তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৯ মার্চ, ২০১৯

কর্ণফুলীতে চীনা ড্রেজার : দিনে মাটি কাটবে ৫ হাজার ঘনমিটার

অবশেষে কর্ণফুলীতে নেমেছে বিশাল ড্রেজার। ঘণ্টায় ৫ হাজার ঘনমিটার মাটি তোলার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেজার এখন কর্ণফুলী নদীতে। চীন থেকে আনা বিশেষ এই ড্রেজার দিয়ে চলবে ড্রেজিং কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে এই ড্রেজার আসার কথা থাকলেও গত সপ্তাহে তা কর্ণফুলীতে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে ড্রেজারটি সদরঘাট লাইটার জেটির বিপরীত পাশে অবস্থান করছে। এই ড্রেজার দিয়ে কর্ণফুলী নদীর ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা হবে। গত শনিবার সম্পন্ন হয়েছে ড্রেজারের ট্রায়াল পর্ব। এই ড্রেজারের কাজ শুরু হলে বন্দরে জাহাজ চলাচলে গতি আসবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নানা জটিলতা কাটিয়ে এখন কর্ণফুলী নদীতে নামানো হয়েছে বিশাল এই ড্রেজার। আইনি জটিলতা কাটিয়ে ওঠার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ প্রকল্প নামে নতুন করে প্রকল্পের কাজ শুরু করে। বুয়েটের একটি সমীক্ষা রিপোর্টের ভিত্তিতে সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৫০ মিটার চওড়া এলাকায় ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়। নৌবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্প এলাকা থেকে ৪২ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালি তোলার মাধ্যমে ড্রেজিং সম্পন্ন করা হবে। ড্রেজিং থেকে উত্তোলিত বালি ও মাটি বন্দরের হামিদচর এলাকা ভরাট করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং প্রকল্পের পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ড্রেজার মেশিনে কাজ করতে গিয়ে দেখা যায়, সাগরের তলদেশে পলিথিনের স্তর তৈরি হয়েছে। এর কারণে ড্রেজার মেশিনের দাঁতের সঙ্গে পলিথিন জড়িয়ে যাচ্ছে। মেশিন ওপরে তুলে ওই পলিথিন ম্যানুয়েলি খুলে আবারো মেশিন চালাতে হয়। এতে করে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। তাই একটি বড় ড্রেজারের খুব প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, গত ৪ মার্চ বড় ড্রেজারটি কর্ণফুলী নদীতে নামানো হয়েছে। গত রোববার এই ড্রেজারের প্রথম ট্রায়াল দেয়া হয়। ট্রায়াল ভালো মতো সম্পন্ন হয়েছে। এতে করে বড় ড্রেজারের কাটারের দাঁতে সব কিছু কাটা সম্ভব হবে। সাইফপাওয়ার টেকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ড্রেজিং প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে কর্ণফুলীতে ভেড়া ড্রেজারটি সেটিং করতে কিছু দিন সময় লাগবে। সেই হিসাবে আগামী মাসের শুরুতে হয়তো তা কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এই ড্রেজারের সামনে যা-ই পড়–ক না কেন কোনো সমস্যা হবে না। সব গুঁড়া করে তুলে নিয়ে আসবে। এটি অনেক শক্তিশালী ড্রেজার।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ জানান, চীন থেকে বিশাল একটি ড্রেজার আনা হয়েছে। এই ড্রেজারে গতিশীলতা বাড়বে বন্দরের। তিনি বলেন, এত দিন তিনটি ড্রেজার কাজ করত, আজ থেকে চারটি ড্রেজার কাজ করবে।

এক বছর মেয়াদের কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং কার্যক্রম গত জুলাইতে শুরু হয়ে আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর কাজ শুরু হয় সেপ্টেম্বরে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে ডিপিএম (সরাসরি সংগ্রহ) পদ্ধতিতে এই কাজটি নেয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নৌ কল্যাণ সংস্থা। নৌ কল্যাণ সংস্থা থেকে ২৪২ কোটি টাকায় কাজটি নিয়েছে সাইফপাওয়ার টেকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়ারিং। আর কাজটি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য পৃথক তিনজন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত ৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২৫০ মিটার চওড়া এলাকাটি সমুদ্র সমতল থেকে ৪ মিটার গভীর করতে এরই মধ্যে তিনটি ড্রেজার দিয়ে কাজ শুরু করেছে ই-ইঞ্জিনিয়ারিং।

সদরঘাট থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত ড্রেজিং করবে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং। কর্ণফুলী সেতু থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত ড্রেজিং করবে ই-ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রকল্পের আওতাধীন ৮টি খালের মুখের মাটি অপসারণের জন্য ওয়েস্টার্ন মেরিনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান টি এস ট্রেডার্স এবং সদরঘাট লাইটার জেটির মুখের মাটি অপসারণের কাজ করবে অমিতা ট্রেডার্স।

কর্ণফুলী নদীর নাব্য ফেরাতে ২৫৮ কোটি টাকায় ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ প্রকল্প নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সমীক্ষা অনুযায়ী ৪৩ লাখ ঘনমিটার মাটি উত্তোলনের কথা রয়েছে অনুমোদিত প্রকল্প অনুযায়ী।

উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের আগে মালয়েশিয়ান মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশনকে ২২৯ কোটি টাকায় কর্ণফুলী নদীর নাব্য বাড়াতে ক্যাপিটেল ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ দিয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এ প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছিল। স্থানীয়ভাবে কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিসেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে তারা নিয়োগ দিয়েছিল।

২০১১ সালের জুনে শুরু হওয়া এই কাজ ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ে পুরো কাজ শেষ না হওয়ায় ২০১৪ সালের মাঝামাঝি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে এর আগেই ২০১৩ সালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নিজেরাই কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে ড্রেজিং কাজে ধীরগতি বিরাজ করছিল। এরপর বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে ‘কর্ণফুলীর নাব্য সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ নির্ধারণ করে। আর তা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নৌ কল্যাণ সংস্থাকে দেয়া হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close