বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি

  ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯

অট্টালিকার ভগ্নাবশেষে ১৩ জমিদারের স্মৃতি

পাবনার বেড়ার হাটুরিয়া গ্রামের এখনো পুরনো লোকের মুখে মুখে ফেরে ১৩ জমিদারের গল্প। সে সময় তারা এতটাই প্রতাবশালী যে, তাদের দাপটে যেন বাঘে মইষে একঘাটে জল খায়। তাদের প্রজা পালন আর অত্যাচারের সবকিছুই এখন অতীত দিনের স্মৃতি, কেবল কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভাঙাচোরা পলেস্তরা খসা বিশাল অট্টালিকা, শান বাঁধানো পুকুর, সেই বাড়ির প্রবেশমুখে বাঘ সিংহের পাথরের মূর্তি। কিন্তু সেই ঐতিহ্য রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেই। বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া গ্রামে এই জমিদারির গল্প আজও তাদের পাইক পেয়াদার কথা, গানের আসরের কথা, পাশেই যমুনা নদীতে রাজাদের প্রমোদ ভ্রমণের কথা আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। এক সময় হাটুরিয়া গ্রামে ১৩ জন জমিদার বাস করত। তাই এই গ্রাম তেরো জমিদারদের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। সে ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে অনেকটাই অজানা। এলাকার প্রবীণরা জানায়, একসময় ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র ছিল এই হাটুরিয়া গ্রাম। বড় বড় বণিকরা সেখানে বাস করত। গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাণিজ্য কেন্দ্র নাকালিয়ার সঙ্গে কলকাতার নৌপথে সরাসরি যোগাযোগ ছিল। ১০০ বছর আগে এ গ্রামে দুই-একজন জমিদারের বাস ছিল। পরে এখানে জমিদারদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এক সময় এ সংখ্যা দাঁড়ায় তেরোতে। তারা হলেন প্রমথনাথ বাগচী, কাঞ্চীনাথ বাগচী, উপেন্দ্রনাথ বাগচী, ভবানীচরণ বাগচী, কালী সুন্দর রায়, ক্ষীরোদ চন্দ্র রায়, সুরেন চন্দ্র রায়, সুধাংশু মোহন রায়, শক্তিনাথ রায়, বঙ্কিম রায়, ক্ষুদিরাম পাল, যদুনাথ ভৌমিক ও যতীন্দ্রনাথ ভৌমিক।

এলাকার প্রবীণদের মতে, এসব জমিদার বসবাস করতেন আনুমানিক ১৯১৫ সালের দিকে। হাটুরিয়া গ্রামের জমিদারের কথা উঠলেই লোকমান পেয়াদার কথা ওঠে। জমিদার প্রমথনাথ বাগচীর পেয়াদা ছিলেন তিনি। তার বাবা-দাদাও জমিদারের পেয়াদা ছিলেন। তার মুখ থেকে শোনা কাহিনী অনুযায়ী, ১৩ জনের মধ্যে সবচেয়ে প্রজাবৎসল ছিলেন প্রমথনাথ বাগচী। আর প্রজা নিপীড়ক ছিলেন যদুনাথ ভৌমিক। এক গ্রামে এত জমিদারের বাস থাকলেও তাদের মধ্যে কখনো দ্বন্দ্ব সংঘাত হতো না। পূজা পার্বণে সবাই মিলে মিশে উৎসব করত। দেশ ভাগের আগে পরে একে একে সবাই স্থায়ীভাবে কলকাতায় চলে যান।

জমিদারদের প্রাচীরঘেরা অট্টালিকা মালিকানা বদলের পর কয়েকটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিছু যতেœর অভাবে ভেঙে গেছে। এখনো দু-তিনটির ভগ্নাবশেষ টিকে গেছে। জরাজীর্ণ এসব অট্টালিকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন কয়েকটি পরিবার।

এমনি একটি দ্বিতল অট্টালিকা অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ইজারা নিয়ে বসবাস করছেন দিলীপ গোস্বামীর পরিবার। তার ছেলে দীপক গোস্বামী জানান, অট্টালিকার নির্মাণকাল ১৯১১ সাল এবং নির্মাতা হিসেবে ক্ষীরোদ চন্দ্র রায়ের বাবা উমেশ চন্দ্র রায়ের নাম খোদাই করা ছিল। তিনি ছেলেবেলায় এখানে সুপরিসর জলসা ঘরসহ অনেক কক্ষ দেখেছেন। হলরুমে ক্ষীরোদ চন্দ্র রায়ের পূর্বপুরুষের ছবি ছিল। এখন সব কক্ষই জরাজীর্ণ। ছবিগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিলীন হতে বসা ঐতিহ্যগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close