শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

  ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯

শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর আত্মহনন

পরিবার ও প্রশাসন পরস্পরকে দুষছে

তাইফুর রহমান প্রতীক। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগে ভর্তি হন ২০১২ সালে। স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার। সে লক্ষ্যে অনার্সের ফল হিসেবে অর্জন করেন ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান। কিন্তু মাস্টার্সে ফলের অবনতি হওয়ায় সে স্বপ্ন ফিকে যায় প্রতীকের। এক পর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সে। তার আত্মহত্যা নিয়ে পরিবার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরস্পরকে দুষছে।

পরিবারের দাবি, মাস্টার্সে বিভাগের শিক্ষকরা কম নম্বর দিয়েছেন, অনার্সে ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান অর্জন করেও অনেক ধরনা দিয়েও পাননি সুপারভাইজার। সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। এসব কারণই তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছে। তবে পরিবারের এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে প্রতীকের আত্মহত্যার জন্য তার পরিবার দায়ী বলে মন্তব্য করেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যা হলে আমাদের দায়দায়িত্ব আছে আমরা দেখব। তবে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগ নিতে হবে পরিবারের পক্ষ থেকে। পরিবার থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।’

প্রতীক দুই বছর ধরে মেন্টাল ডিসঅর্ডারে ভুগতেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সে দুজন সাইকোলজির ডাক্তার দেখিয়েছে এবং প্রতি রাতে ঘুমের ট্যাবলেট খেত। শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান, শিক্ষকরা চায় না একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করুক। আমাদের কোনো সমস্যা থাকলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেওয়া যায় কিন্তু মিডিয়া এবং ফেসবুকে ডালাওভাবে অভিযুক্ত করে পোস্ট দিচ্ছে এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবর্মূতি নষ্ট হচ্ছে। এতে আমরা নিন্দা করি ও ঘৃণা জানাই।’

বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, অনার্সে প্রতীকের রেজাল্ট ছিল সিজিপিএ ৪.০০ স্কোরের মধ্যে ৩.৮২। যা ছিল বিভাগে ১ম স্থান। এছাড়া মাস্টার্সে ১ম সেমিস্টারে রেজাল্ট ছিল ৩.৫৮ ও ২য় সেমিস্টারে ছিল ৩.০৮ এবং সম্মিলিতভাবে ৩.৩৩। যা বিভাগের মধ্যে ৭ম স্থান।

গত সোমবার নগরীর কাজলশাহ এলাকার মেস থেকে তার লাশ উদ্ধারের পর তার মৃত্যু নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। প্রতীককে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে বিচার চেয়েছেন তার বোন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষক শান্তা তাওহিদা। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিচার চেয়েছেন।

তিনি লিখেন, ‘তার অনার্সের সুপারভাইজার ছিলেন তখনকার বিভাগ প্রধান অধ্যাপক আজাদ। আমার ভাইয়ের জীবনে মাস্টার্স শুরু হতে গিয়েই নেমে আসে কালো আঁধার। বিভাগে লেকচারার পোস্টে আবেদন করার খেসারত দিতে হয় নিজের জীবন দিয়ে। তাইফুর রহমান লেকচারার পোস্টে আবেদন করলে তাকে তার নিজের সুপারভাইজার অধ্যাপক আজাদ আবেদন করতে না করেন। বিভাগের শিক্ষকরা অধ্যাপক আজাদের নেতৃত্বে আমার ভাইকে সুপারভাইজর না দেওয়া রেফারেন্স না দেওয়ার বিভাগের একাডেমিক সিদ্ধান্ত নেন।

তবে সুপারভাইজার না দেয়ার বিষয়ে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা কিছু ক্রাইটেরিয়া ফলো করে থাকি। ওই সেশনে একজন শিক্ষক একজন শিক্ষার্থী নিতে পারেন। যারা নিয়েছেন তাদের পর সে আর সুপারভাইজার খুঁজে পাননি। তারপর বিভাগে জানোনো হয়েছে কাউকে সুপারভাইজার করানোর জন্য বিভাগ সর্বসম্মতিক্রমে হয়তো চিন্তা করেছে কিন্তু কোনো শিক্ষক রাজি হয়নি। অনার্সে ১ম শ্রেণিতে ১ম স্থান অর্জনকারী শিক্ষার্থী কেন সুপারভাইজার পাননিÑ এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close