নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জানুয়ারি, ২০১৯

‘সিটিং সার্ভিস’ বিশৃঙ্খলা নিরসনে সুপারিশ ঝুলছে

ঢাকায় ‘সিটিং সার্ভিস’ ঘিরে গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলা নিরসনে সরকার গঠিত কমিটি এক বছরেরও বেশি সময় আগে সুপারিশ জমা দিলেও তা বাস্তবায়ন হবে কিনা, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গঠিত ওই কমিটি বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ২৬টি সুপারিশ করে, তার মধ্যে সাতটি ছিল সিটিং সার্ভিস নিয়ে। কিন্তু এক বছরেও এসব সুপারিশ আলোর মুখ না দেখায় খোদ কমিটির সদস্যরাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় এ সময়ে সিটিং সার্ভিসের দৌরাত্ম্য কমা তো দূরের কথা উল্টো অধিকাংশ রুটেই সব পরিবহনই সিটিং সার্ভিস হয়ে গেছে।

কমিটির সদস্যরা বলছেন, কোন কোম্পানির কতগুলো বাস সিটিং, কতগুলো নন-সিটিং চলবে, তা ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব ঢাকা মহানগর আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (মেট্রো আরটিসি) হাতে দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন তারা। এখন সেই মেট্রো আরটিসিতেই আটকে আছে সিটিং সার্ভিসের ভবিষ্যৎ। ঢাকায় বাস চলাচলের অনুমতি দেয় এ মেট্রো আরটিসি। এর সভাপতি হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার। তার সঙ্গে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ, সিটি করপোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির প্রতিনিধিরা আছেন এ কমিটিতে।

এখানেই সুপারিশগুলো আটকে আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, যিনি নিজেও মেট্রো আরটিসির সদস্য।

নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সিটিং সার্ভিস রাখার সুপারিশ : সুপারিশগুলো এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিআরটিএ গঠিত ওই কমিটির সদস্য অজয় দাশগুপ্ত বলেন, কমিটি তো সরকার করেছে, আমরা করিনি। পুরো ব্যাপারটায় তাদের উৎসাহ ছিল। তারা আমাদের নিয়োগ করেছে এবং বারবার বলেছেÑ আপনাদের সুপারিশটা সিরিয়াসলি নেওয়া হবে। এজন্য আমরা শুরু থেকেই এটা নিয়ে কাজ করেছি। আমরা প্রথম মিটিং থেকেই তাদের বলেছি যে, আপনারা আমাদের নিচ্ছেন, আমাদের কথা রাখবেন কিনা? তখন তারা বলেছিলেন, তারা বিষয়টি নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করবেন। তাদের আগ্রহেই আমরা সেখানে গেলাম, একটা সুপারিশ করলাম। প্রায় এক বছর ধরে আর কোনো অগ্রগতি নেই। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা আমাদের কাজ করেছি, এখন সরকার তাদের কাজ করুক। এটা বাস্তবায়ন করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।

যানজটের শহর ঢাকায় সিটিং সার্ভিস নিয়ে বিশৃঙ্খলায় সমালোচনার মুখে এ বিষয়ে সুপারিশ করতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিআরটিএ ২০১৭ সালের ৩ মে আট সদস্যের একটি কমিটি করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলে।

কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বিআরটিএ’র পরিচালক (রোড সেফটি) মাহবুবে রব্বানীকে। অজয় দাশগুপ্ত ছাড়াও ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক, উত্তর), সে সময় একাত্তর টেলিভিশনের পরিচালক (সংবাদ) ইশতিয়াক রেজা, দৈনিক ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি শ্যামল সরকার, বিআরটিএ’র ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক মো. মাসুদ আলম, বাসমালিকদের প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান এবং শ্রমিক প্রতিনিধি শাহজাহান বাবুলকে সদস্য হিসেবে রাখা হয় কমিটিতে।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কমিটির সুপারিশ তারা পেয়েছেন। এ বিষয়ে বিআরটিএকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

তবে বিআরটিএ’র পরিচালক মাহবুবে রব্বানী বলছেন, তাদের সুপারিশগুলো এখন কোন অবস্থায় আছে, তা তিনি জানেন না। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বিআরটিএ’র একটা বৈঠক হয়। সেখানে বাস মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পক্ষের লোকজন ছিলেন। এ বৈঠকের পর সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করে ১৭ এপ্রিল তা মেট্রো আরটিসিতে পাঠানো হয়। কমিটির সুপারিশগুলোকে আমরা সংক্ষিপ্ত করেছি। এটা যারা বাস্তবায়ন করবে তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন করবে আরটিসি, কারণ রুট পারমিট দেন তারা। আরটিসি মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে মিটিং করে তা বাস্তবায়ন করবে। এখন এর কী অবস্থা তা বলতে পারব না। আমাদের কাজ ছিল সুপারিশগুলো পাঠিয়ে দেওয়া, আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি, সেটা দেখা এখন আমাদের দায়িত্ব না।

ওই সুপারিশের এখন কি অবস্থা জানতে চাইলে পরিবহন মালিক সমিতির নেতা এনায়েত উল্লাহ বলেন, গত বছরের ১৮ অক্টোবর মেট্রো আরটিসির সবশেষ বৈঠকে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সিটিং সার্ভিসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি স্বীকার করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম। তিনি বলেন, আমরা এ সিদ্ধান্তটা পরে নেব বলেই মনস্থির করেছি। সবশেষ যে মিটিং করেছি সেখানেও ওটা আলোচনায় ছিল। কিন্তু আমরা বলেছি, এটা নিয়ে আরো আলোচনা করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close