শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

শাহজাদপুরে দুই যুবককে হত্যা

দুই মাস পেরোল খুনিরা এখনো অধরা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নরসুন্দর সুমন চন্দ্র শীল (৩০) হত্যার আড়াই মাস ও সুতার রং শ্রমিক এলাহী শেখ হত্যার দুই মাস পূর্ণ হয়েছে। পুলিশ এখনো এ হত্যার কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। তারা এখনও তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি। ফলে এ দুই নিরীহ যুবকের পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা। তারা সুবিচারের আশায় ঘুরছে দ্বারে দ্বারে। অপরদিকে এই দুই খুনের ব্যাপারে তদন্তে পুলিশের কাজে অগ্রগতি না থাকায় ধামাচাপা পড়ার উমক্রম হয়েছে মামলার অগ্রগতি। এ কারণে হত্যাকারীরা খুব সহজেই পার পেয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কায় আছেন স্বজন হারানোরা। এমন হতাশার কথাই জানিয়েছেন দুই নিহতের পরিবার। তবে পুলিশ আশার বাণী শুনিছে। বলেছে এই দুই হত্যাকান্ডে জড়িতরা খুব তাড়াতাড়িই ধরা পড়বে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মৃত নিমাই চন্দ্র শীলের ছেলে সুমন চন্দ্র শীল পেশায় নরসুন্দর। মৃদুভাষী সহজ-সরল স্বভাবের সুমন ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর দুপুরে খুকনি ঝাউতলা বাজারে তার বড়ভাই পরিমল চন্দ্র শীলের সেলুনের দোকান থেকে কাজ শেষে দুপুরে ভাত খাওয়ার জন্য বাঁশবাড়িয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। বাঁশড়িয়া খেয়াঘাট এলাকায় পৌঁছালে কে বা কাহারা তাকে খেয়াঘাটের পাড়ে নির্জন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়।

এছাড়া সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ বানিয়াগাতি গ্রামের শামছুল শেখের ছেলে সুতা রং শ্রমিক এলাহী শেখকে ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরদিন ভোরে বেলতৈল ইউনিয়নের আইগবেড়া ও ভেন্নাগাছি গ্রামের মাঝের একটি জমিতে তার গলাকাটা লাশ মিলে। প্রথম থেকেই এলাহী হত্যা মামলার তদন্ত করছে সিরাজগঞ্জ পিবিআই। অপরদিকে সুমন শীল হত্যা মামলার তদন্ত করছে শাহজাদপুর থানা পুলিশ। এ দুটি হত্যার প্রায় আড়াই মাস পর হতে চলেছে। অথচ পুলিশ এখনও এ দুটি হত্যা মামলার কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি। ফলে সুমন শীল হত্যা মামলার বাদী নিহতর ভাই পরিমল চন্দ্র শীল হতাশ হয়ে মামলাটির তদন্ত সিরাজগঞ্জ ডিবিতে স্থানান্তরের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। আগামী ৩ মার্চ এ আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। বাদী পরিমল চন্দ্র শীল জানান, হত্যাকান্ডের আড়াই মাসের বেশি হলেও এ মামলার তদন্তে অগ্রগতি দেখছি না। ফলে আমি ও আমার পরিবার হতাশ হয়ে পড়েছি। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহভাজন কয়েকজন আসামির নাম পুলিশকে জানিয়েছি। তারা হত্যাকান্ডের পর থেকেই বাড়িঘর ফেলে আত্মগোপনে রয়েছে। পুলিশ তাদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে পুলিশের ওপর আমরা আর আস্থা রাখতে পারছি না। তাই নিরুপায় হয়েই মামলা ডিবিতে স্থানান্তরের আবেদন করেছি। এদিকে নিহত এলাহীর স্ত্রী তাছলিমা বেগম, ফুপু লাইলি বেগম, মা বুলবুলি খাতুন, বাবা শামছুল শেখ ও বোন রিনা খাতুন জানান, হত্যাস্থল থেকে পুলিশ একটি চিরকুট পেয়েছে। পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আমরা সন্দেহভাজন ৮ থেকে ১০ জনের নাম ঠিকানা দিয়েছি। তারপরও পুলিশ খুনিদের ধরতে পারছে না। ফলে আমরা সুবিচার পাব কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। অপরদিকে মামলার অগ্রগতি না থাকায় আমরা চরমভাবে হতাশ হয়ে পরেছি। এ ব্যাপারে আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খাজা গোলাম কিবরিয়া এ ব্যাপারে বলেন, পুলিশ কাজ করছে খুনিদের অবস্থান শনাক্ত করতে। শিগগিরই এ হত্যাকান্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে পাব।

এ দুটি হত্যাকান্ড সম্পর্কে সিরাজগঞ্জ পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর রওশন আলী জানান, তদন্ত চলছে। এখনও তেমন কোনে আগ্রগতি হয়নি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যেই ঘাতকদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close