কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯

বিশ্বের সব রোহিঙ্গার চোখ বাংলাদেশে

মিয়ানমারের পর এখন ভারত ও সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। এরই মধ্যে ভারত থেকে প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। দালালের সহায়তায় রাতের আঁধারে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গার অভিযোগ ভারতের আশ্রয় শিবিরে তাদের ধরপাকড় করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের পাসপোর্ট থাকার অভিযোগ তুলে সৌদি আরবও তাদের আটক করে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। এখন উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৪১৬ জন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। বর্তমানে নানা অজুহাতে ভারত ও সৌদি আরব থেকেও আসছে রোহিঙ্গারা। সম্প্রতি ১৩ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি আরব। এসব রোহিঙ্গার প্রায় সবাই ৭ বছর সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছিল। আরো ১৫০ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এসব রোহিঙ্গার কাছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট পাওয়ার দাবি করছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবস্থান করা আত্মীয়স্বজনের কাছে ফেরত আসার চেষ্টা করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে ৫-৬ বছর আগে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে পাড়ি দেওয়া রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ভারতের জম্মু-কাশ্মীর, আসাম, নয়াদিল্লি ও হায়দরাবাদসহ বিভিন্ন রাজ্যের আশ্রয় শিবিরে থাকা এসব রোহিঙ্গারা রাতের আঁধারে দালালের সহায়তায় সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে।

কক্সবাজারের কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ভারত সরকার রোহিঙ্গাদের জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাচ্ছে এমন খবরে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ায় স্বজনদের খুঁঁজতে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। ভারতে থাকা অন্য রোহিঙ্গারাও এখন বাংলাদেশমুখী বলে জানিয়েছেন তারা।

গত সপ্তাহে ভারত থেকে এসে কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রাবেয়া খাতুন জানান, প্রতিজন ১০ হাজার টাকা করে দালালের হাতে দিয়ে মণিপুর সীমান্ত দিয়ে তারা এক সঙ্গে সাতজন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। রাবেয়ার আগে বাংলাদেশে এসেছেন তার স্বামী ও সন্তানরা। পরে সবাই এক জায়গায় মিলিত হয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে আসেন।

ভারতের হায়দরাবাদ আশ্রয় শিবিরে চার বছর ধরে ছিলেন আরেক রোহিঙ্গা যুবক কবির আহমদ (২৫)। তিনি জানান, হঠাৎ করে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য ভারত সরকার তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা শুরু করেছে। সম্প্রতি কয়েকজন রোহিঙ্গাকে জোর করে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনও করেছে। এখন মিয়ানমারে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ না হলেও তাদের সেখানে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় সেখানে যাওয়া আমাদের জন্য বিপজ্জনক।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ভারত থেকে আসা রোহিঙ্গাদের আপাতত উখিয়ার ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে সবাইকে এক জায়গায় করে পরবর্তীতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে।’

বাংলাদেশের কক্সবাজার শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘চলতি মাসে প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গা ভারত থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের উখিয়ার ট্রানজিট পয়েন্টে আশ্রয় শিবিরে আন্তর্জাতিক সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হবে’।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন থেকে মিয়ানামারের রাখাইনে সহিংস ঘটনার পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেয় প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। গত কয়েক মাসে ভারত থেকে দুই দফায় বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠানো হয়। এছাড়া আটক করা হয় বহু রোহিঙ্গাকে। এ থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। সম্প্রতি সৌদি আরবে থাকা রোহিঙ্গাদেরও বাংলাদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close