জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট

  ১৫ মার্চ, ২০১৯

লালমনিরহাটে চালু হচ্ছে বিমানবন্দর ও কারখানা

অবশেষে ফের চালু হচ্ছে লালমনিরহাটের পরিত্যক্ত হওয়া বিমানবন্দর এবং প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বিমান মেরামতের কারখানা। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই জরুরি ভিত্তিতে বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ।

জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পরিত্যক্ত হওয়া দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম লালমনিরহাটে প্রথম বিমান মেরামতের কারখানা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ঘোষণা বাস্তবায়নে দুই দিন ধরে বিমানবাহিনীর প্রকৌশলীরা বন্দরের বিভিন্ন বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন এবং সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। এরই অংশ হিসেবে বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত গত বুধবার সরেজমিন একটি হেলিকপ্টারে লালমনিরহাট বিমানবন্দরে আসেন। তাদের প্রকৌশলীদের সঙ্গে নিয়ে বিমানবাহিনীর প্রধান হেলিকপ্টারে পুরো বিমানবন্দর ঘুরে দেখেন। এরপর একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে দুপুর ২টায় ৪৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে লালমনিরহাট ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও সিভিল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিমানবন্দরে সভা করেন বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল। এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে পরিত্যক্ত বিমানবন্দরে প্রথমে বিমান মেরামতের কারখানা হিসেবে চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারখানা চালু হলেই যাত্রী পরিবহনের সেবা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আরিফ সভার বরাদ দিয়ে আরো জানান, লালমনিরহাট বিমানবন্দরে চার কিলোমিটার রানওয়ে, বিশাল টারমাক, হ্যাঙ্গার, ট্যাক্সিয়েসহ সব অবকাঠানো একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরের আদলেই রয়েছে। প্রাইভেট এয়ার লাইনসগুলো চাইলে এখানেই উড়োজাহাজ অবতরণ ও উড্ডয়ন করাতে পারে। বর্তমানের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় যাত্রী পরিবহনে সংকট হবে না বলেও সভায় জানানো হয়।

জেলা প্রশাসক আরো জানান, সীমানা প্রাচীরে বিমানবন্দরে জমি ব্যবহারকারী কৃষকদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং খুশি করে কাজ শুরু করা হবে। এর আগে এ বিমানবন্দরটির সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গত মঙ্গলবার দিনভর যশোর বিমানবাহিনীর একটি প্রকৌশলী টিমের দুটি বিমান সফলভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করে।

জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ও হারাটি ইউনিয়নের ১ হাজার ১৬৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে ১৯৩১ সালে এ বিমান ঘাঁটি তৈরি করেন তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনী বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। তবে ১৯৫৮ সালে সীমিত পরিসরে বিমান সার্ভিস চালু হলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

স্বাধীনতার পর এ বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর হেডকোয়ার্টার করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা পরিত্যক্ত থেকে যায়। তবে ১৯৮৩ সালে ফ্লাইট চালু করা হলেও সাত দিনের মধ্যে যাত্রীর অভাবে তা বন্ধ হয়ে পড়ে। ১৯৮৩ সাল থেকে এখানে কৃষি প্রকল্প গড়ে তোলে বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষ।

এদিকে কয়েক যুগের পরিত্যক্ত লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি নতুন করে চালুর খবরে জেলাবাসীর মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারত, ভুটান ও নেপালের যাত্রীরা সহজেই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করতে পারবেন বলে জানা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রতিদিন স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close