জাবি প্রতিনিধি

  ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯

জাবি ছাত্রলীগ হল কমিটি কবে হবে কেউ জানে না

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদি কমিটি এরই মধ্যে পার করেছে প্রায় ২৫ মাস। তবে এখনো হয়নি হল কমিটি। কবে হবে তা কেউ জানে না।

এই সময়ে হল কমিটি দেওয়ার জন্য পদপ্রত্যাশীদের কাছ বেশ কয়েকবার জীবনবৃত্তান্ত নিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এমনকি কমিটি ঘোষণার সম্ভাব্য সময় বলে দিয়ে পদপ্রত্যাশীদের বারবার আশ্বাস দিয়ে রাখছেন। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির এই দুই নেতা এখনো হল কমিটি দেননি। তারা ছাড়া কেউই জানেন না কবে হবে হল কমিটি কিংবা আদৌ হবে কিনা।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দুই সদস্যবিশিষ্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষিত হয়। কমিটিতে আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. জুয়েল রানাকে সভাপতি এবং শহীদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের ২৮ এপ্রিল শাখা ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হলেও সেই কমিটি এখন ২ বছর অতিবাহিত করছে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে হল কমিটি না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে। বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকেও স্ট্যাটাস দিয়ে কমিটি চেয়েছেন ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এছাড়া হল কমিটিকে কেন্দ্র করে বিগত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে শাখা ছাত্রলীগ। তৈরি হয়েছে প্রকাশ্য গ্রুপিং। ভেঙে পড়েছে চেইন অব কমান্ড। এমন সব কথা বলছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই।

শাখা ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতি বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে নেই চেইন অব কমান্ড, নেই শৃঙ্খলা। হল কমিটি না হওয়ায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সেক্রেটারি ছাড়া কেউই খুশি না। তারা শুধুই আশ্বাস দিয়েই দুই বছর পার করলেন। এই কমিটি মেয়াদ শেষ হয়েছে এখন নতুন কমিটি দেওয়া হোক।’

গত ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শাখা ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্র সমাবেশ ও নির্বাচনী কর্মীসভায় জাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হল কমিটি না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা অতি দ্রুত হল কমিটি দিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তখন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, ‘আমি আগেই তাদের (শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক) বলেছি হল কমিটি দিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এত দিনেও কেন হল কমিটি হচ্ছে না তা আমার বোধগম্য নয়।’ পদপ্রত্যাশীরা বলছেন, প্রায় প্রতিটি হলেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয়। এজন্য শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের পদ না দিয়ে হল কমিটির শীর্ষ পদের জন্য বাছাই করে রাখা হয়। কিন্তু দীর্ঘকাল হয়ে গেলেও এখনো কমিটি দেওয়া হচ্ছে না। এরই মধ্যে তাদের অনেকেরই শিক্ষা জীবন শেষ হয়েছে। আর দীর্ঘকাল ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকেও পদ-পদবি না পেয়ে হতাশ তারা। এ নিয়ে বেশ কয়েকজন এই প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি হলের সভাপতি পদপ্রার্থী এক কর্মী জানান, ‘ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) উদাসীনতার কারণে হয়তো কমিটি দেওয়া হচ্ছে না। হল কমিটির শীর্ষ পদপ্রত্যাশী যারা, তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ভালো পদ পেতেন। কিন্তু হল কমিটির শীর্ষ পদের জন্য তাদের রাখা হয়েছে। এখন কমিটি দেওয়া হচ্ছে না। আর সভাপতি-সম্পাদকের কাছের লোক হওয়ায় আমরা কমিটির কথা তাদের বলতেও পারি না।’ তিনি আরো বলেন, ‘হলের রাজনীতি হলো আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্র। হলের কমিটি থাকলে হলের মাদক থেকে শুরু করে ডাইনিংয়ে খাবারের দূরাবস্থা, চুরি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। কিন্তু কমিটি না থাকায় বিপদের আশংকায় কেউ দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে চায় না। এরই মধ্যে প্রায় দুই বছর পার হয়ে গেছে। কমিটি দেওয়ার সময় পেরিয়ে অনেক বেশি সময় হয়ে গেছে। এখনো যদি কমিটি দিতে না পারে তবে প্রাপ্তি বলতে কিছু থাকবে না।’

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা কমিটি ঝুলে থাকার পেছনে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার হস্তক্ষেপকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, সেই নেতার পছন্দের লোকদের হল কমিটিতে শীর্ষ পদ দেওয়া নিয়ে বর্তমান কমিটির এক শীর্ষ নেতার মনোমালিন্য রয়েছে। আর এ কারণেই কমিটি দিতে দেরি হচ্ছে।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘আমরা পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে সিভি নিয়েছি। সবার খোঁজ-খবর নিয়েছি। আদর্শের বাইরে কেউ যাতে আসতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি। আর ত্যাগী ও পরিশ্রমীরাই যেন পদ পায়। এজন্য আমরা ভেবেচিন্তে কমিটি করছি।’

সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা অতিসত্তর কমিটি দিয়ে দেব। আর কমিটি গঠনে তো যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন আছে। কারা রাজনীতিতে থাকবে, থাকবে না। আসন্ন হল কমিটিতে যারা আসছে তারা গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন হবে সেভাবেই আমরা কাজ করছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close