বদরুল আলম মজুমদার, নাঈমুল হাসান ও রাজীবুল হাসান, ইজতেমা ময়দান থেকে

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা

আত্মশুদ্ধি, বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কামনায় টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লির আকুতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে দিল্লির মাওলানা সাদপন্থিদের আখেরি মোনাজাত।

গতকাল বেলা ১১টা ৪৬ মিনিটে শুরু হওয়া আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন দিল্লি মারকাজের মাওলানা শামীম। ১৬ মিনিটব্যাপী চলা এ মোনাজাতে দেশের কল্যাণ, দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি, মুসলিম উম্মাহর সুদৃঢ় ঐক্য কামনা করা হয়। আখেরি এ মোনাজাতের মাধ্যমেই শেষ হলো ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ও শেষ ধাপ।

গতকাল মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার আগে থেকেই টঙ্গীর তুরাগ পাড় মুখরিত হয়ে উঠে মুসল্লিদের আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে তুরাগ মাঠের চারদিক থেকে লাখ লাখ মুসল্লি পায়ে হেঁটে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমাস্থলে জমায়েত হতে থাকেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইজতেমা মাঠের পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এই পথটুকু পায়ে হেঁটেই মাঠের আশপাশে মোনাজাতের জন্য উপস্থিত হতে থাকেন তারা। সকাল ১০টার কাছাকাছি সময়ে ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এ সময় মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলিগলিতে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এছাড়া কামারপাড়া বাইপাস সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও বিভিন্ন ভবনের ছাদেও অবস্থান নেন মুসল্লিরা। এর আগে সকাল ১০টায় উর্দুতে হেদায়েতি বয়ান শুরু করেন দিল্লির মাওলানা শামিম, আর এ বয়ানের বাংলা তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আশরাফ আলী।

গণমাধ্যমে মোনাজাতে অংশগ্রহণ : প্রতিবারের মতো এবারও মুসল্লিরা গণমাধ্যমের সুবাদে মোনাজাতে অংশ নেন। স্যাটেলাইট টেলিভিশন ও এফএম রেডিও সরাসরি সম্প্রচারের কারণে দেশ-বিদেশের আরো লাখ লাখ মানুষ একইসঙ্গে মোনাজাতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান।

আশপাশের সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা : গতকালের আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরা, আশুলিয়াসহ আশপাশের এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপণিবিতান, অফিসসহ সব কিছু দ্বিতীয় বারের মতো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

সাদপন্থিদের মাঠ হস্তান্তর : গত দুই বছরের নির্দেশনা অনুযায়ী মোনাজাত শেষে সাদ অনুসারীরা ইজতেমা মাঠ যথারীতি ত্যাগ করবেন এবং মাঠ বুঝিয়ে দেবেন প্রশাসনের কাছে। পরে প্রশাসন ইজতেমা আয়োজক কমিটির কাছে মালামাল সংরক্ষণের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন।

মোনাজাতে যা বলা হয় : উর্দুভাষায় অনুষ্ঠিত মোনাজাতে বলা হয়, হে আল্লাহ জিন্দেগিতে আমাদের যত পাপ আছে তার সব মাফ করে দেন। সারা বিশ্বের মুসলমানদের মাঝে আপনি শান্তির ব্যবস্থা করে দেন। আমাদের ইমানকে আরো মজবুত করে দেন। আমাদের আপনার বান্দা হিসেবে কবুল করে নেন। জিন্দেগি থেকে নফরমানি দূর করে দেন। দ্বীনের ওপর আমাদের চলা সহজ করে দেন। আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে আমাদের হেফাজত করেন। নবীওয়ালা জিন্দেগি আমাদের নসিব করেন। দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে দেন, আমিন।

ইজতেমায় সাত মুসল্লির মৃত্যু : এবারের বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের মধ্যে শেষ দিন পর্যন্ত সাতজন নিহত হয়েছেন। সোমবার রাতে দ্বিতীয় ধাপে বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া গ্রামের ইসমাইল হোসেনসহ (৬৮) দুই-পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় মোট সাত মুসল্লির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অন্যরা হলেন ঢাকা জেলার কদমতলা এলাকার আবুল হোসেন (৫৫) ও রাজবাড়ীর বালিকান্দি থানার আবদুল আওয়াল (৬৫), কুষ্টিয়া জেলার ৬৫ বছর বয়সি মো. সিরাজুল ইসলাম, ফেনী জেলার শফিকুর রহমান (৫৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজ্জাক মিয়া (৪০) ও নাটোর জেলার মোহাম্মদ আলীর (৬০) মৃত্যু হয়।

পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি : ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য অস্থায়ীভাবে ময়দানের আশপাশের বাজারগুলো জমে উঠেছে। তবে সব পণ্যের দাম কয়েক গুণ বেশি হাঁকছেন দোকানিরা। এতে কিছুটা বিপাকে পড়তে হচ্ছে মুসল্লিদের।

বিদেশি মুসল্লি : দ্বিতীয় ধাপের বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে শতাধিক দেশের বিদেশি মুসল্লি অংশ নেন। ইজতেমা আয়োজক কমিটির একাংশের মুরব্বি মাওলানা নূরুজ্জামান জানান, সোমবার বিকাল পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত ৩০টি দেশের প্রায় ৩৩১ জন বিদেশি মেহমান আসেন। যা অন্য যে কোনোবারের থেকে একেবারেই কম বলে জানায় আয়োজক কমিটি।

যৌতুকবিহীন বিয়ে : এর আগের বিশ্ব ইজতেমায় যৌতুকবিহীন বিয়ের প্রচলন থাকলেও গত দুই বছর ধরে ইজতেমায় কোনো যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়নি।

মোনাজাতে পর্যাপ্ত মাইক ব্যবস্থা : দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত প্রচারের জন্য গণযোগাযোগ অধিদফতর ও গাজীপুর জেলা তথ্য অফিস বিশেষ ব্যবস্থা নেয়। গণযোগাযোগ অধিদফতর ইজতেমা ময়দান থেকে আবদুল্লাহপুর ও বিমানবন্দর রোড পর্যন্ত এবং গাজীপুর জেলা তথ্য অফিস ইজতেমা ময়দান থেকে চেরাগআলী, টঙ্গী রেলস্টেশন, স্টেশন রোড থেকে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু ও আশপাশের অলিগলিতে পর্যাপ্ত মাইক সংযোগ দেওয়া হয়।

ইজতেমায় নারীদের অংশগ্রহণ : ইজতেমায় নারীদের অংশ নেওয়ার কোনো বিধান না থাকলেও প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সি কয়েক হাজার নারী আগের দিন রাত থেকে ইজতেমা ময়দানের আশপাশে, বিভিন্ন মিলকারখানা, বাসাবাড়িতে ও বিভিন্ন দালানের ছাদে বসে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা যায়।

ইজতেমার প্রথম দুই দিন ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি তাবলিগের মুরব্বি মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়েরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছে। পরবর্তী তিন দিন ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছে। ২০২০ সালের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা প্রথম ধাপ আগামী ১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি ও দ্বিতীয় ধাপ ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরব্বিরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close