হাসান ইমন

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

মেগা প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না

ঢাকা শহরটি অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠায় এখন কোনো পরিকল্পনাই যেন কাজে আসছে না। এ অপরিকল্পিত শহরটিকে ‘স্মার্ট ঢাকা’ হিসেবে গড়ে তুলতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ৭টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি হলো মেগা প্রকল্প। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নেও নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না। সংস্থাটি প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ে। মেয়াদ বাড়ার সঙ্গে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে ৫০০ কোটি টাকা।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, মেগা প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০১৬-১৯ সালের মধ্যেই এসব প্রকল্প শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারায় জুন ২০২০ পর্যন্ত সময় চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে ডিএসসিসি। একইসঙ্গে প্রকল্পে নতুন করে আরো ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াবে ১ হাজার ৭১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

জানা যায়, মেগা প্রকল্পের মধ্যে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ২৩টি বাস-বে নির্মাণ, গুলিস্তান এলিভেটেড ওয়ার্কওয়ে নির্মাণ, ফুটপাত উন্নয়ন, রাস্তা মেরামতের পরিকল্পনা, রাস্তার মাঝে আইল্যান্ডে স্থাপিত পুলিশের বক্সগুলোকেও অপসারণ করে পরিকল্পিতভাবে উন্নতমানের স্বচ্ছ কাচ দিয়ে ঘেরা পুলিশবক্স নির্মাণ, ১৯টি পার্ক ও ১২ খেলার মাঠ সংস্কার-উন্নয়ন, রাস্তার পাশে ও মাঝের আইল্যান্ডে ফুলগাছ লাগানো, ট্রাফিক সিগন্যালগুলোও ট্রাফিক পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ী আধুনিকায়নের কার্যক্রম গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।

মেগা প্রকল্পের আওতায় ডিএসসিসি এলাকার ১৩১ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার রাস্তা, ২৫ দশমিক ৪০ কিলোমিটার ফুটপাত, ১৩০ দশমিক ১৬ কিলোমিটার ড্রেন, শান্তিনগর এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে ৯ দশমিক ২৭২ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন, ১১ দশমিক ৪০২ কিলোমিটার ফুটপাত, ১১ দশমিক ৭২ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ৩৮ হাজার ৯৮টি এলইডি বাতি স্থাপন, নতুন ৭টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ও ১৬টি সংস্কার, বাস স্টপেজ, বাম লেন, গার্ড রেল, গ্রিল ফেন্সিং, সড়ক দ্বীপ বিউটিফিকেশন, ১৯টি পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠ উন্নয়ন, ৪৭টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ১৭টির সংস্কার ও ১৬টি নতুন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) স্থাপন, দুটি আধুনিক জবাই খানা, তিনটি কবরস্থান উন্নয়ন, একটি শিশুপার্ক নির্মাণ, দুটি হাসপাতাল সংস্কার ও ১১টি ক্লিনার কলোনি নির্মাণ করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত ১৫টি বাস স্টপেজ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৯ পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠের কাজ চলমান রয়েছে। ৪৭টি পাবলিক টয়লেটের মধ্যে ২৫টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে, ১৬টি এসটিএস নির্মাণের মধ্যে বড় দুইটি ও ছোট ৫টির কাজ শেষ হয়েছে। দুটি জবাই খানার মধ্যে হাজারীবাগ জবাই খানার কাজ শেষের দিকে থাকলেও কাপ্তানবাজারে চলছে ধীরগতিতে। ১১টি ক্লিনার কলোনির মধ্যে দুটির কাজ শেষ হয়েছে তিনটি চলমান রয়েছে এবং বাকি ছয়টি নিয়ে চলছে জটিলতা। ৭টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের কাজ প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা ও কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ডিএসসিসি এগিয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। নানা ধরনের পরিবর্তন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। যত দিন যাবে এ পরিবর্তন তত দৃশ্যমান হবে। ঢাকাকে একটি আধুনিক, পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আসাদুজ্জামান আরো বলেন, মেগা প্রজেক্টের কাজগুলো ২০১৯ সালের জুনে শেষ হওয়ার টার্গেট নেওয়া হলেও তা শেষ হবে না। তবে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়, নতুন মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

এ বিষয়ে সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও নকশা বিভাগ) তানভীর আহমেদ বলেন, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নানা জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না। এজন্য আমরা এক বছর সময় চেয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এছাড়া পার্ক ও খেলার মাঠগুলোতে নতুন নতুন নাগরিক সুযোগ-সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা আগের প্রকল্পে ছিল না। এজন্য প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close