আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

প্রথম কলাম

সারা বিশ্বে কমছে মৌমাছি, বাড়ছে তেলাপোকা

পৃথিবীজুড়ে আশঙ্কাজনক হারে কমছে পোকামাকড়ের বিভিন্ন প্রজাতি। আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে ৪০ শতাংশ প্রজাতি। মৌমাছি, পিঁপড়া ও গুবরে পোকার প্রজাতিগুলো সবচেয়ে বেশি হুমকির মধ্যে আছে। তবে মাছি ও তেলাপোকার সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে! সংবাদমাধ্যম বিবিসি গত সোমবার একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেয়। ‘বায়োলজিক্যাল কনজারভেশন’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়। প্রাণ ও পরিবেশ নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয় ওই জার্নালে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন পাখি, স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপের তুলনায় আট গুণ বেশি পরিমাণে কমে যাচ্ছে পোকামাকড়ের সংখ্যা। তবে মাছি ও তেলাপোকার সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে বলে ওই গবেষণায় বলা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষি খাতে কীটনাশকের ব্যবহারকে পোকামাকড় কমে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন গবেষকরা।

অন্যান্য পোকামাকড়ের তুলনায় মৌমাছি অনেক দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। সাধারণত অর্থনৈতিকভাবে উন্নত এলাকাগুলোতে এই বিলুপ্তির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।

গবেষণা প্রবন্ধটির প্রধান লেখক সিডনি ইউনিভার্সিটির ড. ফ্রান্সিসকো সানচেজ-বায়ো বলেন, ‘প্রথমত নগরায়ণ, কৃষিকাজ ও বনভূমি উজাড় এই তিনটি কারণে পোকামাকড় কমে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বব্যাপী কৃষিকাজে সার দেওয়া, কীটনাশকের ব্যবহার, রাসায়নিক দূষণের কারণে কমছে পোকামাকড়ের সংখ্যা। তৃতীয়ত, আক্রমণকারী প্রাণী, রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের কারণেও কমছে। চতুর্থত, আমাদের জলবায়ুর পরিবর্তন। সাধারণত ক্রান্তিয় অঞ্চলগুলোতে এর প্রভাব বেশি দেখা যায়।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মানিতে উড়তে সক্ষম পোকামাকড়গুলো খুব দ্রুতই কমে যাচ্ছে।

‘বাগলাইফ’ নামে একটি প্রচারাভিযানের কর্মকর্তা ম্যাট শার্ডলো বলেন, ‘শুধু মৌমাছিই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে না। গুবরে পোকা ও ফড়িংয়ের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে কমছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটি খুবই দৃশ্যমান যে, বিশ্বের বাস্তুসংস্থানগুলো ধীরে ধীরে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পোকামাকড়ের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কখনোই ভালো লক্ষণ নয়। এই ভয়ংকর বিষয়টি এড়াতে হলে, আমাদের বিশ্বব্যাপী চেষ্টা চালাতে হবে।’

গবেষকরা বলছেন, পাখি, সরীসৃপ ও মাছের প্রধান খাদ্যের উৎস হলো কীটপতঙ্গ। পোকামাকড় বিলুপ্ত হওয়ার জন্য তাদের ওপর নির্ভরশীল প্রাণীগুলোকেও আমরা বিলুপ্তের তালিকায় রাখতে পারি।

অন্যদিকে আরেকটি বিষয় উঠে এসেছে গবেষণাগুলোতে। একদিকে যেমন পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পোকামাকড়গুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কিছু পোকামাকড় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে।

মানুষের বসবাসযোগ্য এলাকায় মাছি ও তেলাপোকা খুব দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে এবং নিজেদের আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি অভিযোজন ক্ষমতার জন্য কিছু পোকামাকড়ের সংখ্যা বাড়বে। সেইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে কমবে অনেক পোকামাকড়। আর অভিযোজনে মানিয়ে নেওয়া পোকামাকড়ের বৃদ্ধির পাশাপাশি ওই পোকামাকড়গুলোর শত্রু হিসেবে পরিচিত অন্য পোকামাকড়ও কমে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close