সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফার মাথা গোঁজার ঠাঁই কি হবে না!

স্বাধীনতার ৪৭ বছর চলে গেল। নানাদিক থেকে অসহায়ত্ব আজও পিছু ছাড়েনি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌর এলাকার ভূমিহীন অসহায় এক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফার। বয়সের বাড়ে নুব্জ হয়ে পড়া জীবন যেন কোনো রকম থেমে থেমে চলছে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী এ যোদ্ধাকে জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ে আজও মলম, চকলেট ও আচার নিয়ে প্রতিদিন নামতে হচ্ছে রাস্তায়। অর্থনৈতিক কষ্ট তার পিছু ছাড়ে না। তার নিজের ভিটাবাড়ি নেই। পরিবার নিয়ে পরের বাড়িতে কাটাচ্ছেন অসম্মানের জীবন। তিনি আক্ষেপ করে জানিয়েছেন, প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি, কিন্তু স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মাথা গোঁজার মতো এক টুকরা জমিন পেলাম না। এত বড় বাংলাদেশে আমার থাকার সামান্য জমি কি মিলবে না?

বিজয় দিবসে যখন বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠে পুরো দেশবাসী, তখন কেউ খোঁজ নেয় না জীবনযুদ্ধে পরাজিত মোস্তফার। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ পৌরসভাধীন অর্জুন্দী গ্রামের তাহাজ উদ্দিনের ছেলে এ মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা (৭২) ভূমিহীন ও উদ্বাস্তু। স্ত্রী ও এক কন্যাসন্তান নিয়ে পানাম এলাকায় প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের অধীনে একটি পুরাতন ভবনের পাশে একটি তেঁতুলগাছের নিচে পলিথিন দিয়ে নির্মিত ঘরে বসবাস করে তার পরিবার।

ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সেক্টর কমান্ডার মেজর হায়দার আলীর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। তার গেজেট নম্বর ৫৮৫। বর্তমান সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় একটি ভ্যানে করে মলম, চকলেট ও আচার বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন এ মুক্তিযোদ্ধা। মলম, চকলেট ও আচার বিক্রিকালে সারাক্ষণ মাইকে বাজান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধের গান। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে তিনি প্রতিদিন মলম, চকলেট ও আচার বিক্রি করে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা হিসেবে যে টাকা পান, তা দিয়ে তার পরিবারের জীবন-জীবিকা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা জানান, পলিথিন দিয়ে বানানো যে ঘরে বসবাস করেছিলেন তিনি সেটা টিকিয়ে রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টিন (অব.) তাজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার, সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সভাপতি কমান্ডার, ডেপুটি কমান্ডার ও সোনারগাঁ পৌর মেয়রের সুপারিশ নিয়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের বরাবর পলিথিন দিয়ে তৈরি ঘরটির বসতভিটার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু ২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর তারিখে জেলা প্রশাসন হতে এভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে গোলাম মোস্তফাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তার পক্ষে বিবেচনার কোনো প্রকার আইনগত সুযোগ নেই। ফলে তাকে পলিথিন দিয়ে নির্মিত ঘরটিও ছাড়তে হয়েছে। এরপর কয়েক দফা সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বিভিন্ন সময় তাকে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য জায়গা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কোনো কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কেউ। এখন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে খুব কষ্টের জীবনযাপন করছেন।

সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিএম রুহুল আমিন রিমন জানান, ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফাকে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের অধীনে একটি পুরাতন ভবনের পাশে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে থাকার জায়গা করে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় কিছু অসাধু প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে তাকে আবারও উচ্ছেদ হতে হয়েছে। তিনি যদি আমার সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করেন, তাহলে থাকার জায়গা ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close