিত শাস্ত্র ও বিশ্লেষণ (অ্যানালিসিস) এই তিনটি শাখার মধ্যে সেতু গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার সারা জীবনের অবদানের জন্য এ বার দেওয়া হয়েছে অ্যাবেল প্রাইজ। এই পুরস্কারের অর্থ মূল্য ৬০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪৮ কোটি ৩৯ লাখ ৫ হাজার ৩৪০ টাকা।

জ্যামিতিতে কীভাবে ‘ভানুমতীর খেল’ দেখিয়েছেন ক্যারেন? সামান্য একটা সাবানের ফেনা নিয়েই ছিল ক্যারেনের কায়দা-কৌশল। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ আর উচ্চতা আর তার সঙ্গে সময়কে যোগ করলে হয় চার মাত্রার (ডাইমেনশন) ব্রহ্মা-। কিন্তু তার বাইরেও ব্রহ্মা-ের আরো মাত্রা রয়েছে। যাকে বলা হয় বহুমাত্রিক (মাল্টি-ডাইমেনশনাল) ব্রহ্মা-। চার মাত্রার ব্রহ্মা-ে সাবানের ফেনার চেহারাটা কেমন হয়, দেখতে কেমন লাগে সেই ফেনাকে, তা তো আমরা জানি। কিন্তু সেই সাবানের ফেনার চেহারাটা কেমন হবে বহুমাত্রিক ব্রহ্মা-ে, সেটা আগেভাগে বলে দেওয়ার রাস্তাটা ক্যারেনই প্রথম দেখিয়েছিলেন।

সমতলে সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা দুটি বিন্দুকে যোগ করা হয় একটি সরলরেখা দিয়ে। আর সেটা যদি পৃথিবীর ওপর কোনো বিন্দু হয়, তা হলে সেই সরলরেখাটা আর সরলরেখা থাকবে না। হয়ে যাবে একটা বৃত্তের ব্যাস। এটা হয় দ্বিমাত্রিক (টু ডাইমেনশনাল) ক্ষেত্রে। আর সাবানের ফেনা বা বুদবুদের ক্ষেত্রে সেটা ত্রিমাত্রিক (থ্রি ডাইমেনশনাল) হয়ে যায়। আর তখনই দেখা দেয় নানা রকমের জটিলতা। মাত্রাটা যত বাড়ে... চার, পাঁচ বা ছয়, ততই বেড়ে যায় জটিলতা। ক্যারেনের কৃতিত্ব, তিনিই সেই জটিলতার জাল কেটেছিলেন। অনায়াসে।

পৃষ্ঠটানের (সারফেস টেনশন) বলকে যতটা সম্ভব কম করতে সাবানের ফেনা বা বুদবুদ একটা গোলকের চেহারা নেয়। তাতে একটি নির্দিষ্ট আয়তনে সবচেয়ে কম জায়গা নিতে পারে সাবানের ফেনাটি, তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে। কিন্তু সেই সাবানের ফেনার গায়ে যখন চার পাশ থেকে আরো কয়েকটি সাবানের ফেনা এসে ধাক্কা মারে, তখনই ঘটে বিপত্তি। ধাক্কা খেয়ে প্রথম সাবানের ফেনাটির চেহারায় ব্যাপক অদলবদল ঘটে যায়। তার তখন কার্যত দিশাহারা অবস্থা হয়। হাঁসফাঁস করতে করতে তখনো কিন্তু সে তার অস্তিত্বের জন্য সামান্য জায়গাটুকুকেই ধরে রাখার চেষ্টা করে। ক্যারেন এটাই দেখিয়েছিলেন। তার দেখানো পথ ধরেই পরে কণা পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ভিত গড়ে ওঠে। আর এভাবেই জ্যামিতি, বিশ্লেষণ আর কণা পদার্থবিজ্ঞানের মধ্যে গাণিতিক সেতু স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close