বরিশাল প্রতিনিধি

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

শেবাচিমে ডাস্টবিনে ৩৩ শিশুর লাশ উদ্ধার

গাইনির প্রধানসহ বরখাস্ত ৩ : মামলা

বরিশালে শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের ডাস্টবিন থেকে ৩৩ নবজাতকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপার শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন খোদ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও খবরটি সোমবার রাতেই ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. খুরশিদ জাহান এবং ওই বিভাগের ওয়ার্ডের ইনচার্জ নার্স জোসনা বেগমকে সাময়িক বরখাস্তের আবেদন স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে একই ঘটনায় এই ঘটনায় সিটি করপোরেশনের মো. মিজান নামে এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম বাকির হোসেন এসব কথা জানান। তিনি বলেন, সোমবার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের ডাস্টবিন থেকে ৩৩ নবজাতকের লাশ ও মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ জরুরি বৈঠকে বসে। বৈঠক চলে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত।

তিনি আরো জানান, বৈঠকে শেবাচিম হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. জহিরুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ডা. ফয়জুল বাসার এবং ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. ইমতিয়াজ উদ্দিন। বৈঠকে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মাকসুমুল হক, উপপরিচালক আবদুর রাজ্জাকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ডা. এস এম বাকির হোসেন বলেন, কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বৈঠক শেষে ডা. খুরশিদ জাহান এবং ওই বিভাগের ওয়ার্ড ইনচার্জ নার্স জোসনা বেগমকে সাময়িক রখাস্তের আবেদন স্বাস্থ্য অধিদফতরে ফ্যাক্সযোগে পাঠানো হয়েছে। আবেদনটি অধিদফতর থেকে মন্ত্রণালয়ে যাবে। এরপরই তাদের বরখাস্ত আদেশ কার্যকর হবে।

এদিকে সোমবার রাতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম বাকির হোসেনকে ফোনে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

জানা গেছে, ডাস্টবিন থেকে পাওয়া ৩১ নবজাতকের লাশ ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অধিকাংশই ছিল বোতলজাত। রাত পৌনে ১০টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশগুলোর সুরতহাল শুরু করে। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানায়, হাসপাতালে জন্ম নেওয়া অপরিণত শিশুর লাশ কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য মেডিসিনের মাধ্যমে বোতলে ভরে রাখা হত। ১৫ থেকে ২০ বছর আগে অপরিণত এসব শিশুর লাশ গাইনি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত ছিল। তাছাড়া বোতলে থাকা মেডিসিনের মেয়াদও শেষপর্যায়ে থাকায় তা মাটিচাপা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ওয়ার্ড বয়রা কোনো কিছু না বলে হাসপাতালের পেছনে ডাস্টবিনে স্তূপ করে ফেলে রাখে। পরবর্তী সময়ে পথশিশুরা সেখান থেকে অপরিণত শিশুর লাশ ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করে নিয়ে যায়। সোমবার রাত ৮টার দিকে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের লোকজন হাসপাতালের ময়লা অপসারণ করতে গেলে জরুরি বিভাগসংলগ্ন পানির ট্যাঙ্কের নিচ থেকে অপরিণত শিশু এবং মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close